Durgapuja 2025 Bhetaguri Laldurga: দুর্গাপুজোর উৎসবে যখন রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় থিমের লড়াই, আলোয় মোড়া মণ্ডপ আর ডিজে-র বাজনায় শহর গর্জে উঠছে, ঠিক তখনই এক অন্য ছবি দেখা যায় কোচবিহারের দিনহাটা-১ ব্লকের ভেটাগুড়ি চৌপথি বারোয়ারি দুর্গা মন্দিরে। চাঁদা নয়, থিমও নয় এই পুজোর আসল আকর্ষণ বিশ্বাস আর ঐতিহ্য। শতাব্দী পেরিয়েও নিয়ম পালটে যায়নি একটুও।
এখানে নেই আলোঝলমলে থিম, নেই চাঁদার জাঁকজমক। আছে শুধু এক গভীর বিশ্বাস, নিরবিচারে রক্ষিত নিয়ম আর অটুট ঐতিহ্য। এখানকার দেবী মায়ের রূপই আলাদা। সেজে ওঠেন লাল বর্ণে। স্থানীয়রা মনে করেন, এই লাল রূপ শক্তি, সাহস ও সমৃদ্ধির প্রতীক।
রাজ আমল থেকে শুরু, আজও চলছে একই নিয়মে
এই পুজোর ইতিহাস জড়িয়ে কোচবিহারের মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণের সঙ্গে। কথিত আছে, ১৭৮৩ থেকে ১৮৩৬। যখন ভেটাগুড়িতে রাজধানী স্থাপন করেছিলেন রাজা, তখনই শুরু হয়েছিল এই লাল দুর্গার আরাধনা।
সেই সময় বড়োদেবীর আদলে প্রতিমা তৈরি হত। রাজ আমলে যেমন নিয়ম ছিল, সেই ধারা আজও বদলায়নি। পঞ্চমী থেকে দশমী, প্রতিদিন মন্দিরে থাকেন দুই জন দেউরি। এই দায়িত্বও চলে আসছে বংশপরম্পরায়।
"আমরা রাজ আমলের নিয়মেই পুজো করি"
এই পুজোর অন্যতম প্রাণপুরুষ প্রবীণ দেউরি হরিপদ দেউরি বলেন, “আমরা কয়েক প্রজন্ম ধরে এই পুজোয় যুক্ত। যেমন ভাবে রাজ আমলে পুজো হত, আজও তেমন ভাবেই মাকে আরাধনা করি।” পুজো কমিটির সম্পাদক শিবানন্দ রায় জানান, “এই পুজোর নির্দিষ্ট শুরু তারিখ জানা নেই। তবে শোনা যায়, রাজবাড়ি প্রতিষ্ঠার পরপরই এই বারোয়ারি পুজোর সূচনা হয়।”
চাঁদা নয়, ভক্তদের দানেই পুজোর আয়োজন
ভেটাগুড়ির লাল দুর্গার পুজোয় চাঁদা তোলা হয় না। থিম বা বাহুল্য নয়, আচার আর বিশ্বাসই এখানে মুখ্য। ভক্তদের দেওয়া দানেই চলে সমস্ত আয়োজন। ভক্তদের কথায়, “এই পুজো শুধু উৎসব নয়, ঐতিহ্যের অংশ।”
একাদশীতে বিসর্জন, অষ্টমীতে কুমড়োবলি
এই পুজোর আচার-অনুষ্ঠানেও রয়েছে আলাদা বিশেষত্ব। দশমীর বদলে এখানে বিসর্জন হয় একাদশীতে। অষ্টমীতে অনুষ্ঠিত হয় ‘কুমড়ো বলি’, যা অসুর বিনাশের প্রতীক। নবমীর দিন তৈরি হয় বিশেষ ভোগ, যা গ্রামের মানুষ মিলে রান্না করেন সমবেতভাবে।
ভেটাগুড়ির লাল দুর্গার পুজো আজ আর শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, একটি ঐতিহ্যের ধারক। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে স্থানীয় মানুষ, দেউরি, শিল্পীরা একে বাঁচিয়ে রেখেছেন। সময় বদলেছে, প্রযুক্তি বদলেছে, উৎসব পালনের ধরনও বদলেছে। কিন্তু ভেটাগুড়ির পুজো আজও আছে তার আদি রূপে।