লকডাউনের বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিনোদন জগৎ। প্রায় টানা সাত মাস বন্ধ থাকার পর গত অক্টোবর মাসে ফের খুলেছে সিনেমা হল, মাল্টিপ্লেক্স। সরকারের নয়া গাইডলাইন মেনেই শহর ও শহরতলির সিনেমা হলগুলি খোলা হলেও বর্তমানে কার্যত খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হল মালিকদের। ফলস্বরূপ অনির্দিষ্টকালের জন্যে বন্ধ হয়ে গেছে জয়া, প্রাচী, প্রিয়া,অশোকা, ইন্দিরা, বায়োস্কোপ (দুর্গাপুর),ডাকবাংলো (বারাসাত) -র মতো একাধিক সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হল। কেন এই সিদ্ধান্ত? কি পরিস্থিতি আসতে চলেছে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে? এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বাংলা ছবির সঙ্গে যুক্ত মানুষদের সঙ্গে কথা বললেন আজতক বাংলা।
নিউ নর্মালে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে, এই আশা করে পুণরায় সিনেমা হল খুলেছেন হল মালিকেরা। কিন্তু পুজোর সময় কিছুটা টিকিট বিক্রি হলেও তারপর হাতেগোনা দর্শক আর ক্ষতির বোঝাই বাড়তে থাকে তাঁদের। বেহালার অশোকা সিনেমা হলের কর্ণধার, প্রবীর রায় জানালেন, "এখন কোনও কনটেন্টই নেই, আমরা চালাবো কী করে? পুজোর আগে ১৮ অক্টোবর থেকে আমরা শো চালানো শুরু করেছিলাম। কিন্তু দশটা ছবির মধ্যে একমাত্র 'ড্রাকুলা স্যার' তাও একটু চলেছে।তাছাড়া কোনও ছবিই দর্শক টানতে পারেনি। দুই-চারজন করে দর্শক আসছেন, শো-এর পর শো বাতিল হচ্ছে। এরপর আমরা তীর্থের কাকের মতো বসেছিলাম মুম্বইয়ে সিনেমা হল খুললে হয়তো হিন্দি ছবির সাপ্লাই আমরা পাবো। কিন্তু মুম্বইয়ে বাংলার থেকেও খারাপ অবস্থা। কোনও দর্শকই নেই। যত দিন যাচ্ছে, ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই যাচ্ছে। কিভাবে এই পরিস্থিতিতে আমরা হল চালাবো? তবে কোনও কনটেন্ট এলেই আমরা আবার হল খুলবো।"
ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচারস অ্যাসোসিয়েশনস (EIMPA) -এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডিস্ট্রিবিউটর সুভাষ দত্তের কন্ঠেও হতাশার সুর পুরো বিষয়টি নিয়ে। তিনি বললেন, " পুরো ভারতবর্ষে সিনেমা হল, মাল্টিপ্লেক্সের অবস্থা খুবই খারাপ। সম্প্রতি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনীত 'সাঁঝবাতি' ছবিটি ২২ টি সিনেমা হলে রিলিজ করেছি। কিন্তু কোনও হলে বিক্রি নেই। একটা করে শো চালালেও দুই দিনে মোট চারজন দর্শক হয়েছে। বহু সিনেমা হল আছে যারা লকডাউনের পর পুণরায় হল খোলেনি, চিরতরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে শহরতলিতেও। এখানে যারা পুণরায় খুলেছিলেন তাঁরাও বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। এতো খরচ চালাবে কী করে?"
সিনেমা হল পুনরায় বন্ধ হওয়া প্রসঙ্গে, প্রিয়া-র কর্ণধার অরিজিৎ দত্ত জানালেন, "এবিষয়ে অনেক জায়গায় কিন্তু ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে, বিশেষত প্রিয়ার ক্ষেত্রে।লকডাউনে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর অক্টোবর মাসে নিউ গাইডলাইন পেয়ে, খুব তাড়াহুড়ো করে আমাদের হল খুলতে হয়েছিল। হলের বেশকিছু অভ্যন্তরীণ কাজ করাতে হবে। এখন যেহেতু দর্শক বা ছবি কোনোটাই নেই, তাই এখনই কাজগুলো করিয়ে নেবো। সেই জন্যে কিছু দিনের জন্যে হল বন্ধ থাকবে। তবে যদি পরিস্থিতি ভাল হতো, তাহলে হয়তো রাতে আমি এই কাজগুলো করতাম। কিন্তু কোনও ছবি কিংবা দর্শক নেই। সেই জন্যে আমি এখন হল বন্ধ করেই কাজ করাতে পাচ্ছি। দু'বছর আগেও দুর্ঘটনার জন্যে প্রায় সাত মাস বন্ধ ছিল প্রিয়া। কিন্তু কোনও ছবি আসছে না, এইরকম ঘটনা আগে কখনও হয় নি।"
এতগুলো সিনেমা হল সাময়িকভাবে বন্ধ থাকা ও পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার জন্যে যেমন অশনি সংকেত দেখা দিয়েছে গোটা চলচ্চিত্র জগতে। তবে বর্তমানে কিছুটা আশায় বুক বাঁধছেন কলকাতার হল মালিকেরা। চলতি বছরের বড়দিনে যেহেতু বেশ কয়েকটি ছবি মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে, তাই তাঁরা আশাবাদী, পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে দর্শকেরা হলমুখী হবেন। পুনরায় প্রাণ ফিরে পাবে গোটা বিনোদন জগৎ।