scorecardresearch
 

NAM-এর মঞ্চে আলাপ, তখন থেকেই মমতা-সনিয়া সম্পর্ক 'মধুর'

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুসম্পর্কের কথা সর্বজনবিদিত। আসলে রাজীবের আমলেই কংগ্রেসী রাজনীতিতে উত্থান হয় মমতার। সেই রেশ ধরে সনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও সুসম্পর্ক রেখে আসছেন মমতা।

Advertisement
রাজনীতির উর্দ্ধে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বরাবর মধুর দু'জনের রাজনীতির উর্দ্ধে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বরাবর মধুর দু'জনের
হাইলাইটস
  • মমতা দল ছাড়লেও সনিয়ার প্রতি কখনও অসৌজন্য দেখাননি
  • রাজনীতির ঊর্দ্ধে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বরাবর মধুর দু'জনের
  • সনিয়া-মমতার শেষ দেখা হয়েছিল ২০১৮ সালের ২৮ মার্চ দিল্লিতে

২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী জোট গড়তে চান। নিজের পরিকল্পনা একুশের ভার্চুয়াল ভাষণেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই লক্ষ্যেই যে তাঁর দিল্লিযাত্রা এমনটাই বলছে ওয়াকিবহাল মহল। এর মাঝেই সবার নজর বুধবার কংগ্রেস হাইকমান্ড সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকের দিকেই। মমতা যেমন বিরোধী ঐক্য গড়তে চাইছেন তেমনি রাজধানীতে খবর ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিতে চাইছেন কংগ্রেস সভানেত্রীও। তাই উগ্র তৃণমূল বিরোধিতা থেকে ইতিমধ্যে দলের নেতা-কর্মীদের সরে আসার বার্তা নাকি দিয়েছেন সনিয়া। প্রসঙ্গত  কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে দূরত্ব থাকলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সনিয়া গান্ধীর মধ্যে কিন্তু ব্যক্তিগত সম্পর্ক বরাবর অটুট রয়েছে। আর এটা ভুললেও চলবে না মমতার রাজনৈতিক জীবনের শুরুর দিকে রাজীব গান্ধীর প্রভাব কিন্তু অনসীকার্য। 

আরও পড়ুন: দিল্লিতে সাংসদদের নিয়ে তৎপর মমতা-অভিষেক, গরহাজির সেই শিশির-দিব্যেন্দু

 

 

 

 

 

 

 

রাজীব ও মমতার সম্পর্ক
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর  সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুসম্পর্কের কথা সর্বজনবিদিত। আসলে রাজীবের আমলেই কংগ্রেসী রাজনীতিতে উত্থান হয় মমতার।  মমতা যখন লোকসভা নির্বাচনে প্রথমবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তখন রাজীব কংগ্রেস সভাপতি। আরও কয়েক বছর বাদে মমতা এ রাজ্যে যুব কংগ্রেসের দায়িত্ব পান। রাজীব তখন দেশ চালাচ্ছেন । আর সে সময় থেকেই রাজীব গান্ধীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভাল। সেই রেশ ধরে সনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও সুসম্পর্ক রেখে আসছেন মমতা।

 

 

 

Advertisement

মোদীকে ঠেকাতে মমতাকে পাশে চাইছেন সনিয়া?
আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিন দশক আগে দিল্লিতে নির্জোট দেশগুলির (NAM) সম্মেলনের মঞ্চে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী স্ত্রী সনিয়ার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আসনে সে দিন পাশাপাশি বসেছিলেন সনিয়া-মমতা। সেই প্রথম আলাপ। ১৯৯৭ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করেন। মমতা দলত্যাগ করলেও তাঁর সঙ্গে মধুর সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন সনিয়া গান্ধী। মমতাকেও প্রকাশ্যে কখনও কংগ্রেস সভানেত্রীর নামে কটূক্তি করতে দেখা যায়নি। সৌজন্য বজায় রেখেছেন সনিয়াও। তবে  শুধু  সৌজন্য নয়, বিষয়টির রাজনৈতিক দিকও আছে। ২০১১ সালে বাংলার রাজনৈতিক পালা বদল ঘটেছিল তৃণমূল ও কংগ্রেস জোটের হাত ধরেই। তবে ইউপিএ থেকে বেরিয়ে আসার পর প্রথম কয়েক বছর কংগ্রেসের সঙ্গে মমতার সম্পর্ক মোটেই মধুর ছিল না। কিন্তু সেই সম্পর্ককে আবার আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে বরাবর উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে সনিয়াকে।  এমনিতে কংগ্রেস-তৃণমূল সম্পর্ক খারাপ হলেও সনিয়ার সঙ্গে মমতার সম্পর্কে উষ্ণতায় ভাটা পড়েনি৷ দু’জনেই একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল৷ শোনা যাচ্ছে ২০২৪ সালে নরেন্দ্র মোদীকে ঠেকাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আবার রাজনৈতিক সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চান সনিয়া গান্ধী৷ 

 

 

অতীতে মুখ খুলেছেন রাহুল
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, মতবিরোধ থাকলেও সনিয়ার নাম করে কখনও ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে দেখা যায়নি মমতাকে। রাহুল গান্ধীকে  এক-দু’বার নিশানা করেছেন। ‘বসন্তের কোকিল’ও বলেছেন এক বার। শোনা যায় কলকাতায় এআইসিসি সম্মেলনে সোমেন মিত্র এবং সীতারাম কেশরী গোষ্ঠীর বিরোধিতা করে মমতা যখন দল ছেড়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন, সে সময়ে তাঁকে দলে রেখে দিতে শেষ মুহূর্তে নিজে আসরে নেমেছিলেন সনিয়া। পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অস্কার ফার্নান্ডেজ, অজিত পাঁজা এবং মমতাকে ডেকে পাঠান তিনি। শোনা যায়, সেই সময়ে  শুধুমাত্র মমতাকেই নিজের ঘরে ডেকে নিয়েছিলেন। ভেতরের ঘরে ডেকে নিয়ে মমতাকে বুঝিয়ে বলেন, ‘‘এখনই ছেড়ো না। তোমাকে যাতে দলে রাখা যায় , আমি সেই চেষ্টাই করছি।’’ যদিও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। মমতার প্রতি সনিয়া দুর্বল হলেও রাহুল গান্ধীকে কিন্তু একাধিকবার দেখা গেছে আক্রমণাত্মক মেজাজে। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রে প্রথমবার মমতা পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী হন বিজেপির আমলেই। অতীতে এই নিয়ে বহুবার তৃণমূলনেত্রীকে নিশানা করেছেন ওয়ানাড়ের সাংসদ।  অন্যদিকে রাহুলকে 'বাচ্চা ছেলে' বলে কটাক্ষ করতে দেখা গেছে মমতাকে। বস্তুত, অতীতে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই দ্বিমত তৈরি হতে দেখা গেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

আরও পড়ুন: পাখির চোখ ত্রিপুরা! আগামী মাসে কোন প্ল্যান নিয়ে বিপ্লব গড়ে অভিষেক ?

 

 

গত কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহ
একুশের ভোটে তৃণমূলের বাংলা জয়ের ক্ষেত্রে ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের স্ট্র্যাটেজির অবদান রয়েছে তা মানতেই হবে। সেই পিকের সঙ্গেই নিজের বাসভবনে সম্প্রতি বৈঠক করেছেন রাহুল গান্ধী। হাজির ছিলেন বোন প্রিয়াঙ্কাও। তারপরেই গুঞ্জন ওঠে, তবে কি কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে সেতুবন্ধনের দায়িত্ব নিয়েছেন প্রশান্ত কিশোর? এদিকে মমতার দিল্লিযাত্রার আগের দিনই কংগ্রেসের ট্যুইটার হ্যান্ডলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তোপ সেই জল্পনা আরও বাড়িয়েছে। কংগ্রেস হাইকমান্ডের দিক থেকে এটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে সুস্পষ্ট বার্তা বলেই মনে করছেন অনেকে। দিল্লিতে  সনিয়ার সঙ্গে দেখা করার আগে মঙ্গলবার তিন কংগ্রেস নেতার সঙ্গে দেখা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন বর্ষীয়াণ কংগ্রেস নেতা কমল নাথ, রাজ্যসভায় কংগ্রেসের দলনেতা আনন্দ শর্মা এবং অভিষেক মনু সিংভি। এই আবহেই বুধবার বিকেলে মমতা-সনিয়া সাক্ষাৎ। তৃতীয়বার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর এই  প্রথমবার সেনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে বহু বার সনিয়ার বাংলোয় গিয়েছেন মমতা। সাধারণত উপহার হিসেবে বাংলার শাড়ি নিয়ে যান তিনি। এবার অবশ্য সঙ্গে কী থাকছে তা জানা যায়নি। সনিয়া-মমতার শেষ দেখা হয়েছিল গত লোকসভা ভোটের আগে  ২০১৮ সালের ২৮ মার্চ দিল্লিতে।  এবার দুই নেত্রীর মধ্যে আলোচনার কোনও নির্দিষ্ট বিষয় না থাকলেও, বিরোধী জোট তৈরি এবং ২০২৪-এর লড়াই নিয়ে কথা হবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

Advertisement


 

Advertisement