২ মে মহারাজা সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন। বাঙালির রক্তের সঙ্গে মিশে রয়েছে এই নামটি। সত্যজিতের সৃষ্ট চরিত্র— ফেলুদা, লালমোহনবাবু, প্রফেসর শঙ্কু, হীরকরাজা— আমাদের জীবনের অঙ্গ। তাঁর লেখনী-পরিচালনা আজও অনুপ্রাণিত করে বাংলার সংস্কৃতিতে। বিশ্ববরেণ্য এই ব্যক্তির হাত ধরেই অমর সব সৃষ্টি তৈরি হয়েছিল। মূল ধারার স্রোতের বিপরীতে হাঁটার সাহস দেখিয়েছিলেন তিনি। সাফল্যও পেয়েছিলেন। তিনি আক্ষরিক অর্থেই আমাদের সবার কাছে 'মানিক।'সেই অস্কারজয়ী পরিচালকের ১০২তম জন্মদিনে পুরনো স্মৃতিচারণায় ভাসলেন টলিউডের অন্যতম অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
প্রসেনজিৎ একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। সেই ভিডিওতে সত্যজিতের নানান মুহূর্ত ধরা যেমন পড়েছে তেমনি অভিনেতা শুনিয়েছেন তাঁর জীবনের এক অজানা গল্প। সেই গল্প তিনি ভাগ করে নিয়েছেন সকলের সঙ্গে। ভিডিওতে সত্যজিতের ছবির সঙ্গে সেই গল্প দেখা যাচ্ছে আর নেপথ্যে শোনা যাচ্ছে প্রসেনজিৎ-এর কন্ঠ। বুম্বাদাকে বলতে শোনা গিয়েছে, 'এই মহান মানুষটিকে নিয়ে কথা বলার যোগ্যতা আমার নেই। আমার শ্রদ্ধা আমার প্রণাম। একটা ছোট্ট ঘটনা আমি বলতে চাই, সেটা ভীষণ ব্যক্তিগত। যে বাড়িটায় ঢুকতে প্রচুর মানুষ ভয় পায়, ঠিক সেভাবেই ভয় পেয়ে আমিও গিয়েছিলাম সেখানে আমার বোনের বিয়ের একটা কার্ড দিতে। তখন আমার ১৬ কি ১৭ বছর বয়স। আমি বেল মারলাম। দরজাটা খুললেন মানিক জ্যেঠু, মানে অবশ্যই আমাদের শ্রদ্ধেয় সত্যজিৎবাবু।'
আরও পড়ুন: সত্যজিতের ফেলুদা হতে পারতেন বিগ বি, কেন প্রস্তাব ফেরান অমিতাভ?
প্রসেনজিৎ ভিডিওতে আরও বলেন, আমি ভেবেছিলাম, কার্ডটা মানিক জ্যেঠু দরজা থেকেই নিয়ে নেবেন। আমার বোনের বিয়ে, আমি নেমতন্ন করলাম, তারপরেই আমি বেরিয়ে আসব। উনি আমায় ভিতরে নিয়ে গেলেন, জল খাওয়ালেন, কথা বললেন। এবং সেই কথাগুলো সিনেমা সংক্রান্ত নয়। একেবারে ব্যক্তিগত কথা। মা কেমন আছেন বোন কেমন আছেন, কী হচ্ছে। পরে, আজ যখন সেই ঘটনার কথা মনে করি, তখন বুঝতে পারি কেন তিনি অন্যতম সেরা একজন পরিচালক। উনি বোধহয় আমার মনের অবস্থাটা বুঝতে চেয়েছিলেন। একটা ১৭ বছরের ছেলে একা এসে তাঁর বোনের বিয়ের নিমন্ত্রণ পত্র দিচ্ছে। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে, ওঁর ওই সময়টুকু আমার কাছে একটা বিশাল অনুপ্রেরণা ছিল। আসলে এঁরা এত বড় মাপের মানুষ, এত বড় মাপের পরিচালক এইজন্যেই। ওঁরা ভিতরটা বুঝতে পারেন একটা মানুষের। তখন বুঝিনি। তখন এটা আমার কাছে উত্তেজনা। পরবর্তীকালে বুঝেছিলাম, মানুষটা ওইটুকু সময় যে আমায় দিলেন, পনের, কুড়ি মিনিট। সেটা যেন আসলে আমাকে কোথাও একটা অদ্ভূত শক্তি জোগালেন। আপনাকে আমার প্রণাম, শ্রদ্ধা.... সবসময়।'
আরও পড়ুন: 'বম্বের প্যাকেজড ডিলে বিরক্ত হয়েছিলেন বাবা'
এই ভিডিও শেয়ার করে প্রসেনজিৎ ক্যাপশনে লেখেন, 'মানিক জেঠু আমাদের মনে চির-উজ্জ্বল। উজ্জ্বল তাঁর সৃষ্টি ও স্মৃতি। আগামীকাল, ২ মে সত্যজিৎ রায়ের জন্মবার্ষিকী। কিছু বিশেষ স্মৃতি আজ ভাগ করে নিলাম আপনাদের সঙ্গে'। বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে সত্যজিৎ রায়ের কীর্তি সর্বদাই জ্বলজ্বল করবে। তাঁর কোনও সিনেমায় অভিনয় করার সুযোগ পাননি প্রসেনজিৎ। তবে এই ব্যক্তিগত মুহূর্তটি তাঁর কাছে এক অমূল্য সময়। যা অভিনেতার মনে সবসময় উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।