সংসদে লোকসভা ও রাজ্যসভার সাংসদদের জন্য ক্যান্টিনে সস্তা খাবার নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। দেশের আইন প্রনেতাদের জন্য কেন এই বিশেষ ব্যবস্থা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বহুবার। নতুন বছরে সেই বিতর্কে ইতি টানার পথেই এগোল মোদী সরকার{ লোকসভার স্পিকার ওম বিড়াল আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে এবার ক্য়ান্টিনে খাবারের দাম বাড়তে চলেছে। উঠে যাবে ভর্তুকি। হলও তাই। সম্প্রতি সংসদের ক্যান্টিনে খাবার নিয়ে নতুন রেট কার্ড প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে ৩ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত খাবারের মেনু অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সংসদে বাজেট অধিবেশন শুরু হ্ছে ২৯ জানুয়ারি। তার আগেই এই নতুন রেট চার্ট চালু হয়ে যাবে।
সংসদ ভবনের ক্যান্টিনে নতুন হারের তালিকা অনুসারে, সবচেয়ে সস্তা রুটি, দাম রাখা হয়েছে ৩ টাকা। এবং সবচেয়ে ব্যয়বহুল খাবার ননভেজ বুফে লাঞ্চ, যার দাম পড়বে ৭০০ টাকা। এ ছাড়া ভেজ বুফে লাঞ্চের দাম রাখা হয়েছে ৫০০, যা ভেজ থালির ক্ষেত্রে সবচেয়ে ব্যয়বহুল। বাদল অধিবেশন থেকেই এই দামে খাবার খেতে হবে সাংসদদের।
পুরানো হারের তালিকায় রুটির দাম ছিল ২ টাকা এবং হায়দরাবাদী চিকেন বিরিয়ানির দাম ছিল ৬৫ টাকা। এ ছাড়া আগের হার অনুসারে ধোসা ও এক থালা কপোড়া পাওয়া যেত মাত্র ১০ টাকায়।
সংসদের ক্যান্টিনের নতুন হারের তালিকা অনুসারে চিকেন বিরিয়ানি, চিকেন কাটলেট, চিকেন ফ্রাই এবং ভেজ থালির দাম ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সময় চিকেন কারির জন্য ৭৫ টাকা দিতে হবে।
এ ছাড়া মটন বিরিয়ানি ও মাটন কাটলেটের দাম হচ্ছে দেড়শ টাকা এবং মটন কারির জন্য ১২৫ টাকা দিতে হবে। এবার আলু বান্দা, ব্রেড পাকোড় এবং সিঙ্গাড়ার মত খাবারের দাম হচ্ছে দশ টাকা।
আগামী ২৯ জানুয়ারিতে পরবর্তী সংসদ অধিবেশন প্রস্তুতির বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনের সময় লোকসভার স্পিতার ওম বিড়লা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন দাম বাড়ানোর, তিনি বলেছিলেন, 'সংসদীয় ক্যান্টিনে এবার থেকে সরবরাহ খাবার ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে, কারণ এবার থেকে সংসদের ক্যান্টিনে উঠতে চলেছে ভর্তুকি।'
স্পিকার আরও জানিয়েছিলেন, সংসদীয় ক্যান্টিনগুলি এবার থেকে নর্দান রেলওয়ের পরিবর্তে আইটিডিসি দ্বারা পরিচালিত হবে।জানা যাচ্ছে খাবারে এই ভর্তুকি তুলে নেওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার প্রায় আট কোটিরও বেশি টাকা সাশ্রয় করবে।
সাংসদদের খাবারের জন্য সরকারের ভর্তুকির বহর কতটা, তা জানতে চেয়ে সুভাষ অগ্রবাল নামে এক সামাজিক আন্দোলনকারী তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় মামলা করেছিলেন। তার জবাবে সরকারের তরফেই জানানো হয়েছিল, গত পাঁচ বছরে সাংসদদের খাবারে ৬০ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা খয়রাতি দেওয়া হয়েছে। ওই ক্যান্টিনে এক প্লেট পুরি-তরকারির দামে ৮৮ শতাংশ ভর্তুকি দিত কেন্দ্র। সাংসদ বা সংসদের যে সদস্যরা মাসে ১ লক্ষ ৪০ হাজার বা তারও বেশি আয় করেন, তাঁরা এক প্লেট ‘ফ্রায়েড ফিশ উইথ চিপস’ কিনতেন মাত্র ২৫ টাকায়। মাটন কাটলেট পেতেন আরও কমে, মাত্র ১৮ টাকায়। গত এপ্রিল মাসেই ওই ক্যান্টিনে মধ্যাহ্নভোজন সেরেছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভাত, রুটি, রাজমা, সার্সো কা সাগ, আলুর তরকারি আর দই খেয়ে তাঁকে দিতে হয়েছিল ২৯ টাকা!
সxসদদের সুলভ ক্যান্টিন বন্ধ হওয়ার খবরে খুশি আম জনতা। তাদের বক্তব্য, জনগণের সেবা করেন যারা তারা করদাতাদের টাকায় এই চিপ ক্যান্টিন উপভোগ করবেন কেন? সাধারণ মানুষ রাস্তায়ঘাটে কি দামে খাবার খায় আইনপ্রণেতারা তা এবার উপলব্ধি করুন!