সনাতন ধর্মে ভগবান গণেশের (Ganesh) গুরুত্ব অনেক। শিব ও পার্বতী পুত্র গণেশকে, হিন্দুদের সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের দেবতা মনে করা হয়। গণেশের (Ganpati) জন্মোৎসব গণেশ চতুর্থী (Ganesh Chaturthi) নামে পরিচিত। ভাদ্রপদ মাসের চতুর্থী তিথির শুক্লপক্ষে সাধারণত পালিত হয় এই উৎসব। এই বছর গণেশ চতুর্থী পড়েছে ১৯ সেপ্টেম্বর।
গণেশ চতুর্থীতে প্রায় সারা দেশজুড়ে মহাসমারোহে চলে উৎযাপন। মহারাষ্ট্রের গণেশ চতুর্থী উদযাপন, পশ্চিমবাংলার দুর্গাপুজোর মতোই বড়। এছাড়াও গোয়া, কর্ণাটক, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, ওড়িশা, গুজরাট, ছত্তিশগড়, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলিতেও বিশেষ উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে পালিত হয়। এমনকি শ্রীলঙ্কায় তামিল হিন্দুরাও এই উৎসব পালন করেন।
গণপতিকে ভালোবেসে ভক্তরা একাধিক ভোগ উৎসর্গ করেন। তবে তার মধ্যে গণেশ চতুর্থীর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কিছু প্রচলিত ভোগ। এগুলো গণেশের অত্যন্ত প্রিয়। নিষ্ঠা করে এই ভোগ উৎসর্গ করলে সিদ্ধিদাতা সন্তুষ্ট হন।
মোদক
গণেশের আরেক নাম মোদকপ্রিয়া। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক পৌরাণিক কাহিনি। একবার স্বর্গে, দেবী পার্বতীকে একটি মোদক উপহার স্বরূপ পান। কিন্তু কে খাবে সেই একটি মোদক এই নিয়ে কার্তিক ও গণেশের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। শেষমেশ দেবীর বলেন, যে পৃথিবী তিনবার প্রদক্ষিণ করেন আগে আসবে, সে মোদকটি পাবে। কার্তিক গোটা প্রদক্ষিণ করতে শুরু করেন। অন্যদিকে গণেশ, পার্বতীকে প্রদক্ষিণ করেন বলেন 'তুমিই আমার পৃথিবী'। সন্তুষ্ট হয়ে দেবী তার হাতেই মোদকটি দেন। নারকেলের মোদকই মূলত গণেশকে উৎসর্গ করা হয়। তবে ক্ষিরের মোদকও যথেষ্ট জনপ্রিয়। আজকাল আরও রকমারি মোদক পাওয়া যায় দোকানে। যেমন চকোলেট সহ আরও একাধিক ফ্লেবারের মোদক।
লাড্ডু
লাড্ডু গণেশের অত্যন্ত প্রিয় খাবার। বোঁদের ও বেসনের লাড্ডু মূলত সেই প্রিয় তালিকায় সবার প্রথমে আসে।
পায়েস
গোবিন্দভোগ চালের পায়েস গণেশের পছন্দ। পুরাণ মতে, দেবী পার্বতী পরমান্ন রেঁধে দিতেন মহাদেবকে। আর তখন গণেশও খেতেন সেখান থেকে। সেজন্যে গণেশ চতুর্থীর ভোগে এটি অবশ্যই রাখবেন।
মুড়ির মোয়া
গণেশ সিদ্ধিদাতা। দরিদ্রদের তিনি ভালোবাসেন, তাদের প্রার্থনায় সাড়া দেন। তাই গুড় ও মুড়ি দিয়ে তৈরি মোয়া অর্থাৎ মুড়ির মোয়া তার অত্যন্ত পছন্দের।
নারকেল
নারকেলকে যে কোনও পুজোর জন্যই শুভ বলে মনে করা হয়। গণেশ পুজোতেও নারকেল উৎসর্গ করা হয়। মনে করা হয়, গণেশ চতুর্থীর দশ দিনের মধ্যে অন্তত একদিন এই ফল ভোগ হিসাবে দেওয়া ভাল।
কলা
সনাতন ধর্মে কলাকে স্বাস্থ্যকর নৈবেদ্য দিহাবে মনে করা হয়। গণেশ পুজোতেও কলা ভোগ হিসাবে দেওয়ার চল আছ। মনে করা হয় এটি গণপতির অত্যন্ত প্রিয়।
হলুদ রঙের মিষ্টি
হলুদ রঙ গণেশের সবচেয়ে প্রিয়। তাই এদিন যে কোনও হলুদ রঙের মিষ্টি সিদ্ধিদাতাকে উৎসর্গ করা শুভ।
গণেশ চতুর্থী ২০২৩ দিনক্ষণ (When Is Ganesh Chaturthi?)
* এই বছর গণেশ চতুর্থী পড়েছে ১৯ সেপ্টেম্বর (১ আশ্বিন), মঙ্গলবার।
* ১৮ সেপ্টেম্বর ঘ ১০/৩০/২২ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর ঘ ১০/৫৪/৫৫ পর্যন্ত থাকবে চতুর্থী তিনি।
* গণেশ চতুর্থীর অমৃতযোগ- দিবা ঘ ৬/২১ মধ্যে ও ৭/৮ গতে ১১/০ মধ্যে এবং রাত্রি ঘ ৭/৪১ গতে ৮/৩০ মধ্যে ও ৯/২০ গতে ১১/৪৮ মধ্যে ও ১/২৭ গতে ৩/৬ মধ্যে ও ৪/৪৫ গতে ৫/২৮ মধ্যে।
* গণেশ চতুর্থীর মাহেন্দ্রযোগ- রাত্রি ঘ ৭/৪১ মধ্যে।