বাঙালির বারো মাসে তের পার্বণ। কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে বাঙালির ঘরে ঘরে অনুষ্ঠিত হয় ভাইফোঁটা। এটি ভাই-বোনের অটুট বন্ধনের কামনায় পালিত একটি পবিত্র উৎসব। ভাইফোঁটার দিন বোনেরা তাদের ভাই -দাদাদের কপালে চন্দন-কাজল- দইয়ের ফোঁটা পরিয়ে মন্ত্রোচ্চারণ করে তাদের মঙ্গল কামনা করেন।
ভাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনার উদ্দেশ্যে বোনেরা এই রীতি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন। এই উৎসবকে আবার যমদ্বিতীয়াও বলে। কথিত আছে, এই দিন মৃত্যুর দেবতা যম, তার বোন যমুনার হাতে ফোঁটা নিয়েছিলেন। অন্যদিকে শোনা যায়, নরকাসুর নামে এক দৈত্যকে বধ করার পর কৃষ্ণ তাঁর বোন সুভদ্রার কাছে যখন এসেছিলেন, তখন সুভদ্রা তাঁর কপালে ফোঁটা দিয়ে তাকে মিষ্টি খেতে দেন। সেই থেকেই ভাইফোঁটা উৎসবের প্রচলন হয়।
মূলত কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় দিনে ভাইফোঁটা উদযাপিত হয়। তবে অনেক বাড়িতে রয়েছে কিছু নিয়মভেদ। তাই এটি শুক্লপক্ষের প্রতিপদের দিনও বিভিন্ন জায়গায় উদযাপিত হয় ভাইফোঁটা।
ভাইফোঁটা ২০২৩ দিনক্ষণ, শুভ সময়
* ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া - ১৫ নভেম্বর (২৮ কার্তিক), বুধবার।
* প্রতিপদ শুরু - ১৩ নভেম্বর (২৬ কার্তিক), সোমবার, ঘ ২/৩২/২০-এ।
* প্রতিপদ শেষ - ১৪ নভেম্বর (২৭ কার্তিক) মঙ্গলবার, ঘ ২/২৮/৩০-এ।
* দ্বিতীয় শুরু - ১৪ নভেম্বর (২৭ কার্তিক) মঙ্গলবার, ঘ ২/২৮/৩১-এ।
* দ্বিতীয়া শেষ - ১৫ নভেম্বর (২৮ কার্তিক), বুধবার, ঘ ১/৫৫/ ১৬-এ।
ভাইফোঁটার মন্ত্র
"দ্বিতীয়ায় দিয়া ফোঁটা, তৃতীয়ায় দিয়া নিতা,
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দই আমার ভাইকে ফোঁটা,
ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।"
এই উৎসব বাঙালিদের কাছে ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া বা ভাই ফোঁটা নামে পরিচিত হলেও, দেশের অন্যান্য রাজ্যে এর রয়েছে ভিন্ন নাম। গোয়া, মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকে এই পার্বণ 'ভাইবিজ' নামে পালিত হয়। ভারতের পশ্চিমাংশে এই উৎসব ‘ভাই দুজ’ নামে পালিত হয়। পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে ও নেপালে এই উৎসব আবার পরিচিত ভাইটিকা নামে। বিজয়াদশমীর পর এটিই সবচেয়ে বড় উৎসব সেখানে।