মৃতদেহ উদ্ধারের মাত্র ১৩ দিনের মাথায় খুনের কিনারা করল পূর্ব বর্ধমান জেলার পুলিশ। গত ১ জুন আউসগ্রাম থানার বিল্লগ্রাম পঞ্চায়েতের বরাগ্রাম লাগোয়া এন এইচ ২-বি সড়কের ধারে নয়ানজুলি থেকে ৪৫ বছর বয়সী এক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করে গুসকরা বিট হাউস ফাঁড়ির পুলিশ। গ্রামবাসীরা প্রথম দেখতে পান মৃতদেহটি । মৃত ব্যক্তির পরনে ছিল সাদা রঙের পাঞ্জাবি এবং পাজামা। মৃতদেহের হাত বাঁধা অবস্থায় ছিল। শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্তে নামে। প্রথমেই মৃতের ছবি বিভিন্ন থানা এলাকায় পাঠানো হয়। প্রচারও করা হয়। এরই পাশপাশি পুলিশ স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে জানতে পারে দেহ উদ্ধারের আগের রাতে ওই ব্যক্তিকে গুসকরা হাউস সংলগ্ন একটি হোটেলে দেখা গিয়েছিল। পরে সেই হোটেলের মালিকও এটা নিশ্চিত করেন। তবে মৃতের পরিচয় সেইসময় জানা যায়নি।
এরপর সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে পুলিশ। সেখানে দেখা যায় ৩১ মে রাত ১০টা ৪৮ নাগাদ একটি গাড়ি হোটেলের দিক থেকে এসে বর্ধমানের দিকে যায়। একই ধরনের এবং রঙের গাড়িটি ফের ১ জুন ভোর ৩.৩০ নাগাদ ফিরে আসে। এরপর বিভিন্ন রাস্তার অন্যান্য সিসিটিভি ফুটেজ অনুসন্ধান করা হয়। আউসগ্রাম থানার কয়রাপুর মোড়ের কাছে সিসিটিভি ফুটেজে সেই গাড়িটিকেই দেখা যায়। গাড়িটি তখন গুসকরার দিকেই যাচ্ছিল। এরপর পুলিশের বিভিন্ন বিভাগের সহায়তায় সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে জানতে পারে গাড়িটি ঝাড়খণ্ডের দিকে চলে গিয়েছে।
পরে ওসি, এসওজি এবং মামলার আইও-র সহায়তায় ঝাড়খণ্ডের দিকে রাস্তার পাশে থাকা ধাবা, হোটেল, পেট্রোল পাম্প সহ বেশকিছু জায়গায় সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করে বিহারের ভাগলপুরে পৌঁছায় জেলা পুলিশের টিম। সনাক্ত করা হয় গাড়ির নম্বর। এরপর গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর থেকে মালিকের পরিচয় জানতে পারে পুলিশ। সমস্ত তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে নিশ্চিত হওয়ার পর বিহারের সমস্তিপুর জেলার বিথান থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। পাশাপাশি গাড়িটিকেও বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। এদিকে ইতিমধ্যেই মৃত ব্যক্তির পরিচয়ও জানা যায়। মৃতের নাম মহম্মদ খালিদ আনোয়ার ওরফে জুগনু। বাড়ি সমস্তিপুরেরই বিথান থানা এলাকায়।
এই বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সিনহা রায় জানান, পরিবারের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, মৃত ব্যক্তি ভুট্টা ব্যবসায়ী। নগদ ২০ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা নিয়ে কলকাতা যাচ্ছিলেন। তিনি সম্ভবত বিভিন্ন ভুট্টা ব্যবসায়ীদের টাকা আত্মসাৎ করে বিহার থেকে পালিয়ে এসেছিল, আর সেই শত্রুতার কারণেই তাঁকে হত্যা করে দেহ লোপাটের করার চেষ্টা করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্ত নেমে জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তি সম্ভবত গাঁজা ও বেআইনি অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও জানান, ধৃতদের মধ্যে গাড়ির মালিক মৃতের আত্মীয় তথা তাঁর ব্যবসার অংশীদার। ধৃতদের সোমবার আদালতে পেশ করা হয়। টিআই প্যারেডের পর পুলিশ তাদের হেফাজতে নেবে বলে জানা যাচ্ছে।