করোনার সোয়াব টেস্ট, যাকে সংক্ষিপ্তভাবে আরটিপিসিআর বলে, রাজ্যের তরফে সর্বাধিক ১১৫০ টাকা মূল্য ধার্য করা হয়েছে বেসরকারি ল্যাবে পরীক্ষা করার জন্য। সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে অবশ্য কোনও পয়সা লাগেনা। অনেকে বেশি অসুস্থ বোধ করলে সরকারি হাসপাতালে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে চান না বা পারেন না। অথচ শিলিগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় যা ওই পরীক্ষার জন্য যা খুশি দাম নেওয়া হচ্ছে। বদলে রসিদও দেওয়া হচ্ছে না।
শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোড এ মহানন্দা সেতু লাগোয়া একটি নার্সিংহোমে আরটিপিসিআর টেস্ট করাতে গেলে, সেখানকার যিনি লালার নমুনা নেবেন, তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানিয়ে দিলেন, সাড়ে তিন হাজার টাকা লাগবে। তার নিচে হবে না। কেন সাড়ে তিন হাজার? তার কোনও উত্তর নেই। আবার তার পরিষ্কার উত্তর, "বিল কিন্তু পাবেন না। যদি রাজি থাকেন পরীক্ষা হবে। রাজি না থাকলে আসতে পারেন।" অন্য একটি ল্যাবে আবার বলা হল ১৬৫০ টাকা নেওয়া হবে। অন্য আরেক জায়গায় দরদাম করে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত নামানো গেল। একেক জায়গায় একেক রকম মূল্য কেন? সদুত্তর নেই।
শুধু সোয়াব টেস্টই নয়, বাড়িতে না থেকে কেউ যদি সতর্কতামূলক কোনও বেসরকারি হাসপাতালের আইসোলেশন এ থাকতে চান, তাহলে তাকে কোথাও দশ হাজার কোথাও কুড়ি হাজার কিংবা তারও বেশি। কোাথাও তিনদিনের জন্য, কোথাও সাতদিনের জন্য টাকা দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শিলিগুড়িতে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে কোন বেড নেই। অথবা থাকলেও করোনা রোগীর জন্য তারা বেড দিতে নারাজ। সেই সুযোগে বেশ কিছু ছোট নার্সিংহোম আইসোলেশন শয্যা বানিয়ে মোটা টাকা আদায়ের ছক কষছে। করোনা পজিটিভ হলে ৫০ হাজার থেকে এক লক্ষ কিংবা তারও বেশি দাবি করা হচ্ছে অগ্রিম হিসেবে।
দার্জিলিং জেলার সিএমওএইচ প্রলয় আচার্য জানিয়েছেন, কোনও হাসপাতাল বা কারও বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ এলে তা খতিয়ে দেখা হবে। যেখানে রসিদ মিলছে না, সেখানে অভিযোগ করবে কে? মৌখিক অভিযোগ এর গুরুত্ব কতখানি, বিচার বিবেচনা করে সরকারিভাবে অভিযোগের দিকে হাটছেন না কেউই। অথচ সমস্যাটির কথা জিজ্ঞাসা করা হলে সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করেছেন অভিযোগ একশো শতাংশ ঠিক। তাহলে মুক্তির উপায়? কোনও উপায় আপাতত নেই। নতুন সরকার গঠিত হলে এতটা কালোবাজারি হয়তো সম্ভব নয়, তাই এ বেলা যতখানি সম্ভব মুনাফা লুটে নেওয়ার চেষ্টায় রয়েছে অসাধু নার্সিংহোম ও ল্যাবগুলি।