একসময় কংগ্রেসে ইন্দিরা গান্ধীর পরে সেকেন্ড ইন কম্যান্ড তাঁকেই মনে করা হত। তৎকালীন রাজনীতিবিদদের মধ্যে অনেকেই বলতেন, তাঁকেই কার্যত নিজের উত্তরসূরী হিসেবে মনে মনে নির্বাচন করেছিলেন ইন্দিরা। কিন্তু ১৯৮০-র ২৩ জুন সকালটা সমস্ত হিসেব ওলটপালট করে দেয়। মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনা কেড়ে নেয় তাঁকে। (ছবি সূত্র-গেট্টি)
তিনি সঞ্জয় গান্ধী (Sanjay Gandhi)। ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর (Indira Gandhi) ছোট ছেলে এবং আরও এক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর (Rajiv Gandhi) ভাই। আকাশে বিমান ওড়ানোর সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন সঞ্জয় গান্ধী। অকালে শেষ হয়ে যায় এক তরুণ তুর্কী জনপ্রিয় নেতার জীবন। (ছবি সূত্র-গেট্টি)
কিন্তু কীভাবে ঘটেছিল সেই দুর্ঘটনা? জানা যায় সেদিন সকালে কুর্তা পাজামা ও কোলাপুরি জুতো পরে সফদরজং বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন সঞ্জয় গান্ধী। ১০ মিনিটের মধ্যেই বিমানবন্দরে পৌঁছে যান তিনি। এরপর চড়ে বসেন নিজের প্রিয় বিমানের ককপিটে। (ছবি সূত্র-গেট্টি)
সেদিন ককপিটের পিছনের আসনে বসেন সঞ্জয়। সামনের আসনে ছিলেন তাঁর প্রশিক্ষক ক্যাপ্টেন সুভাষ সাক্সেনা। জানা যায় ওই বিমানটিকে সেই দিনের আগে মাত্র ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট ওড়ানোর অভিজ্ঞতা ছিল সঞ্জয়ের। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিমানের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতেই রাখেন ইন্দিরা-পুত্র। (ছবি সূত্র-গেট্টি)
সকাল ৭টা ৫৮ মিনিটে মাটি ছাড়ে সঞ্জয় গান্ধীর বিমান। কিছুক্ষণের মধ্যেই আকাশের বুকে স্টান্ট শুরু করেন সঞ্জয়। কিন্তু নিয়তি সেদিন হয়ত অন্য কিছুই লিখে রেখেছিল। বিমান ঠিক কতটা উচ্চতায় রয়েছে তা আন্দাজ করতে পারেননি সঞ্জয় গান্ধী। যার জেরে বিমানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন তিনি। নিয়ন্ত্রণহীন বিমানের একটি ডানা ধাক্কা খায় একটি নীম গাছে। সকাল ৮টা ১০, অর্থাৎ ঠিক ১২ মিনিটের মধ্যে ভেঙে পড়ে বিমানটি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সঞ্জয় গান্ধীর। (ছবি সূত্র-গেট্টি)
অন্যদিকে সেই সময় নিজের অফিসে কাজ করছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। সেখানেই ছেলের দুর্ঘটনার খবর পান তিনি। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান ইন্দিরা। যদিও সেখানে গিয়ে শুধুই বিমানের ধ্বংসস্তূপ দেখতে পান তিনি। ছেলেকে আর ফিরে পাননি। (ছবি সূত্র-গেট্টি)
কংগ্রেসের বরিষ্ঠ নেতাদের কেউ কেউ বলেন, নিজের দুই ছেলেকেই ভীষণ ভালবাসতেন ইন্দিরা। কিন্তু সঞ্জয় ছিলেন তাঁর বেশি কাছের। তাই সেই সঞ্জয়ের মৃত্যুতে ভিতরে ভিতরে কার্যত পুরোটাই ভেঙে পড়েন ইন্দিরা। যদিও নিজের সেই অনুভূতি কখনই প্রকাশ্যে আসতে দেননি তিনি। তবে নিয়তির পরিহাসে সঞ্জয় গান্ধীকে যদি অকালে চলে যেতে না হত, তাহলে বর্তমান কংগ্রেস তথা দেশের রাজনীতির চিত্রটা অন্যরকম হত বলেই মনে করেন রাজনীতিবিদদের অনেকেই। (ছবি সূত্র-গেট্টি)