
গণেশ (Ganesh) হলেন হিন্দুধর্মের সর্বাধিক পরিচিত ও সর্বাধিক পূজিত দেবতাদের অন্যতম। সব দেব-দেবীর পুজো শুরু হয় গণেশের মন্ত্রোচ্চারণ করেই। সনাতন ধর্মে ভগবান গণেশের গুরুত্ব অনেক। শিব ও পার্বতী পুত্র গণেশকে, হিন্দুদের সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের দেবতা বলে মনে করা হয়। সিদ্ধিদাতা গণেশের জন্মোৎসব গণেশ চতুর্থী (Ganesh Chaturthi) নামে পরিচিত। ভাদ্র- আশ্বিন মাসের চতুর্থী তিথির শুক্লপক্ষে সাধারণত পালিত হয় এই উৎসব (Ganesh Chaturthi Festival)।
'গণেশ' নামটি একটি সংস্কৃত শব্দবন্ধ। গণ ও ঈশ শব্দদুটির সন্ধির মাধ্যমে এই শব্দটির উৎপত্তি। গণ শব্দের অর্থ একটি গোষ্ঠী, সমষ্টি বা বিষয়শ্রেণি এবং ঈশ শব্দের অর্থ ঈশ্বর বা প্রভু। গণপতির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় প্রাচীনতম হিন্দু ধর্মগ্রন্থ ঋগ্বেদে। তিনি গণপতি, বিঘ্নেশ্বর, বিনায়ক, গজপতি, একদন্ত ইত্যাদি নামেও পরিচিত।
গণেশ মহোৎসব (Ganesh Mahotsav)
গণেশ চতুর্থীতে প্রায় সারা দেশজুড়ে মহাসমারোহে চলে উৎযাপন। এই বিশেষ উৎসবকে গণেশ মহোৎসবও বলা হয়। প্রায় দশ দিন ধরে চলে গণেশ চতুর্থী উৎসব। এগারোতম দিনে গণেশ মূর্তির নিরঞ্জন করা হয়। পুজোর এই শেষ দিনকে বলা হয় অনন্ত চতুর্দশী। আগে মূলত ব্যবসায়ীরা গণেশ চতুর্থী পালন করতেন। তবে বর্তমানে বেশিরভাগ বাড়িতেও আয়োজন করা হয় গণেশ বন্দনার।
গণেশ চতুর্থী ২০২৫ দিনক্ষণ (Ganesh Chaturthi Date And Time)
* এই বছর গণেশ চতুর্থী পড়েছে ২৭ সেপ্টেম্বর (১০ ভাদ্র ), বুধবার।
* ১৭ সেপ্টেম্বর বেলা ১২/৫৩ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুর ২/২৮ মিনিট পর্যন্ত থাকবে চতুর্থী তিনি।
* গণেশ চতুর্থীর অমৃতযোগ- দিবা ঘ ৭/২ মধ্যে ও ৯/৩১ গতে ১১/১০ মধ্যে ও ৩/১৮ গতে ৪/৫৭ মধ্যে এবং রাত্রি ঘ ৬/৩৩ গতে ৮/৫৩ মধ্যে ও ১/৩১ গতে ৫/২০ মধ্যে।
* গণেশ চতুর্থীর মাহেন্দ্রযোগ- দুপুর ১/৩৯ গতে ৩/১৮ মধ্যে এবং রাত্রি ৮/৫৩ গতে ১০/২৫ মধ্যে।
গণেশ পুজো ও মূর্তি স্থাপনের নিয়মকানুন (Ganesh Puja Rules)
* গণেশ চতুর্থীর দিন গণপতির মূর্তি সোনা, রুপো এবং তামার জলে স্নান করাতে হয়।
* পূর্ব অথবা উত্তর -পূর্ব কোণে গণেশ মূর্তি স্থাপনের নিয়ম। ভুল করেও দক্ষিণ বা দক্ষিণ - পশ্চিমে মূর্তি স্থাপন করবেন না।
* দরজার দিকে মুখ করে গণেশের মূর্তি স্থাপন করা শুভ। কারণ মনে করা হয়, তিনি মঙ্গলমুখী। সংসারে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্য নিয়ে আসে গণপতি।
* তবে খেয়াল রাখতে হবে, গণেশ মূর্তি যেই জায়গায় স্থাপন করবেন, সেখানটা জেন ফাঁকা না থাকে। অর্থাৎ মূর্তির পিছনে দেওয়াল থাকা বাঞ্চনীয়।
* কিছু স্থানে গণেশ মূর্তি রাখা একেবারেই শুভ নয়। বেডরুম, গ্যারেজ, সিঁড়ির নীচে, বার্থরুম বা লন্ড্রি অঞ্চল এই জায়গাগুলোতে গণেশ মূর্তি রাখলে হিতে বিপরীত হয়। সিঁড়ির নীচে, বার্থরুমে নেতিবাচক শক্তি থাকে। সেইজন্যেই এর আশেপাশেও মূর্তি রাখলে তা অশুভ।
* কখনই একই স্থানে দুটি গণেশ মূর্তি রাখবেন না। বাস্তু মতে, এতে দুই শক্তির নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তাই বাড়িতে আলাদা আলাদা স্থানে গণেশ মূর্তি রাখাই শ্রেয়।
* মনে করা হয়, বাম দিকে শুঁড় রয়েছে, এরকম গণেশের মূর্তি বাড়িতে রাখা সবচেয়ে শুভ। ডান দিকে শুঁড় রয়েছে এরকম মূর্তির থেকে বাম দিকে শুঁড় থাকা গণেশ, শীঘ্র প্রসন্ন হন।
* পুজোর সময় ২১ টি মোদক এবং ২১ টি দূর্বা দিয়ে গণেশের যে কোনও ১০ নাম জপ করুন। তাহলে বাড়িতে সুখ -শান্তি বজায় থাকবে।
গণেশের প্রিয় কী? (Ganesha Favourite Things)
শাস্ত্র মতে গণপতি সবচেয়ে সন্তুষ্ট হন সিঁদুর, লাল চন্দন, লাল ফুল ও দূর্বাতে। গণেশ চতুর্থীতে তো বটেই, এছাড়াও প্রতি বুধবার, এই সামগ্রীগুলি দিয়ে নিষ্ঠা করে গণেশ পুজো করলে ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়। বাড়িতে বিরাজ করে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি।
গণেশ পুজোর মন্ত্র (Ganesh Puja Mantra)
একদন্তং মহাকায়ং লম্বোদর গজাননম। বিঘ্নবিনাশকং দেবং হেরম্বং পনমাম্যহম।। অর্থাৎ, যিনি একদন্ত, মহাকায়, লম্বোদর, গজানন এবং বিঘ্ননাশকারী সেই হেরম্বদেবকে আমি প্রণাম করি।
গণেশের বীজ মন্ত্র (Ganesh Beej Mantra)
ওঁ গণ গণপতয়ে নমঃ ।
গণেশের ১০৮ নাম (Ganesha 108 Names)
গণদক্ষ, গণপতি, গৌরীসূত, লম্বকর্ণ, লম্বোদর, মহাবল, মহা গণপতি, মহেশ্বর, মঙ্গলমূর্তি, মূষকবাহন, বালগণপতি, ভালচন্দ্র, বুদ্ধিনাথ, ধূম্রবর্ণ, একক্ষর, একদন্ত, গজকর্ণ, গজানন, গজবক্র, গজবক্ত্র, দেবাদেব, দেবান্তক নাশকারী, দেবব্রত, দেবেন্দ্রশিক, ধার্মিক, দুর্জয়, দ্বৈমাতুর, একদংষ্ট্র, ঈশানপুত্র, গদাধর, অমিত, অনন্তচিদারুপম, অবনীশ, অবিঘ্ন, ভীম, ভূপতি, ভুবনপতি, বুদ্ধিপ্রিয়, বুদ্ধিবিধাতা, চতুর্ভুজ, নিধিশ্বরম, প্রথমেশ্বর, শুভকর্ণ, শুভম, সিদ্ধিদাতা, সিদ্ধিবিনায়ক, সুরেশ্বরম, বক্রতুন্ড, অখুরথ, অলম্পতা, ক্ষিপ্র, মনোময়, মৃত্যুঞ্জয়, মুধকারম, মুক্তিদায়ী, নাদপ্রতিষ্ঠা, নমস্তেতু, নন্দন, সিদ্ধন্ত, পীতাম্বর, গণাধিক্ষণ, গুণিন, হরিদ্রা, হেরম্ব, কপিল, কবীশ, কীর্তি, কৃপাকর, কৃষ্ণপিঙ্গল, ক্ষেমঙ্করী, বরদবিনায়ক, বীরগণপতি, বিদ্যাবিধি, বিঘ্নহর, বিঘ্নহর্তা, বিঘ্নবিনাশন, বিঘ্নরাজ, বিঘ্নরাজেন্দ্র, বিঘ্নবিনাশয়, বিঘ্নেশ্বর, শ্বেত, সিদ্ধিপ্রিয়, স্কন্দপূর্বজ, সুমুখ, স্বরূপ, তরুঁ, উদ্দণ্ড, উমাপুত্র, বরগণপতি, বরপ্রদ, প্রমোদ, পুরুষ, রক্ত, রুদ্রপ্রিয়, সর্বদেবতমান, সর্বসিদ্ধান্ত, সর্বাত্মন, ওঙ্কার, শশীবর্ণম, শুভগুণকানন, যোগাধীপ, যশস্বিন, যশস্কর, যজ্ঞকায়, বিশ্বরাজ, বিকট, বিনায়ক, বিশ্বমুখ