নিউ ইয়ারের চেয়ে বাঙালিদের কাছে অনেক কাছের হল নববর্ষ। প্রত্যেক বাঙালি নিজেদের মতো করে এই দিনটার আনন্দে মেতে ওঠেন। সকাল থেকেই বাড়িতে বাড়িতে বাঙালি খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সাবেকী পোশাকে সেজে ওঠেন সবাই। এক কথায় বলতে গেলে পুরোদস্তুর বাঙালিয়ানা দেখা যায় এদিন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে এইদিনটি সুন্দরভাবে পালন করে থাকেন টলিউড ও টিভি ইন্ডাস্ট্রির তারকারাও। কেউ বা এইদিন শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত থাকেন আবার কারোর করোর অন্য কোনও প্ল্যানও থাকে। আসুন জেনে নেওয়া যাক আজকের দিনটি কে কীভাবে পালন করতে চলেছেন।
ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়
টলিউডের কনিষ্ঠ অভিনেতাদের মধ্যে ঋতব্রত মুখোপাধ্যায় অন্যতম। বেশ কয়েক বছর হল তিনি এই ইন্ডাস্টিতে নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছেন। ঋতব্রত জানিয়েছেন যে তাঁর আজকে নাটকের শো রয়েছে মধুসূদন মঞ্চে। তাই বাঙলা নববর্ষ সেভাবে পালন করতে পারছেন না। কাজের মধ্যেই কাটবে। অন্যান্য বছরও এইদিন নাটকের শো থাকে, ইভেন্ট থাকে। বাড়িতে থাকেন তিনি। পরিবারের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া এটুকুই করি। শপিং করতে একেবারেই ভালোবাসেন না নতুন প্রজন্মের তোপসে। তবে হাফ হাতা হাল্কা শার্ট পরতে পছন্দ করেন সেটাই বাড়ি থেকে কেনা হয়েছে তাঁর জন্য।ঋতব্রত জানিয়েছেন যে খাওয়া দাওয়ায় তো রোজই বাঙালি মেনু থাকে, তাই বিশাল আয়োজন এইদিনটার জন্য যে হয়ে থাকে এমনটা হয়। বাড়িতে কোনও আত্মীয় স্বজন আসলে তখন বিশেষ কিছু হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: ইফতারে পান্তাভাত আর ভর্তা খেয়ে পালন করলাম নববর্ষ: জয়া
স্বস্তিকা দত্ত
টলিউড ও টেলিভিশনের অতি পরিচিত মুখ স্বস্তিকা দত্ত। সামনেই অভিনেত্রীর ফাটাফাটি সিনেমা মুক্তি পাবে। তার প্রচার নিয়ে এখন ভারী ব্যস্ত। তার ওপর তোমার খোলা হাওয়া সিরিয়ালে ঝিলমিল চরিত্রে অভিনয় করে তিনি সকলের প্রিয় হয়ে উঠেছেন। কীভাবে কাটাবেন নববর্ষের দিনটি। এই বছর নববর্ষ শান্তিনিকেতনে, কাজের মধ্যেই কাটবে স্বস্তিকার। স্বস্তিকা বলেন, 'আমি একটু ওল্ড স্কুল। এখনও ওই কথাটায় বিশ্বাস করি যে বছরের প্রথমে যেটা করবে, সারা বছর সেটা করবে। এই বছর শান্তিনিকেতনে একটা অনুষ্ঠান আছে। সেখানে থাকব। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নববর্ষ বদলেছে, বাস্তবকে চিনতে শিখেছি বয়সের সঙ্গে সঙ্গে। তবে নববর্ষ মানে নতুনের ছোঁয়া.. এই অনুভূতিটা এখনও বদলায়নি। প্রত্যেক বাঙালি বাড়ির মতো আমার বাড়িতেও এটাই পালন করা হয়। ভাল লাগে বেশ।' তবে আক্ষেপও রয়েছে নববর্ষের আগে এখন ছোটবেলার মতো মা-আম্মার সঙ্গে ঘুরে গড়িয়াহাটে চৈত্র সেলে ঘুরে শপিং করতে পারেন না অভিনেত্রী। অভিনেত্রী এও বলেন, নববর্ষের দিনটা আমার সাধারণত শ্যুটিং থাকে বা অন্যান্য অনুষ্ঠান। তবে ছুটি পেলে এখনও নববর্ষের দিনটায় আমার প্রথম পছন্দ পরিবার সঙ্গেই সময় কাটানো। আর হ্যাঁ, এখনও একটা জিনিস আমি মেনে চলি। নববর্ষে আমার বাড়ির ঠাকুরকে নতুন পোশাক পরাই.. এটা বদলায় না কখনও।'
আরও পড়ুন: অ্যাকাডেমিতে শো চলাকালীন বিকল এসি, অসুস্থ বেশ কিছু দর্শক, ক্ষুব্ধ নাট্যব্যক্তিত্বরা
রণজয় বিষ্ণু
টলিউড তথা টেলিভিশনের মোস্ট হ্যান্ডসম হাঙ্ক রণজয় বিষ্ণু বাংলা নববর্ষ পালন করেন দারুণভাবে। এমনিতে রণজয় তাঁর শরীর সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। নিজের শরীর ধরে রাখতে তিনি থাকেন কড়া ডায়েটের মধ্যেই। তবে বাংলা নববর্ষে সেইসব কিছু আর মেনে চলেন না। একদিন নিজের ইচ্ছা মতোন খাওয়া-দাওয়া করেন অভিনেতা। রণজয়ের যদিও নববর্ষ নিয়ে বিশেষ কিছু পরিকল্পনা নেই। তবে খাওয়া-দাওয়া হয় একেবারে বাঙালি মতেই। অভিনেতা বলেন, নববর্ষের সকালে উঠে আমি লুচি আর সাদা আলুর তরকারি খাই। বাড়িতে যদি সেটা না পাই তবে লেকের পাশে মহারানির কচুরি আমি খাবই সঙ্গে অবশ্যই দুধ চা। তার পর দুপুরে মটন, মোচা, এঁচোড় চিংড়ি, লাউ চিংড়ি, কাঁচা আমের চাটনি, আর শেষপাতে রসগোল্লা— আমার নববর্ষের উদযাপন এ ভাবেই হয়। আর এই বছর কেমন সাজবেন রণজয়? অভিনেতা জানান যে তাঁর এমনিতে বাঙালি সাজ অর্থাৎ ধুতি পাঞ্জাবী ভীষণ প্রিয়। তবে এ বছর তিনি পাঞ্জাবী ও পায়জামা পরবেন বলেই জানিয়েছেন।
শ্রুতি দাস
টেলিভিশনের খুবই পরিচিত মুখ শ্রুতি দাস। এই মুহূর্তে তাঁকে দেখা যাচ্ছে রাঙা বউ সিরিয়ালে। খুবই ব্যস্ত এই সিরিয়াল নিয়ে। কিন্তু তা বলে কী নববর্ষ উদযাপন করবেন না তিনি। শ্রুতি এ বিষয়ে বলেন, ভীষণ চাপে আছি। শ্যুটিংয়েই কাটবে আমার নববর্ষ। রাতে ডিনারে যাব। অভিনেত্রী এও জানিয়েছেন যে দুপুরে মটন ও পোলাও খাবেন তিনি তবে রাতে কী খাচ্ছেন তা জানেন না। নববর্ষ মানেই শাড়ি-সাবেকী পোশাক, কী পরছেন এইদিন অভিনেত্রী? শ্রুতি জানিয়েছেন শাড়ি পরতে ভালোবাসলেও এইদিন শাড়ি পরছেন না। বরং মায়ের দেওয়া ট্র্যাডিশনাল পোশাকেই তিনি সেজে উঠবেন। গরমের জন্য এটাই তাঁর কমফোর্ট পোশাক।
অন্বেষা হাজরা
এই পথ যদি না শেষ হয় উর্মি তথা অন্বেষা হাজরার এই বছরের নববর্ষ কিন্তু একদমই ভালো যাবে না বলেই আক্ষেপ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন যে অভিনেত্রী কার সঙ্গে বেরোবেন, তাঁর সব বন্ধুরাই ব্যস্ত। যবে থেকে তিনি কলকাতায় এসেছেন তবে থেকে পয়লা বৈশাখ পালন করা হয় না। অন্বেষা জানিয়েছেন যে ছোটবেলায় পয়লা বৈশাখে খুব মজা হত। বাড়িতে গোপাল পুজো হয়, যেটা এখনও হয়। ওই পুজোয় সকলে আসত দারুণ মজা হত। আর গোপাল পুজো যেহেতু তাই বাড়িতে নিরামিষ রান্না হত। এইদিন কী পরবেন উর্মি? তিনি জানিয়েছেন নববর্ষ বলে পোশাক কেনা সেটা বহু বছর হয়নি। তবে শাড়ি পরতে ভালোবাসেন তিনি। অন্বেষা বলেছেন, আমার নববর্ষের প্ল্যান হল আমি বাড়িতেই থাকব। কারণ জিমও আজ ছুটি। তাই ভাল ডাল ঢ্যাঁড়শ ভাজা খেয়েই এইদিনটা কাটবে। প্রসঙ্গত, মৈনাক ভৌমিকের চিনি ২ সিনেমা দিয়েই বড়পর্দায় পা রাখছেন অন্বেষা।
শ্বেতা ভট্টাচার্য
টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্বেতা ভট্টাচার্যের বাংলা নববর্ষ কাটবে শ্যুটিংয়ের মধ্যেই। তবে কাজের ফাঁকেই বাড়ি থেকে আসবে টিফিন বক্স করে নববর্ষের স্পেশাল মেনু। 'সোহাগ জল' ধারাবাহিকের জুঁই জানিয়েছেন নতুন জামা, বাড়ির পুজোর সঙ্গে সঙ্গে নববর্ষের বিশেষ আকর্ষণ ছিল হালখাতা। শ্বেতা বলেন, 'ছোটবেলার নববর্ষ বলতেই মনে পড়ে, আমাদের দোকানের হালখাতা উদযাপনের কথা। আগের দিন থেকে ফুল দিয়ে দোকান সাজানো হত। তারপর সন্ধেবেলা নানারকম মিষ্টি, ঠাণ্ডা পানীয়, ক্যালেন্ডার দেওয়া হত সবাইকে... নতুন খাতা খোলা হত। নববর্ষ বলতে হালখাতা, মিষ্টি, ক্যালেন্ডার.. এই শব্দগুলোই মনে পড়ে কেবল। শুধু নিজেদের দোকানে নয়, বিভিন্ন দোকানে সেজে গুজে, নতুন জামা পরে হালখাতা করতে যেতাম। ভীষণ মজা হত। নববর্ষ বলতে এই সমস্ত স্মৃতিই মনে রয়ে গিয়েছে। বাড়িতে রান্না হত, পাঁঠার মাংস, ভাত, ডাল, ঝুরঝুরে আলু ভাজা। এইটা ছিল মাস্ট। এখন নববর্ষের দিনটা শ্যুটিং থাকে। তবে বাড়ি থেকে দুপুরের বড়ির খাবারটা টিফিন বক্সে করে নিয়ে আছি। তাই বাড়ির বাইরে থাকলেও নববর্ষের স্পেশাল খাওয়া দাওয়াটা মিস হয় না। তবে নববর্ষের দিনটা শ্যুটিংই থাকে আমার।'