Bengali Noboborsho Year: ১৪৩১ না ১৪৩২? জেনে নিন এবছর পয়লা বৈশাখে কোন বাংলা নববর্ষ শুরু হবে

Bengali New Year: যে অঞ্চলগুলি সৌর বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করে, বৈশাখ মাসকে বছরের প্রথম মাস হিসাবে বিবেচনা করে, তাদের নতুন বছরটি এই মাসের প্রথম দিনেই উদযাপিত হয়।

Advertisement
১৪৩১ না ১৪৩২? জেনে নিন এবছর পয়লা বৈশাখে কোন বাংলা নববর্ষ শুরু হবে

বাঙালির বারো মাসে তের পার্বণ। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎসব হল নববর্ষ (Noboborsho)। কথায় বলে 'মর্নিং শোজ দ্য ডে'। তাই বছরের এই প্রথম দিনটা বিশেষ ভাবে উদযাপন করেন সকলে। যে অঞ্চলগুলি সৌর বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করে, বৈশাখ (Baisakh) মাসকে বছরের প্রথম মাস হিসাবে বিবেচনা করে, তাদের নতুন বছরটি এই মাসের প্রথম দিনেই উদযাপিত হয়। যদিও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে ও আলাদা রীতিতে নববর্ষ উদযাপিত করে।

বিশ্বব্যাপী বাঙালিরা নববর্ষের দিন একে অপরকে শুভেচ্ছা জানান। কোলাকুলি, পরস্পরকে আলিঙ্গন করার প্রথা বাংলা ভাষীদের যুগ যুগ ধরে। সকলে আবারও মেতে উঠতে পারবেন নববর্ষের আনন্দে। 

নববর্ষ উদযাপন 

উত্তর ও মধ্য ভারতে নতুন বছর বৈশাখী, আসামে রঙ্গালি বিহু, তামিলনাড়ুতে তামিল পুঠান্ডু, কেরালায় বিশু, ওড়িশায় বিশুব সংক্রান্তি এবং পশ্চিমবাংলায় পয়লা বৈশাখ নামে পরিচিত নববর্ষ উৎসব। বাঙালি ব্যবসায়ীরা নতুন আর্থিক বছরের সূচনা করেন এদিন লক্ষ্মী-গণেশ পুজো ও হালখাতার মাধ্যমে। খাওয়া দাওয়া, আড্ডা, মিষ্টিমুখ, নতুন জামাকাপড় পরা এই সবের মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করে নেন বাঙালিরা। 

 

Bengali New Year

ঋতুকালীন উৎসব

সৌর পঞ্জিকা অনুসারে বাংলা বারো মাস অনেক কাল আগে থেকেই পালিত হত। এই সৌর পঞ্জিকার শুরু হত গ্রেগরীয় পঞ্জিকায় এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে। সৌর বছরের প্রথম দিন আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, মণিপুর, নেপাল, ওড়িষা, পঞ্জাব, তামিলনাড়ু এবং ত্রিপুরার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অনেক আগে থেকেই পালিত হত। এখন যেমন নববর্ষ নতুন বছরের সূচনায় পালিত একটি সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। এক সময় এটা ছিল না। তখন নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ আর্তব উৎসব তথা ঋতুকালীন উৎসব হিসবে পালিত হত। তখন এর মূল তাৎপর্য ছিল কৃষিকাজ, কারণ প্রাযুক্তিক প্রয়োগের যুগ শুরু না হওয়া পর্যন্ত কৃষকদের ঋতুর উপরই নির্ভর করতে হত।

শশাঙ্ক- আকবরের কৃতিত্ব

কয়েকজন ঐতিহাসিক বাংলা দিনপঞ্জি উদ্ভবের কৃতিত্ব দেন সপ্তম শতকের রাজা শশাঙ্কের উপর। পরবর্তীকালে মুঘল সম্রাট আকবর এটিকে রাজস্ব বা কর আদায়ের উদ্দেশ্যে পরিবর্তিত করেন। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে 'বঙ্গাব্দ' বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়। আকবরের সময়কাল থেকেই পয়লা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয়। তখন প্রত্যেককে বাংলা চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে বাধ্য থাকত। এরপর দিন অর্থাৎ বৈশাখের প্রথম দিন ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টি খাইয়ে আপ্যায়ন করতেন। এ উপলক্ষে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হত। এই উৎসবটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়, যার রূপ পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে এই পর্যায়ে এসেছে। 

Advertisement

তখনকার সময় এই দিনের প্রধান ঘটনা ছিল একটি হালখাতা তৈরি করা। হালখাতা বলতে একটি নতুন হিসাব বই বোঝানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে হালখাতা হল বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। গ্রাম, শহর বা বাণিজ্যিক এলাকা, সকল স্থানেই পুরনো বছরের হিসাব বই বন্ধ করে নতুন হিসাব বই খোলা হয়। হালখাতার দিনে দোকানদাররা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করে থাকে। এই প্রথাটি এখনও অনেকাংশে প্রচলিত আছে, বিশেষত স্বর্ণের দোকানে।

 

Bengali New Year

কলকাতার নববর্ষ উদযাপন 

ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত কলকাতা পয়লা বৈশাখ উদযাপনে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। নববর্ষারম্ভ উপলক্ষে শহরের বিভিন্ন পাড়ার অলিতে গলিতে নানা সংগঠনের উদ্যোগে প্রভাতফেরি আয়োজিত হয়। বিগত বছরের চৈত্র মাসে শহরের অধিকাংশ দোকানে কেনার উপর দেওয়া হয়ে থাকে বিশেষ ছাড়, যার প্রচলিত কথ্য নাম 'চৈত্র সেল'। তাই পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে এবং এই ছাড়ের সুবিধা গ্রহণ করতে অর্থনৈতিক অবস্থা নির্বিশেষে কলকাতার সমস্ত মানুষ একমাস ধরে নতুন জামাকাপড়, ইত্যাদি কেনাকাটা করেন।

 

bengali rituals

পয়লা বৈশাখের দিন উল্লেখযোগ্য ভিড় চোখে পড়ে বিভিন্ন মন্দিরে। সেখানে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ভোর থেকে পুজো দেন। ব্যবসায়ী ছাড়াও বহু গৃহস্থও পরিবারের মঙ্গল কামনা করে ঈশ্বরের আশীর্বাদ প্রার্থনা করতে বিভিন্ন মন্দিরে পুজো দিতে যান। এদিন বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পোশাক হিসাবে নতুন ধুতি-পঞ্জাবি এবং শাড়ি পরার রীতি প্রচলিত।

নববর্ষের তারিখ 

গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে, বাংলা নববর্ষ সাধারণত ১৪ বা ১৫ এপ্রিল পড়ে। বাংলা সৌর ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস বৈশাখের প্রথম দিনটিকে নববর্ষ, পহেলা বৈশাখ এবং পাহেলা বৈশাখের মতো বিভিন্ন নামে ভারতের অংশ ডাকা হয়। এই বছর ১৪৩২-এ পা দেব আমরা। এই বছর ১৪৩২-এ পা দেব আমরা। এবার ইংরাজি ১৫ এপ্রিল, মঙ্গলবার পড়েছে ১ বৈশাখ। সুতরাং চৈত্র সংক্রান্তি পালিত হবে তার আগের দিন অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল।

 

POST A COMMENT
Advertisement