ড্রাগস মামলায় আরও কড়া হচ্ছেন এনসিবি আধিকারিকরা। আজ মুম্বই থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ভারতী সিংকে। ভারতীর স্বামী হর্ষকে এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, হর্ষকেও গ্রেফতার করা হতে পারে। আজ রাতে এনসিবি দপ্তরেই রাখা হবে ভারতীকে। আগামীকাল আদালতে পেশ করা হবে। জানা গেছে, ভারতী সিংয়ের প্রোডাকশন অফিস এবং বাড়ি থেকে মোট ৮৬.৫ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে।
নিজের পারফরম্যান্স এবং জোকসের কারণেই যথেষ্ট পরিচিত ভারতী সিং। আজ পর্যন্ত কত মুখে যে তিনি হাসি ফুটিয়েছেন, তা বোধহয় হাতে গুনে বলা যাবে না। কিন্তু, এই জায়গায় পৌঁছনোর জন্য ভারতীকে কতটা লড়াই করতে হয়েছে, সেই গল্পটা হয়ত অনেকেই জানেন না। আসুন, আজ আপনাদের সেই গল্পটাই বলি :
১৯৮৪ সালের ৩ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন ভারতী। পঞ্জাবের অমৃতসরেই তিনি থাকতেন। বাবা ছিলেন নেপালি এবং মা পঞ্জাবি। ভারতী এমন একজন কমেডিয়ান যিনি নিজের জীবনে বহু চড়াই-উতরাইয়ের সাক্ষী থেকেছেন। ছোটোবেলা থেকেই মানসিক যন্ত্রণা এবং চোখের জল যেন তাঁর নিত্যদিনের সঙ্গী ছিল। কিন্তু, আজ দেখুন দেশের কয়েকশো কোটি দর্শকের মুখে তিনি হাসি ফুটিয়ে তুলছেন।
পঞ্জাবের এক গরীব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ভারতী। পরিবারের মধ্যে সবথেকে ছোটো তিনিই ছিলেন। একটি অনুষ্ঠানে ভারতী বলেছিলেন যে তিনি যখন মায়ের গর্ভে ছিলেন তখনই নাকি তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এমনকী তাঁর মা'ও তাঁকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যে বোধহয় অন্যকিছুই লেখা ছিল। মায়ের হাজার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ভারতী সুস্থ স্বাভাবিকভাবেই জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু, সেইসঙ্গে ভারতী এও জানিয়েছেন যে জন্মের পর তাঁর মায়ের থেকে যথেষ্ট ভালোবাসা এবং আদর তিনি পেয়েছেন।
পঞ্জাবের অমৃতসর শহরের অধিকাংশ লোকই একথা জানেন না যে মাত্র ২ বছর বয়সেই বাবাকে হারান ভারতী। তিন সন্তানকে নিয়ে সংসার চালানোর জন্য ভারতীর মা কারাখানায় কাজ করতেন।
ভারতী এও জানিয়েছেন যে আজ যখন তাঁর মা এই বিষয়ে কথা বলেন তখন তাঁর চোখ জলে ভিজে আসে। এমনকী, বাবা চলে যাওয়ার পর অনেকেই তাঁদের বাড়িতে ঋণের টাকাও চাইতে এসেছিলেন। কিন্তু, তাঁর মা পরিশোধ করতে না পারার কারণে গালি দিয়ে চলে যান। এইসব দেখেও তাঁর খুব দুঃখ হত।
আজকের এই কমেডি কুইন এমনও রাত কাটিয়েছেন, যখন তাঁকে খালি পেটেই শুয়ে পড়তে হয়েছে। পাশাপাশি সেলাই মেসিন দেখেও ভয় পান ভারতী। একটি ইন্টারভিউতে তিনি জানিয়েছেন, "আমার মা কারখানায় যতটা পারতেন কাজ করতেন। আর বাকি কাজটুকু বাড়ি এসে করতেন। ঘরের মধ্যে দিনরাত মেসিনের শব্দ শুনে শুনেই আমার শৈশব কেটেছে। আজও যখন রাস্তায় এমন শব্দ শুনি, আজও আমার কেমন একটা অস্বস্তি হয়।"
ভারতী বললেন, সংসারে টাকাপয়সার টানাটানি থাকার কারণেই তিনি অভিনয় জগতে পা রাখেন। তখন হাতে একেবারেই পয়সা ছিল না। সেকারণেই অমৃতসর ছেড়ে মুম্বই পাড়ি দেন তিনি। তখন অনেক আত্মীয়ই সন্দেহ করেছিলেন। কিন্তু, তারপর যখন স্টেজে সবাই ভারতীকে কমেডি করতে দেখেন, তখন সব আশঙ্কা দূর হয়ে যায়। তাঁকে নিয়ে মশকরা করতেও ছাড়েননি। আজ তাঁরাই নাকি নিজেদের ছেলেমেয়েদের জন্য ভারতীর কাছে গাইডেন্স চাইতে আসে।
ভারতীর জীবনে গ্রেট ইন্ডিয়ান লাফটার চ্যালেঞ্জ একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসাবে আসে। এই শো থেকেই কমেডিয়ান হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন ভারতী। এরপর তাঁর জীবনে একের পর এক নতুন রাস্তা খুলতে থাকে। এরপর কমেডি সার্কাসেও তাঁকে দেখতে পাওয়া যায়। আজকাল তো উনি টেলিভিশনের জনপ্রিয় অনুষ্ঠানগুলি সঞ্চালনা করেন।
কেরিয়ারের পাশাপাশি শারীরিক গঠণ নিয়েও ভারতীকে প্রচুর গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছে। একটি ইন্টারভিউতে তিনি জানিয়েছেন, ছোটোবেলা থেকেই তাঁর শারীরিক ওজন বেশি থাকার কারণে অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে। বিভিন্ন অপ্রীতিকর নামে তাঁকে ডাকা হত। এমনকী, তাঁর পরিবারের লোকজনও ওজন কমানোর পরামর্শ দিতেন। কিন্তু, আজ এই অতিরিক্ত ওজনই ভারতীর পরিচিতি হয়ে গেছে।