দেশজুড়ে ফের ঊর্ধ্বমুখী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। এই পরিস্থিতিতে কোভিড চিকিৎসায় পথ্যের ব্যবহার নিয়ে সতর্কবার্তা পাঠালেন বিশেষজ্ঞরা। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এবং ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনকে খোলা চিঠি চিঠি দিয়েছেন ৩২ জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। তাঁদের আবেদন, কোভিড চিকিৎসায় যে ওষুধ ও পদ্ধতিগুলির কার্যকারিতার প্রমাণিত হয়নি সেগুলি পরিহার করুন।
ভারতীয় চিকিৎসকদের কাছেও গিয়েছে ওই চিঠি। ৩২ জন চিকিৎসক ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞের মধ্যে কয়েক জন ভারতে কর্মরত। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার অনাবাসী ভারতীয় চিকিৎসকরাও রয়েছেন। তাঁরা উদ্বেগপ্রকাশ করেছেন, ২০২১ সালের ভুলের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে ২০২২ সালে। তাঁদের কথায়, ''করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। কিন্তু এখন করোনার চিকিৎসায় প্রামাণ্য নির্দেশিকা রয়েছে। তা সত্ত্বেও ২০২১ সালে ডেলটার ঢেউয়ে যে ভুলগুলির মৃত্যুর হার বাড়িয়েছিল তারই পুনরাবৃত্তি চলছে ২০২২ সালে। এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিনের মিশ্রণ, অ্যাজিথ্রোমাইসিন, ডক্সিসাইক্লিন, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন, ফ্যাভিপিরাভির, আইভারমেকটিনের মতো ওষুধের ব্যবহার। এই পথ্যগুলি করোনা প্রতিরোধে তেমন কার্যকর নয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রমাণিত।''
চিঠিতে বলা হয়েছে, এই ধরনের ওষুধের প্রয়োগে ক্ষতি হতে পারে। ডেল্টার সময় তা দেখা গিয়েছিল। ভারতে মিউকরমাইকোসিস এবং ব্রাজিলে অ্যাসপারজিলোসিসের মতো ছত্রাক সংক্রমণ হয়েছিল ভুল পথ্যের ব্যবহারে।
আরও পড়ুন- গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে হোটেলে স্বামী! লুকিয়ে পৌঁছালেন স্ত্রীও, তারপর...
পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিয়েও আপত্তি করেছেন চিকিৎসকরা। তাঁদের অভিমত, মৃদু সংক্রমণ থাকা রোগীদের সিটি স্ক্যান, ডি-ডাইমার এবং আইএল-৬ ল্যাব পরীক্ষা করানো হচ্ছে। কোনও ব্যাখ্যা ছাড়াই আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি করে নিচ্ছেন চিকিৎসকরা। এতে রোগী ও তাঁর পরিবারের উপরে খরচের বোঝা চাপাচ্ছে। শুধু তাই নয় করোনা আক্রান্ত নন এমন হাজার হাজার রোগীদের জীবনের ঝুঁকি বাড়ছে। তাঁদের শয্যা আটকে রাখছেন করোনা আক্রান্তরা।
সরকারের 'ভুল'র কথাও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে চিঠিতে। বলা হয়েছে, সরকারি নির্দেশিকার উপরে নির্ভর করেন দেশের স্বাস্থ্য কর্মীরা। দুর্ভাগ্যজনক সরকারি নির্দেশিকায় খরচসাপেক্ষ পরীক্ষা ও ওষুধের কথা বলা হয়েছে। অথচ এগুলি কোভিড চিকিৎসায় যে কার্যকর তার কোনও প্রমাণ নেই। সেই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নানা তথ্যে বিভ্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ ও স্বাস্থ্য কর্মীরা। সরকারের কাছে চিকিৎসকদের বার্তা, প্রামাণ্য তথ্যের ভিত্তিতে নির্দেশিকা দেওয়া হোক। ওমিক্রনের মোকাবিলায় মোনোক্লোনাল অ্য়ান্টিবডির ব্যবহার স্পষ্ট করে দিক সরকার। করোনা পরীক্ষা, নিভৃতবাস নিয়ে স্থানীয় ভাষায় নির্দেশিকা প্রকাশ করা হোক।
চিকিৎসকদের মতে, ককটেল, বিকল্প থেরাপি ও ওষুধ যেগুলির কার্যকারিতা বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত নয় সেগুলির ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া বন্ধ করুক সরকার। দেশকে স্বার্থে বন্ধ হোক তামাশা।
আরও পড়ুন- সংক্রমণ হার ঊর্ধ্বমুখী, বাংলা-সহ ৫ রাজ্যে দেশের অর্ধেক আক্রান্ত