ডামাডোলটা গত কয়েকদিন ধরেই চলছিল। যার জেরে সোমবারই উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াতকে দিল্লি তলব করেছিল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আর তার পরদিনই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিলেন ত্রিবেন্দ্র সিং। ইতিমধ্যে রাজ্যপাল বেবিরানি মৌর্যের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। শোনা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চাপেই শেষপর্যন্ত ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে হল ত্রিবেন্দ্রকে।
আগামী বছর বিধানসভা ভোট উত্তরাখণ্ডে। তার আগেই দলের অন্দরে তাঁর বিরুদ্ধে খারাপ পারফরমেন্সের অভিযোগ উঠছিল। তাঁকে নিয়ে দলের বিধায়কদের একাংশও অখুশি ছিলেন। এই আবহে সোমবার বিজেপির কেন্দ্রীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার সঙ্গে বৈঠকের পরেই ত্রিবেন্দ্রর পদত্যাগের জল্পনা আরও পোক্ত হতে থাকে। অবশেষে মঙ্গলবার বিকেলে তাতে শিলমোহর পড়ল। ইস্তফা দেওয়ার পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে রাওয়াত বলেন, 'দল আমাকে রাজ্যের মানুষের সেবা করার জন্য সুবর্ণসুযোগ দিয়েছিল। আমি কখনই ভাবিনি যে এই সুযোগ পাব। দল এখন অন্য কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।' শোনা যাচ্ছে বুধবারই রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করতে পারে বিজেপি নেতৃত্ব।
মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াতের ৪ বছর পূর্ণ হতে আর ৯দিন বাকি ছিল। তিনি চার বছর রাজ্য সামলালেও ৫ বার বাজেট পেশ করেছেন। উত্তরাখণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আর এই কৃতীত্ব রয়েছে এনডি ত্রিবারির। ত্রিবারি এবং ত্রিবেন্দ্র ছাড়া আর কেউ এই রাজ্যে ৫ বছর লাগাতার বাজেট পেশ করতে পারেননি। কেউ ৫ বছর পূর্ণও করতে পারেননি। কংগ্রেসের হরিশ রাওয়াতও মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নিজের কার্যকালের পুরো মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আবেগতাড়িত রাওয়াত বলেন, "আমি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছি। সংঘ থেকে বিজেপি সবখানেই প্রচার করেছি। আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ৪ বছর কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। দলের কাছে এজন্য ঋণি। ছোট এক গ্রামে আমার জন্ম। আমার বাবা প্রাক্তন সৈনিক ছিলেন। বিজেপি বলেই এটা সম্ভব হয়েছিল,এক ছোট গ্রামের খুব সাধাদেরণ পরিবারের থেকে আসা দলীয় কর্মীকে এত বড় সম্মান দেওয়া হয়েছিল। ৪ বছর আমাকে সেবা করার সুযোগ দিওয়া হয়েছে। সম্মিলিত ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবার সেই সুযোগ অন্য কাউকে দেওয়া হবে।" তবে কেন তিনি ইস্তফা দিলেন তা জানতে দিল্লি যেতে হবে বলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন ত্রিবেন্দ্র।
এদিকে বুধবার সকাল ১০টায় উত্তরাখ্ডের রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব বিধানমণ্ডলে বৈঠক ডেকেছে। সেখানে সব বিধায়ককে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে সেখানেই রাজ্যের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রীকে বেছে নেওয়া হবে। গত কয়েকদিন ধরেই উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে টালবাহানা চলছিল। ‘সরকার চালানোর ধরন’ নিয়ে নিজের দলেরই একটি অংশের বিধায়কদের প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন ত্রিবেন্দ্র। ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পর মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছিলেন রাওয়াত। কিন্তু সম্প্রতি রাওয়াতের কাজের ধরণ নিয়ে দলের কাছে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও বিধায়ক অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তারপরই বিজেপি নেতৃত্ব রদবদলের ভাবনা শুরু করে বলে খবর।