প্রতি বছর ৮ মার্চ নারীদের (Women) সম্মান জানাতে বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস (International Women’s Day)। নারীরা শক্ত হাতে, যত্ন করে যেমন সংসারের হাল ধরেন, ঠিক সেরকমই বহির্জগতেও তাঁরা অনন্যা। কেউ চান এদিন নারীত্ব উদযাপনে 'স্পেশাল' কিছু করতে, তো কেউ আবার ভাবেন নারী দিবসের জন্য আলাদা দিনের প্রয়োজন নেই। এবিষয় কী ভাবেন অভিনেত্রী ইন্দ্রাণী হালদার (Indrani Halder)? আজতক বাংলার সঙ্গে মনখোলা আড্ডায় শেয়ার করলেন অভিনেত্রী।
আজতক বাংলা: নারী দিবসের গুরুত্ব আপনার কাছে কতটা?
ইন্দ্রাণী: উইমেন্স ডে, মাদার্স ডে, ফাদার্স ডে এই সবে আমি বিশ্বাস করি না। এটা এখন একটা ইভেন্ট হয়ে গেছে, আর কিছুই না। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, প্রত্যেকটা দিন আমার দিন, প্রত্যেকটা দিন নারী, পুরুষ উভয়ের দিন। তবে, কোনও মানুষকে যদি কেউ আনন্দ দিতে বা স্পেশাল ফিল করাতে চায়, তাহলে সেটায় কোনও ক্ষতি নেই। এদিন মেয়েদের অনেকে বিশেষ যত্ন করে, খেয়াল রাখে, আনন্দ দেয় সেটা বেশ ভাল লাগে।
প্রশ্ন: বিভিন্ন জায়গায় উদযাপন হয় নারী দিবসের। আপনার কোনও বিশেষ প্ল্যান আছে এবছর?
ইন্দ্রাণী: সকাল থেকে 'কুলের আচার' -র শ্যুটিং চলছে। আর কোনও প্ল্যান নেই।
প্রশ্ন: এত চরিত্রে অভিনয় করেছেন, বহু মহিলা দর্শকেরা তো অনুপ্রাণিত হন আপনার থেকেই...
ইন্দ্রাণী: হ্যাঁ, অগুনতি মানুষ। গত ডিসেম্বরে 'শ্রীময়ী' শেষ হয়েছে। আমি এর মধ্যেই নদীয়া গিয়েছিলাম একটা অনুষ্ঠানে। কিন্তু দেখলাম, এখনও মানুষের মনে 'শ্রীময়ী' বেঁচে আছে। আমি তাঁদের বললাম, তোমরা সবাই শ্রীময়ী, আমি একা না।
প্রশ্ন: ছোট পর্দা মিস করেন ?
ইন্দ্রাণী: না একদম মিস করছি না। এখনও অবধি তো অন্তত নয়। তবে ছোট পর্দাকে আমি কখনও অবহেলা করি না। আমি আবার ফিরব টেলিভিশনে। ছোট পর্দাই আজ আমায় এই জায়গায় পৌঁছেছে। বড় পর্দার থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসা এবং জনপ্রিয়তা পেয়েছি আমি এখানে। আমি বিশ্বাস করি, বর্তমানে এটাই সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম।
প্রশ্ন: দর্শকদের মানসিকতাও কি পাল্টাচ্ছে? রোহিত সেনের সঙ্গে শ্রীময়ীর বিয়ে হোক, এটাই তো চাইতেন বেশিরভাগ দর্শক...
ইন্দ্রাণী: আমি আর লীনা দি চাইছিলাম বিয়েটা হোক। এটার জন্য আমাদের ধারাবাহিকের একটা টিম রিসার্চ করেছিল। আমিও আমার পরিচিতদের থেকে প্রতিক্রিয়া নিয়েছিলাম। জানতে পারি সকলেই চাইছে বিয়েটা। মানুষ যেটার সঙ্গে এখন রিলেট করতে পারে, সেটাই বেছে নেন। আমি নিজে চেয়েছিলাম আমার মা আবার বিয়ে করুক।
প্রশ্ন: আপনার কত বয়স ছিল তখন?
ইন্দ্রাণী: আমার বাবা যখন মারা যায়, তখন মায়ের বয়স ৪৩। আমার বয়স তখন ২২-২৩ হবে। আমি মাকে বলেছিলাম, তুমি যদি একটা বন্ধু চাও বা একটা বিয়ে করতে চাও করতে পারো। কিন্তু মা করেননি। ছেলে -মেয়েই তাঁর ধ্যান-জ্ঞান ছিল তখন। আবার বিয়ে করবেন, এটা সেই সময়ের মানুষেরা ভাবতেই পারতেন না।
প্রশ্ন: বর্তমানে বেশিরভাগ ধারাবাহিকে মহিলাদের প্রাধান্য অনেক বেশি...
ইন্দ্রাণী: বাংলা টেলিভিশন সম্পূর্ণভাবে মহিলা দ্বারা শাসিত। সেখানে পুরুষদের কোনও জায়গা নেই। এটা আমি খুব গর্বের সঙ্গে বলতে পারি। যেহেতু বাংলা টেলিভিশনে আমার অনেকটা সময় কেটেছে, সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এখানে পুরুষদের জায়গা আছে হয়তো ৫ শতাংশ। সেটা মূলত দর্শকদের জন্যই। মেয়েরাই সবচেয়ে বেশি টেলিভিশন দেখেন। আর এজন্যেই নারীভিত্তিক, নারীকেন্দ্রিক, নারী উন্নয়ন, নারী সংগ্রামী ইত্যাদি নিয়ে ধারাবাহিকের বিষয় বেছে নেওয়া হয়।
প্রশ্ন: প্রায় ৫ বছর পর বড় পর্দায় ফিরলেন। 'কুলের আচার'-নিয়ে কতটা উৎসাহিত?
ইন্দ্রাণী: দারুণ! খুব ভাল হবে ছবিটা। মেয়েদের কি বিয়ের পর পদবী পাল্টানো উচিত? এই নিয়েই মূলত ছবির গল্প...বুধবারই শেষ শ্যুটিং আমাদের।
প্রশ্ন: ছবির বিষয়বস্তুও তো নারী দিবসের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক!
ইন্দ্রাণী: একবার গিরিশ ঘোষ, রামকৃষ্ণদেবকে বলেন, "আমি তো নট, আমি অভিনয় করি...।" তখন রামকৃষ্ণদেব তাঁকে বলেন, "ওরে অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে তুই তো লোকশিক্ষে করিস। আমরা এটাই করি আসলে। এই কথাটা সব সময় আমার মনে থাকে। আমি সব সময় এমন কিছু একটা করতে চাই, যার মাধ্যমে আমি 'লোকশিক্ষে' করব। সমাজকে কিছু শেখাব, মেয়েদের কিছু বার্তা দেব। শুধুই একটা চরিত্র করলাম, এটা আমি আমার ৩৫ বছরের কেরিয়ারে কোনও দিন করিনি।