বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজো ও যৌথ পরিবার ঘিরে, দর্শকদের 'একান্নবর্তী, ৫১ নয় এক অন্ন' (Ekannoborti 51 Noy Ek Onno) ছবির গল্প বলবেন মৈনাক ভৌমিক (Mainak Bhaumik)। এই ফ্যামিলি ড্রামায় মুখ্য চরিত্রে রয়েছেন অপরাজিতা আঢ্য (Aparajita Adhya) ও সৌরসেনী মৈত্র (Souraseni Maitra)। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যাবে অলকানন্দা রায় (Alakananda Roy) ও অনন্য সেনকে (Ananya Sen)।
আগামী ১৯ নভেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে 'একান্নবর্তী'। তার আগে আজতক বাংলার সঙ্গে আড্ডা দিলেন পর্দার শিলা ওরফে অভিনেত্রী সৌরসেনী মৈত্র।
আজতক বাংলা: সামনেই ছবি মুক্তি! কেমন আছেন এই সময়?
সৌরসেনী: ভাল আছি। যে রকম সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম, গোটা দুনিয়ার মতো আমাদের কাজেও অনেক ক্ষতি হয়েছে। সেই তুলনায় নতুন অনেক কাজ হচ্ছে, স্থগিত থাকা কাজগুলি শেষ হচ্ছে। চাপ আছে, তবে কাজ করতে কার না ভাল লাগে।
প্রশ্ন: 'একান্নবর্তী'-তে আপনার চরিত্রের নাম শিলা। কেমন সে?
সৌরসেনী: 'একান্নবর্তী' মানেই যৌথ পরিবার। একান্ন নয় এক অন্ন! শিলা, বাড়ির বড় মেয়ে। তিনটি প্রজন্মকে দেখানো হয়েছে। ছবিতে আমার মা, বোন, দিদার যেমন আলাদা ক্রাইসিস রয়েছে জীবনে, সেরকম আমার অর্থাৎ শিলারও অনেক ক্রাইসিস আছে। তবে পরিবারে সবচেয়ে স্ট্রং তাঁকেই থাকতে হয়। পরিবারের এই 'ইমোশনাল অ্যাঙ্কার' কখনও আবার 'ইমোশনাল পাঞ্চিং ব্যাগও' হয়ে ওঠে। বলা যায় শিলা এই একান্নবর্তী পরিবারের শিরদাঁড়া। আমি তো খুব রিলেট করতে পেরেছি।
প্রশ্ন: রিলেট করতে পেরেছেন আপনি... আপনারও কি যৌথ পরিবার?
সৌরসেনী: ছোটবেলায় আমারও যৌথ পরিবার ছিল। কিন্তু বড় হওয়ার পর আসতে আসতে তা ছোট হয়ে যায়। তবে আত্মীয়দের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক আছে। আমার সকলের সঙ্গে হৈ হৈ করে কাটাতে ভাল লাগে ঠিকই। কিন্তু সকলে যে ভাবে বড় হয়েছি, বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে সকলে নিজের নিজের কাজে ব্যস্ত। সকলেই কোথাও গিয়ে খুব একা...
প্রশ্ন: শিলার মতো স্ট্রং থেকে সৌরসেনী কীভাবে জীবনে সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করে?
সৌরসেনী: স্ট্রং থাকার চেষ্টা আমরা সকলে করি। কিন্তু কতক্ষণ? কখনও কখনও আমাদের বুঝতে হয় যে, সব সমস্যার দায়ভার নিয়ে চলার দায়িত্ব আমাদের একার নয়। শিলার মতো আমারও কাজের খুব ব্যস্ততা থাকে। মা -বাবার বয়স হচ্ছে... বাড়ির-কাজ, বাইরের কাজ সবটা মিলিয়ে সব কর্মরত মহিলাদের যেমন থাকে, সেরকম নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় রোজ।
প্রশ্ন: ট্রেলার দেখে বোঝা যাচ্ছে, বডি শেমিং নিয়ে একটা সোশ্যাল মেসেজ থাকবে ছবিতে। এখন তো এটা একটা সামাজিক ব্যাধি...
সৌরসেনী: আগে আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন হয়তো 'বডি শেমিং' -র মতো ফ্যান্সি শব্দ শোনা যেত না। তবে মজার ছলে 'হাতি মেরে সাথি', 'মোটু', 'গুবলু' পরিবার, বন্ধুদের মাঝে এরকম ধরণের নামেই ডাকা হয় আমাদের সমাজে। কিন্তু মজার ছলে বলা কোনও কথাও যে অপর দিকের মানুষের আত্মবিশ্বাস কতটা কমিয়ে দিতে পারে, তা অনেকেই জানেন না। তবে আমার মনে হয় সুস্থ থাকাটাই আসল কথা।
প্রশ্ন: আপনি কখনও সম্মুখীন হয়েছেন বডি শেমিংয়ের?
সৌরসেনী: আমি যেহেতু রোগা ছিলাম, ছোটবেলা থেকেই 'আরেকটু ভাত খা', 'ঝাঁটার কাঠির মাথায় আলুর দম', 'ঝড় এলে উড়ে যাবি' এগুলো তো শুনতেই হয়। তবে সব সময় যে খারাপ মানসিকতা থেকে মানুষ বলে তা কিন্তু নয়। মজা করেই বলে হয়তো... কিন্তু কখনই বিদ্রুপ করা উচিত না।
প্রশ্ন: দীর্ঘদিন পর আপনার ছবি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে। ফ্যামিলি ড্রামাতে বাঙালিরা হলমুখী হবেন? আপনার কতটা প্রত্যাশা?
সৌরসেনী: মাঝে ওটিটি-র কাজ করছিলাম, তারপর প্যান্ডেমিক। অনেকদিন পর আমার কোনও ছবির সিনেমা হল রিলিজ হচ্ছে। যখন ছবির স্ক্রিপ্ট পড়লাম, অদ্ভুত ভাবে আমার দুনিয়া দেখার দৃষ্টিকোণ বদলে গেছে। এতটা রিলেট করতে পারলাম ছবিটার সঙ্গে, মনে হল এগুলো তো আমার আশেপাশেও হয়, কিন্তু এভাবে তো ভেবে দেখেনি কখনও। ছবিটা নারীকেন্দ্রিক ঠিকই। তবে আমার মনে হয় পুরুষদের এটা বেশি করে দেখা উচিত। সকলেই খুব রিলেট করতে পারবেন।
প্রশ্ন: অপরাজিতা আঢ্যর সঙ্গে এর আগে 'জেনারেশন আমি'-তে কাজ করেছেন। এবার মা, মেয়ের চরিত্রে... দু'জনের বন্ডিং কেমন?
সৌরসেনী: 'জেনারেশন আমি'-র সময় আমি ভাবছিলাম এর বড় মাপের ও গুণী অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করবো...কিন্তু শেষে এত ভাল একটা বন্ডিং হয়ে গেল সকলের সঙ্গে। এখন 'অপা পিপি' হয়ে গেছে উনি আমার। এতটা সাহায্য করেছেন আমায়, কী বলবো। ইন্ডাস্ট্রির কিছু সিনিয়ররা যেভাবে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করেন, সেটা সত্যি শেখার মতো। অপা পিপির মতো মানুষের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা সত্যি দারুণ। আমি চাইবো আরও কাজ একসঙ্গে করতে।
প্রশ্ন: 'একান্নবর্তী'-র পর সামনে আর কী কী কাজ আসছে?
সৌরসেনী: এখন তো 'একান্নবর্তী' নিয়ে খুব উৎসাহিত। কিছুদিন আগে একটা সিরিজ করলাম 'এক থি বেগম ২'। সেটা এখন স্ট্রিমিং হচ্ছে। এছাড়াও ভিক্টর মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় আরও একটি ওটিটি-র কাজ করেছি, আগামী বছর মুক্তি পাবে সেটা। এছাড়াও হাতে আরও সিরিজ ও ছবি আছে, কিন্তু প্রোজেক্টর কাজ আরও একটু না এগোলে সেটা নিয়ে কথা বলতে পারব না।