ফের শোকের ছায়া বাংলা সংস্কৃতি জগতে। প্রয়াত অভিনেত্রী স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত (Swatilekha Sengupta)। বুধবার ১৬ জুন কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। দীর্ঘ দিন ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন স্বাতীলেখা। গত মাসেই ৭১ বছর পূর্ণ হয় তাঁর। বাংলার মঞ্চ তথা চলচ্চিত্র জগতের এই দাপুটে অভিনেত্রীর প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সমগ্র শিল্পীমহলে।
নাট্য ব্যক্তিত্ব সোহাগ সেন (Sohag Sen) আজতক বাংলার কাছে জানালেন, "দেশের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীদের মধ্যে একজন ছিলেন স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। উনি একাধারে সঙ্গীতশিল্পী, পরিচালক, প্রশিক্ষক, নৃত্যশিল্পী। এত প্রতিভা খুব কম মানুষের থাকে। তাই ওঁর ঘাটতি পূরণ হবে না। 'শেষ সাক্ষাৎকারে' আমি ওঁর যে অভিনয় দেখেছি, তা কখনও ভুলবো না। সেই সঙ্গে বলবো ওঁর সঙ্গে একটা কাজ করার সুযোগ আমার হয়েছিল। 'বেলা শেষে' -তে সুযোগটা পেয়ে এত আনন্দিত ছিলাম আমরা দুজনেই যে, এবার কাজের ফাঁকে আড্ডা মারতে পারবো।" তিনি আরও যোগ করলেন, "যেটা আমায় সবচেয়ে বেশী অবাক করেছিল, এত বড় মাপের একজন অভিনেত্রী স্বাতীলেখা, কিন্তু তাঁর এমন একটা ভাব যেন উনি কিছু জানেন না, আমি সব জানি। এই রকম নম্রতা থাকলেই বোধ হয়, তাঁর ওরকম উত্তরণ ঘটে। এত সরল প্রকৃতি হয়েও এত জটিল কাজগুলো করতেন তাই এই শূন্যতা কখনই পূরণ হবে না।"
আরও পড়ুন: 'ঘরে-বাইরে' থেকে 'বেলাশেষে'! শুধুমাত্র সৌমিত্রর সঙ্গেই লিড চরিত্রে ছিলেন স্বাতীলেখা
চলচ্চিত্র ও থিয়েটার পরিচালক গৌতম হালদার (Goutam Halder) জানালেন, "স্বাতী দি-র সঙ্গে আমার যোগাযোগ বহুদিন ধরে। তিনি এত গুণী মানুষ, অনন্যসাধারণ অভিনয় করতেন। ওঁর একটা নিজস্ব স্টাইল তৈরি করেছিলেন। একটা কথা খুব মনে পড়ছে, যখন নান্দিকার ফেস্টিভ্যাল হত, তাঁর আগের দিন আমরা ব্যস্ত থাকতাম। উনি সেই সময়ে আকাডেমির বার্থরুম থেকে শুরু করে চারিপাশে গ্যামাক্সিন, ফিনাইল ছড়িয়ে দিতেন নিজের হাতে। থিয়েটারের জন্য এতটা যত্নশীল ছিলেন তিনি। একদম নীচের তলা থেকে অপরের তলার মানুষের সঙ্গে কাজ করতেন অথচ কখনও মুখে বিন্দুমাত্র অহংকার দেখা যেত না।" গৌতম হালদার আরও বললেন, "থিয়েটার ও চলচ্চিত্রে একসঙ্গে অভিনয় করা একটা খুব কঠিন কাজ। কিন্তু উনি উভয় ক্ষেত্রেই সফল। মানুষকে চলে যেতে হয় জানি। কিন্তু এতটা শারীরিক কষ্ট পেয়েছেন উনি, তাই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি যেখানেই থাকুক, খুব ভাল থাকুক। তবে সেই সঙ্গে থিয়েটারের যে একটা অপুরণীয় ক্ষতি হল, তা নিঃসন্দেহে মেনে নিতেই হবে।"
আরও পড়ুন: স্বাতীলেখা সেনগুপ্তর প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন মমতার
অভিনেতা চন্দন সেনও (Chandan Sen) স্বাতীলেখা সেনগুপ্তর স্মৃতিচারণ করলেন। তিনি বললেন, "বাংলা থিয়েটারে অভিভাবক যে কয়েকজন ছিলেন তাঁর মধ্যে স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত একজন। বিশেষত নতুন ছেলেমেয়েদের কাজের ব্যাপারে ক্রমাগত খোঁজ নেওয়া, তাঁদের উৎসাহ দেওয়া এই কাজটা তিনি নিয়মিত করতেন। চার মাস আগেও ওঁর বাড়িতে যখন গিয়েছিলাম, ওই চূড়ান্ত অসুস্থতার মধ্যেও বারবার এসে জিজ্ঞেস করছিলেন নতুন কী হচ্ছে, কোন ছেলে -মেয়ে এল, তাঁরা কী ভাবছে... প্রকৃত অর্থে যাকে বলে অভিভাবক, সেই চলে গেলেন।" চন্দন সেন আরও জানালেন, "যখন নান্দিকারে যাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়, আমায় এক সময়ে থাকতে হত অফিসে, রিহার্সাল হত বাগবাজার রিডিং লাইব্রেরীতে। কিন্তু মাঝে মধ্যে ঘুরে গিয়ে উনি জিজ্ঞেস করতেন 'তোমার চা আছে তো?' 'খাবার-দাবার আছে তো?' 'ওখান থেকে নিয়ে খেয়ে নিও'... এতটা যত্নশীল ছিলেন...।"