
'আজ আমাদের ন্যাড়া পোড়া কাল আমাদের দোল, পূর্ণিমাতে চাঁদ উঠেছে বল হরি বোল।'এই মজার ছড়া জানেন না এরকম খুব কম বাঙালিই আছেন। বাঙালির বারো মাসে তের পার্বণ। তবে অনেক উৎসবের মধ্যে সকলের পছন্দের তালিকায় প্রথমের দিকেই থাকে দোলযাত্রা (Dolyatra) বা হোলি (Holi)। আর দোলযাত্রার ঠিক আগের দিন সকলে মেতে ওঠেন ন্যাড়া পোড়া (Nyara Pora) রীতিতে। অনেকে ন্যাড়া পোড়াকে বুড়ির ঘর পোড়ানো বলে।
ন্যাড়া পোড়া রীতি
এই ন্যাড়া পোড়ার হল অশুভ শক্তির বিনাশ। এদিন শুকনো ডাল, কাঠ এবং শুকনো পাতা জোগাড় করে সেগুলোকে স্তূপাকার করে ফাগুন পূর্ণিমার সন্ধ্যায় পোড়ানো হয়। যুগ যুগ ধরে এই রীতি আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে। তাই ন্যাড়া পোড়ার পর সবাই সেই ছাই শরীর ও কপালে ছোঁয়ায়। বিশ্বাস করা হয় যে, এতে অশুভ শক্তি ছায়া জীবনের ওপর পড়ে না। ন্যাড়া পোড়া হল মন্দের উপর ভালর জয়ের প্রতীক।
হোলিকা দহন রীতি
যদিও বাংলার বাইরে এই রীতি হোলিকা দহন নামে পরিচিত। উদ্দেশ্য ও কারণ মূলত একই হলেও রীতি পালনের ধরণে স্থানভেদে পার্থক্য আছে। হোলির ঠিক আট দিন আগে কোনও শুভ কাজ করা উচিত না। সেই সময়কালকে হোলিকা দহন বলা হয়। তবে এই রীতি মূলত উত্তর ও দক্ষিণ ভারত,নেপাল কিংবা পশ্চিম বাংলার বাইরে প্রচলিত। বাঙালিদের অনেকটা একই ধরণের উৎসব পালনের রীতি আছে যাকে ন্যাড়া পোড়া বলে। তবে সেটি হয় দোলযাত্রার আগের দিন। কোনও অশুভ শক্তিকে হারিয়ে, শুভ শক্তি জয়ের উদযাপন হল এই রীতির মূল উদ্দেশ্য।
হোলিকা দহনের গুরুত্ব
প্রহ্লাদকে বাঁচাতে বিষ্ণুর হোলিকা বধকে উদযাপন করা হয় হোলিকা দহনের মাধ্যমে। হোলির আগের দিন কোনও খোলা মাঠ বা স্থানে কাঠ ও জ্বালানি মজুদ করে সাজানো হয়। তার উপর একটি পুত্তলি রাখা হয়, যা হোলিকার প্রতীকী রূপ। এই হোলিকা প্রহ্লাদকে ছলনা করে আগুনে পোড়াতে চেয়েছিলেন। অনেকে এই সময় নিজেদের বাড়ি রঙ করেন ও সাজান। সেই সঙ্গে বিভিন্ন খাবার, বিশেষত গুজিয়া, মালপোয়ার মতো মিষ্টির ব্যবস্থা করা হয়। মনে করা হয় সমস্ত নেতিবাচক শক্তি এই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।
দোল ও হোলির তারিখ
এই বছর দোলযাত্রা পড়েছে ২৫ মার্চ (বাংলায় ১০ চৈত্র)। এই দিনটিকে বসন্ত উৎসবও বলা হয়। হোলি সাধারণত দোলের পরের দিন পালিত হয়। এবছর হোলি উৎসব পড়েছে ২৬ মার্চ।
দোল পূর্ণিমার সময়
২৪ মার্চ ঘ ৯/৪২/১১ থেকে ২৫ মার্চ ঘ ১১/৪৭/২২ মিনিট পর্যন্ত এই বছর পূর্ণিমা থাকবে।
হোলিকা দহন কখন?
হোলিকা দহন উৎসব হয় গোটা উত্তর ভারত জুড়ে। মনের কালিমাকে দূরে সরিয়ে আলোর উজ্জ্বলতায় জীবনকে ভরিয়ে তোলার প্রতিশ্রুতির জন্যে বিভিন্ন জায়গায় পালিত হয়। এবছর হোলিকা দহনের সবচেয়ে শুভ তিথি, ২৪ মার্চ রাত ১১:১৩ থেকে ১১:৫৩ পর্যন্ত।