গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটাই কথা, 'ফাইট ঐন্দ্রিলা, ফাইট'! একটা প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে, 'কেমন আছেন ঐন্দ্রিলা শর্মা'? সকলের প্রার্থনা করছেন, অভিনেত্রীর সুস্থ হওয়ার খবর পাওয়ার। উদ্বেগের মাঝে, সোমবার সামান্য স্বস্তি দিয়েছেন সব্যসাচী চৌধুরী। ঐন্দ্রিলার স্বাস্থ্যের সামান্য উন্নতি হয়েছে। এই খবর নিঃসন্দেহে সকলের জন্য অনেকটা আনন্দের।
এর মাঝে শোনা যাচ্ছে, নতুন সংক্রমণে আক্রান্ত ঐন্দ্রিলা। তবে আশা কথা এই যে, তিনি চিকিৎসায় অনেকটাই সাড়া দিচ্ছেন। যা, নিঃসন্দেহে ইতিবাচক।
অভিনেত্রীর এই লড়াইয়ে পরিবার- পরিজন ছাড়া আরও একজন রয়েছেন, যে বর্তমানে তাঁর পরিবারের একজনই হয়ে উঠেছেন। ঐন্দ্রিলার ছায়াসঙ্গী সব্যসাচী চৌধুরী।
এই লড়াই তো এক সপ্তাহের না, কয়েক বছরের। আর গোটা সময়টাতে ঐন্দ্রিলার পাশে ছিলেন সব্যসাচী। ফলস্বরূপ সোশ্যাল মিডিয়ায় বর্তমানে তিনি হয়ে উঠেছেন 'শ্রেষ্ঠ প্রেমিক' এবং দু'জনের প্রেম কাহিনী হয়ে উঠেছে রূপকথার মতো।
গত কয়েকদিন ধরে নেটপাড়ায় আলোচনায় ঐন্দ্রিলা- সব্যসাচী। একদিকে যেমন অভিনেত্রীর জন্য প্রার্থনা করছেন সকলে, সেরকম প্রশংসা- শুভেচ্ছায় ভরাচ্ছেন জুটিকে। অনেকেই লিখছেন ঐন্দ্রিলার প্রতি সব্যসাচীর প্রেম দেখে তারা আবার বিশ্বাস করা শুরু করেছেন ভালোবাসায়।
গত এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালেই বেশীরভাগ সময় কাটছে সব্যসাচীর। অভিনেতার সঙ্গে হাসপাতালে রোজ রাতে থাকছেন দুই বন্ধু সৌরভ দাস ও দিব্য প্রকাশ রায়।
প্রথমে অনেকটাই ভেঙে পড়েছিলেন সব্যসাচী। কোনও সংবাদমাধ্যমকেই উত্তর দেননি তিনি। পরে দু'বার পোস্টে ঐন্দ্রিলার শারীরিক স্থিতি জানান এবং সকলকে অনুরোধ করেন, নেতিবাচক বা ভুয়ো খবর না ছড়াতে।
আবেগঘন পোস্টে সব্যসাচী ফেসবুকে লেখেন, "শুধু জেনে রাখুন মেয়েটা লড়ে যাচ্ছে, সাথে লড়ছে একটা গোটা হাসপাতাল। নিজের হাতে করে নিয়ে এসেছিলাম, নিজের হাতে ওকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাবো। এর অন্যথা কিছু হবে না।"
তিনি আরও লেখেন, ""আমি দিনে তিনবার করে গল্প করি ঐন্দ্রিলার সাথে। গলা চিনতে পারে, হার্টরেট ১৩০-১৪০ পৌঁছে যায়, দরদর করে ঘাম হয়, হাত মুচড়িয়ে আমার হাত ধরার চেষ্টা করে। প্রথম প্রথম ভয় পেতাম, এখন বুঝি ওটাই ফিরিয়ে আনার এক্সটার্নাল স্টিমুলি। 'ভালো আছে' বলতে আমার ভয় লাগে, কিন্তু ঐন্দ্রিলা আছে। প্রচন্ডভাবে আছে। আমার সামনে শুয়ে থেকেও হয়তো কয়েক সহস্র মাইল দূরে আছে কিন্তু ঠিক ফিরে আসবে। ওর একা থাকতে বিরক্ত লাগে।"
'ঝুমুর' ধারাবাহিকের মাধ্যমে টেলিভিশনে পা রাখেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। এই ধারাবাহিকে তাঁর বিপরীতে ছিলেন সব্যসাচী। সেখান থেকেই তাঁদের বন্ধুত্ব ও পরে তা পরিণত হয় সম্পর্কে।
ক্লিক ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ওয়েব সিরিজ 'ভাগার'-এ দেখা যায় সব্যসাচী- ঐন্দ্রিলাকে। যদিও এই সিরিজে একে অপরের বিপরীতে অভিনয় করেন না তাঁরা।
প্রায় বছর সাতেক আগে ২০১৫ সালে শিরদাঁড়ার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা। প্রায় দেড় বছর কঠিন লড়াইয়ের পর সুস্থ হয়েছিলেন তিনি। আবার সেই দুঃস্বপ্নের দিনগুলি ফিরে এসেছিল তাঁর জীবনে গত বছর। হঠাৎ কাঁধে সাংঘাতিক ব্যথা হওয়ার পর একের পর এক টেস্ট করতে হয় তাঁকে। রাজধানীর হাসপাতালে তাঁর ডান দিকের ফুসফুসে টিউমার ধরা পড়ে। সেই সময়ও তাঁর সঙ্গে ছিলেন সব্যসাচী।
বারবার পড়ে গিয়েও, গা ঝেড়ে আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। বছরভর দীর্ঘ লড়াইয়ের পর, গত বছর এর শেষে জানা যায় দ্বিতীয়বার ক্যান্সারকে হারিয়েছেন তিনি। তাঁর জয়ের কথা শুনে অনুগামী থেকে শুরু করে ইন্ডাস্ট্রির বহু তারকা অনেকটা স্বস্তি পেয়েছিলেন। ধীরে ধীরে পুরনো ছন্দে শ্যুটিং ফ্লোরেও ফিরছিলেন। কিন্তু ফের ছন্দপতন!