আম্ফান বিধ্বস্ত বাংলা ঘুরে দেখতে এসেছিলেন। ইয়াসের পরেও রাজ্যে এলেন মোদী। আম্ফানে তাঁর সফর সঙ্গী হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর একসঙ্গে সাংবাদিক বৈঠকও করেছিলেন দু'জনে। তবে ভোট পরবর্তী বাংলায় মোদী-মমতার মধ্যে দূরত্ব রয়েই গেল। ইয়াসের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে পর্যোলেচনা বৈঠক এড়িয়ে গেলেন মমতা। অন্যদিকে ওড়িশায় দেখা গেল অন্য চিত্র। ভূবনেশ্বরে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে সপার্ষদ হাজির থাকলেন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক।
২০১৯ সালে ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় ফণি। লোকসভা ভোটের আবহে সেবার মুখ্যমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী ফোন করলেও তা নাকি তিনি ধরেননি বলে অভিযোগ ওঠে। মোদীকে মুখ্যমন্ত্রী মানেন না বলে সেবার কলাইকুন্ডার বৈঠকেও অংশ নেননি মমতা। সেবারও কিন্তু এনডিএ-তে না থাকলেও কেন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতা করতে দেখা গিয়েছিল নবীন পট্টনায়ককে।
একুশের বিধানসভা ভোটে বারবার মোদী-মমতাকে একে অপরকে আক্রমণ শানাতে দেখা গিয়েছে প্রচারের ময়দানে। তার বীজ যেন রোপন করা হয়ে গিয়েছিল চলতি বছর ২৩ জানুয়ারি ভিক্টোরিয়া নেতাজি জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নেতাজি জয়ন্তী পালনের অনুষ্ঠানে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান শুনে বক্তব্য রাখেননি। ক্ষুব্ধ মমতা পোডিয়ামের সামনে দাঁড়িয়ে প্রথমেই হিন্দিতে বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, সরকারি অনুষ্ঠানের একটা শালীনতা থাকা উচিত। এটা কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি নয়। এটা সমস্ত দলেরই কর্মসূচি। জনতার কর্মসূচি।’মমতার পরেই বলতে উঠে মোদী তাঁর ভাষণ শুরু করেন ‘বহেন মমতা’জি’ বলে। কিন্তু তাতে দুই তরফের সম্পর্ক জোড়া লাগেনি।
ভোট পরবর্তী সময়ে এদিনই প্রথম বাংলায় এলেন মোদী। তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর মোদীর সঙ্গে দেখা হল মমতার। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পর্যালোচনা বৈঠকে যোগ দিলেন না।
বৈঠকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর উপস্থিতিতে আপত্তির কারণেই মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে যোগ দিলেন না। তিনি আলাদা করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চেয়ে রাজ্যে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত রিপোর্ট তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর মিনিট ১৫ কথা হয়। এরপর তিনি দিঘার উদ্দেশে রওনা দেন মমতা।
দিঘার পর্যালোচনা বৈঠকে মমতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দখা করে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট দিয়ে এসেছি। তবে আমাকে দিঘায় আসতে হত, তাই বৈঠকে থাকতে পারিনি। উনি আমাকে বৈঠকে ডেকেছিলেন। তাই ওঁর সঙ্গে দেখা করে এসেছি। জানিয়ে এসেছি, দিঘায় আসতে হবে তাই বৈঠকে থাকতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ চেয়েছেন মমতা। দিঘায় প্রশাসনিক বৈঠকে সেকথা নিজেই জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তবে 'পাবো কি না জানি না তবে ওঁকে বলে এসেছি' এমন কথাও বলতে শোনা যায় মমতাকে।
আকাশপথে শুক্রবার ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি দেখার পর ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলির জন্য ১ হাজার কোটি টাকা আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এর মধ্যে ওড়িশা ৫০০ কোটি এবং পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডকে মিলিয়ে ৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হবে।
সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওড়িশার ভদ্রক ও বালেশ্বর জেলা এবং পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকাগুলি আকাশপথে পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রিসভার কয়েক জন সদস্য। ইয়াস-এ ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা করেছেন তাঁরা।
ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা অর্থ সাহায্যের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, এর পাশাপাশি জাতীয় অর্থ কমিশনের কাছে বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের সুপারিশ করা হবে।
মোদীর সঙ্গে পর্যালোচনা বৈঠকের পরেই ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক শুক্রবার ট্যুইট করে জানান, করোনা পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর বাড়তি আর্থিক বোঝা চাপাতে নারাজ তিনি। তাই ইয়াস বিধ্বস্ত ওড়িশার জন্য কেন্দ্রের কাছে অর্থ সাহায্যের দাবি জানাবেন না। নিজেদের সামর্থ্যেই ওড়িশা সরকার পরিস্থিতির মোকাবিলা করবে।
নবীন পট্টনায়েক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করলেও বাংলার পর্যোলোচনা বৈঠক প্রধানমন্ত্রীকে করতে হন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী, রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়, বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রীর আসন খালিই পড়ে থাকল।
গত সোমবার ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতির মোকাবিলায় ওড়িশা এবং অন্ধ্রপ্রদেশকে ৬০০ কোটি টাকা করে অর্থসাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পশ্চিমবঙ্গের জন্য ৪০০ কোটি বরাদ্দের কথাও জানান তিনি। ওড়িশা এবং অন্ধ্রের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ কেন কম অর্থসাহায্য পাচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পর্যালোচনা বৈঠকে যোগ না দিলেও ইয়াস বিধ্বস্ত এলাকাগুলিতে ত্রাণ ও পুনর্গঠনের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা অর্থসাহায্যের দাবি জানিয়েছেন কেন্দ্রের কাছে। প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী অনুপস্থিত থেকে সেই টাকার কতটা আদায় করতে পারবেন তা নিয়ে কিন্তু সন্দেহ থেকে যাচ্ছে।