ফিরিঙ্গি কালীমন্দির
কলকাতার বউবাজারে বিপিন বিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিটে অবস্থিত এই ৫০০ বছরের প্রাচীন কালী মন্দির। জনশ্রুতি অনুযায়ী, মন্দিরটি অ্যান্টনি নামে একজন পর্তুগীজ সাহেব বা ফিরিঙ্গি এই মন্দিরে আসতেন। তাই এই মন্দিরটি ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি নামে পরিচিত।
ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি
ঠনঠনিয়ার সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির একটি প্রাচীন কালী মন্দির। জনশ্রুতি অনুসারে ১৭০৩ খ্রিস্টাব্দে উদয়নারায়ণ ব্রহ্মচারী নামে জনৈক তান্ত্রিক মাটি দিয়ে সিদ্ধেশ্বরী কালীমূর্তি গড়েন। ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে শঙ্কর ঘোষ নামে জনৈক ধনাঢ্য ব্যক্তি বর্তমান কালীমন্দির ও পুষ্পেশ্বর শিবের আটচালা মন্দির নির্মাণ করেন ও নিত্যপূজার ব্যয়ভার গ্রহণ করেন।
নৈহাটির বড়মা
নৈহাটির বড়মার পুজো ১০০ বছর পুরনো। আগে এই নামে ডাকা হত না তাঁকে। এর পিছনে রয়েছে বহু প্রাচীন ইতিহাস। এই বিশালাকার কালী প্রতিমায় প্রথমে ভবেশ চক্রবর্তীর নামে ভবেশ কালী হিসেবে পূজিত হত। পরে এই মূর্তির আয়তন দেখে বড়মা নাম দেওয়া হয়। স্থানীয়দের এখনও অনেকে ভবেশ কালী বলে থাকেন।
সেবকেশ্বরী কালীমন্দির
শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটকগামী ৩১ নং জাতীয় সড়কের ধারেই সেবক পাহাড়ের গায়ে অবস্থিত বিখ্যাত “সেবকেশ্বরী কালী মন্দির”। সেবকের মূল রাস্তা থেকে পাহাড়ের উচুতে ১০৭টি সিঁড়ি বেয়ে এই জাগ্রত কালী মন্দিরে প্রবেশ করতে হয়। সিঁড়ি ভেঙে ক্লান্ত ও অবসন্ন অবস্থায় আপনি যখন মায়ের মন্দিরে পৌঁছবেন তখন মায়ের শ্রীমুখ দর্শন করে আপনার শরীরের সমস্ত ক্লান্তিভাব দূর হয়ে যাবে এবং সারা শরীর ও মন পরম ভক্তিতে ভরে উঠবে।বর্তমানে এই মন্দিরে দিনদিন দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কালীপুজোর রাতে, শিলিগুড়ি, সিকিম, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, কালিম্পং সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীর ঢল নামে।
তারাপীঠ
বীরভূমের তারাপীঠ শাক্ত হিন্দুদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র তীর্থস্থান। এখানে তারা মায়ের আরাধনা হয়। এখানেই সাধনা করেছেন স্বয়ং সাধক বামা খ্যাপা। দীপাবলী এই মন্দিরের জাঁকজমক দেখার মতো। সেই পুজো দেখতে দেশ বিদেশ থেকেও বহু পর্যটক এখানে আসেন। রামপুরহাটের কাছে অবস্থিত একটি ক্ষুদ্র মন্দির নগরী। পাগলা সন্ন্যাসী” বামাক্ষ্যাপার লীলাক্ষেত্র এই শহর তন্ত্রের দেবী মা তারার মন্দির ও মন্দির-সংলগ্ন শ্মশানক্ষেত্রের জন্য বিখ্যাত ও একান্ন সতীপীঠের অন্যতম।
আদ্যাপীঠ
রামকৃষ্ণ পরমহংসের শিষ্য অন্নদা ঠাকুরের হাত ধরেই দক্ষিণেশ্বরের অদূরেই তৈরি হয় এই আদ্যাপীঠ। কোনও শাক্ত পীঠ নয়। আদ্যাশক্তি মহামায়ার বিগ্রহেই বিগ্রহেই ফুল-চন্দন পড়ে নিয়মিত। ভোগও হয়। তবে অন্য দিনের থেকে একটু আলাদা আয়োজন কালীপুজোর দিন। সেদিন মহাপুজোর আয়োজন হয় আদ্যা মন্দিরে। কার্তিক অমাবস্যার আঁধার কাটিয়ে, দীপাবলির আলোয় সেজে ওঠে গোটা আদ্যাপীঠ। আদ্যাশক্তি মহামায়া। দেবীর আরাধনায় তো নিজের জীবন উত্সর্গ করে ছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দিরে ভবতারিণীর সংসারেই, গোটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছিলেন কামারপুকুরের গদাধর চট্টোপাধ্যায়। জাগ্রত কালী মন্দির হিসেবে প্রসিদ্ধ।
দক্ষিণেশ্বর মন্দির
১৮৫৫ সালে স্বপ্নাদশ পেয়ে রানি রাসমণি নির্মাণ করেন দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি। উত্তর চব্বিশ পরগনার হুগলি নদীর তীরে দক্ষিণেশ্বরে অবস্থিত রামকৃষ্ণ পরমহংসের সাধনাস্থল এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন । এই মন্দিরে দেবী কালীকে “ভবতারিণী” রূপে পুজা করা হয়। সারা বছরই ভিড় থাকে। কালীপুজোর সময় আলাদা চেহারা। দিন-রাত আলোকঝলমলে থাকে। গঙ্গা পারে দাঁড়িয়ে এর সৌন্দর্য অতুলনীয়।
কালীঘাট মন্দির
দীপাবলির দিন কালীঘাট মন্দিরের চেহারা দেখলে চোখ ফেরানো যায় না। ভক্তি ও স্থাপত্যের পুরনো মিশেল। কালীঘাট মন্দির হল একটি শক্তি পীঠ। পুরাণ মতে এখানে সতীর ডান পায়ের চারটি আঙ্গুল পড়েছিল। তীর্থ স্থান হিসেবে এই মন্দিরের মাহাত্ম্য বহু যুগ ধরেই রয়েছে। তবে বর্তমান কালী মন্দিরটির বয়স দুশো বছর। দীপাবলির দিন কালীঘাটে গেলে অন্যরকম দেখতে পাবেন আবহাওয়া। মন্দির চত্বরের খাবারের দোকানগুলিতে অবশ্যই ঢুঁ দেবেন। চাইলে হস্তশিল্পের নানা জিনিসও কিনতে পারেন।
দেবী চৌধুরানী কালীমন্দির
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস আনন্দমঠে ভবানী পাঠক এবং দেবী চৌধুরানীর যে উল্লেখ রয়েছে, স্থানীয় মানুষরা মনে করেন, এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দেবী চৌধুরানী ও ভবানী পাঠক। দেবী চৌধুরানী সেই সময় ব্রিটিশ এবং জমিদারদের কাছ থেকে ধন সম্পদ লুট করে এই মন্দিরের গর্ভগৃহে রাখতেন লুঠ করে আনা সামগ্রীগুলি। এরকম আরো একটি জলপাইগুড়ির শিকারপুর চা বাগানে দেবী চৌধুরানী কালী মন্দির আছে।সেখানেও লুটপাট করার সামগ্রী গুলি রাখা হতো। পরে সেই সামগ্রী গুলো গরিবদের মধ্যে বিতরণ করে দিতেন দেবী চৌধুরানী। এই মন্দিরে মূলত মা কালীর (Maa Kali) উপাসনা করা হয়। মন্দির প্রাঙ্গণে রয়েছে Snake Tree এর মত বিশাল বটগাছ এবং সেখানেই রয়েছে দেবাদিদেব শিবের মন্দির। তন্ত্রের গুরু শিব এবং কালীর যুগলবন্দী, আকর্ষণীয় বটগাছ ও তার সর্প আকৃতির শিকর এই মন্দির কৌতুহল বাড়িয়ে দেয়।
হংসেশ্বরী কালীমন্দির
হুগলীর বাঁশবেড়িয়ায় দুশো বছরের পুরনো একটি বিখ্যাত কালী মন্দির। ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দে রাজা নৃসিংহদেব হংসেশ্বরী কালীমন্দিরের নির্মাণ শুরু করেন এবং তাঁর মৃত্যুর পর ১৮১৪ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর বিধবা পত্নী রাণী শঙ্করী মন্দির নির্মাণ সম্পন্ন করেন।
কঙ্কালীতলা মন্দির
বীরভূমের কঙ্কালীতলা মন্দিরও একটি সতী পীঠ। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, দক্ষযজ্ঞের পর এখানে দেবী পার্বতীর কঙ্কাল পড়েছিল। এখানে দেবীর নাম দেবগর্ভা ও ভৈরবের নাম রুরু। কোপাই নদীর তীরে অবস্থিত এই মন্দির বোলপুর শান্তিনিকেতন থেকে মাত্র নয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই মন্দিরের চারপাশের পরিবেশ অত্যন্ত সুন্দর। তুলনামূলক ভিড় কম। তবে মন অপার শান্তিতে ভরে যাবে।
ক্ষ্যাপা মায়ের মন্দির
পুরাতন কাটোয়ার মালোপাড়ার ক্ষ্যাপা মায়ের মন্দির তুলনামূলক নতুন হলেও এর নাম ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। রাজ্য ও বাইরে থেকেও লোকজন আসেন এখানে মায়ের দর্শনে। নানা রকম মিথ ও উপচারের গল্প আছে মন্দিরকে ঘিরে। ক্ষ্যাপা কালীতলা মন্দিরটি স্থাপিত হয় ১৯৭০ সালে। সারা বছরই এই মন্দিরে ভক্তদের আনাগোনা লেগে থাকে। তবে দীপাবলির সময় এই মন্দিরের চেহারা আরও যেন উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সেই সময় এই মন্দিরে দেবী দর্শন এবং তাঁর পুজো করা অত্যন্ত পুণ্যের বলে বিশ্বাস তাঁদের।