কথায় বলে,'ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়'। আর এই পরিচিত বাগধারা যার জন্যে কার্যকর, তিনি হলেন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। আজ থেকে ১৭ বছর আগে তাঁর যেন পুনর্জন্ম হয়েছিল। এজন্যে আসল জন্মদিন ছাড়াও, ২৩ জানুয়ারি নিজের জন্মদিন হিসাবে পালন করেন অভিনেতা।
টলিউডের অন্যতম চেনা মুখ অনিন্দ্য। বড় পর্দা হোক কিংবা ছোট পর্দা, বিভিন্ন মাধ্যমে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করছেন তিনি। তবে একটা সময় ছিল, যখন তিনি ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছিলেন অন্ধকারের দিকে। নিজের মাদকাসক্তির কথা অকপটেই শিকার করেন অনিন্দ্য। এবছর ২৩ জানুয়ারি, তাঁর নেশামুক্তির ১৭ বছর পূর্ণ হতেই আবেগঘন পোস্ট শেয়ার করলেন অভিনেতা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় দুটি ছবি শেয়রা করে অনিন্দ্য লিখেছেন, "আমি কেন মদ খাই না বা ড্রাগস নিই না, তার একটা কারণ আছে এবং আমার সেটা স্বীকার করতে একটুও লজ্জা নেই। আমার এখনও মনে আজকের দিনে, ঠিক ১৭ বছর আগে, যখন আমি শেষবারের মতো হাবড়ার একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে গিয়েছিলাম। সম্ভবত আমার ২৯ তম প্রচেষ্টা ছিল সেট। আমি আমার বন্ধুদের, পরিবার এবং কাজের ছবি পোস্ট করি- কারণ আমি জীবিকার জন্য যা করি তা পছন্দ করি।"
তিনি আরও লেখেন, "এটা, মাদকাসক্তি থেকে আমার পুনরুদ্ধার... আমার শেষ হেরোইন ধরার ১৭ বছর হয়ে গেছে। দাগগুলি এতটাই নৃশংস যে আমি এখনও সেগুলি লুকানোর জন্য মেকআপ ব্যবহার করি...গল্পটা এতটাই মারাত্মক যে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের জন্য উপযুক্ত নয়। তবে সংক্ষিপ্ত করে বলতে গেলে, বহু বছরের খারাপ থাকার পরে, ১৭ বছর আগে এদিনেই আমি পাগলামি বন্ধ করে দিয়েছিলাম এবং আমি আজ বেঁচে আছি এবং এমন একটা জীবন আমি আবার পেয়েছি, যা কখনও সম্ভব হবে বলে ভাবিনি।" যারা মাদকাসক্তি থেকে বেরোতে চাইছেন বা লড়াই করছেন নিজের সঙ্গে, তাঁদের জন্যেও বিশেষ কিছু বার্তা দিয়েছেন অনিন্দ্য।
প্রসঙ্গত, বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে অনিন্দ্য তাঁর এই অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরার কঠিন জার্নি শেয়ার করেছেন। তাঁর নেশা- মাদকাসক্তির জন্য কীভাবে গোটা পরিবার সর্বস্বান্ত হতে হয়েছিল, সে কথাও শেয়ার করেছেন অভিনেতা। এমনকী নেশার জন্য মায়ের সোনার গয়না, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, কাঁসার জিনিস বিক্রি করা থেকে শুরু করে বাবার সঞ্চয় ধ্বংস করেছেন একটা সময় তিনি। আরও অনেক অপরাধ করেছেন তিনি সেসময়। এরপর এই নেশার গ্রাসে থেকেই হঠাৎ উপলব্ধি করেন যে, এভাবে চলতে থাকলে তিনি ২৮ বছর বয়স পর্যন্ত টানতে পারবেন না। এছাড়া তাঁর চোখের সামনে চারজন মাদকাসক্তের মৃত্যুর পর অভিনেতার চেতনা কিছুটা ফিরে আসে।
অনিন্দ্যর ইচ্ছাশক্তির কাছে নেশাকে হারতে হয়েছে। তিনি মনে করেন, সেসময় নেশা তাঁকে মারতে চেয়েছিল আর সেদিন অভিনেতা নেশার কাছে হেরে গিয়েছিলেন বলেই আজকে জীবনের যুদ্ধে জয়ী হতে পেরেছেন। অনিন্দ্যর জার্নি নিঃসন্দেহে বহু মানুষকে অনুপ্রেরণো যোগাবে, যারা আজও অন্ধকার থেকে আলোর দিকে যাওয়ার রাস্তা হাতরাচ্ছেন।