
কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজো হিন্দু বাঙালির ধর্মীয় মানসে রাজসিক দেবী দুর্গা (পার্বতী) ও তামসিক কালীর পরেই স্থান সত্ত্বগুণের দেবী জগদ্ধাত্রীর (Devi Jagaddhatri)। দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো, কালী পুজো, ভাইফোঁটার পরে সকলে অপেক্ষায় থাকেন আরও এক বড় উৎসব- জগদ্ধাত্রী পুজোর (Jagaddhatri Puja)। পার্বতীরই অপর রূপ দেবী জগদ্ধাত্রী। জগতের ধাত্রী অর্থাৎ ধারণ কর্ত্রী। উপনিষদে জগদ্ধাত্রীর নাম উমা হৈমবতী বলে উল্লেখ রয়েছে। বিভিন্ন তন্ত্র ও পুরাণ গ্রন্থেও তার উল্লেখ পাওয়া যায়।
জগদ্ধাত্রী আরাধনা বিশেষত বঙ্গদেশেই প্রচলিত। পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগর ও হুগলি জেলার চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী উৎসব জগদ্বিখ্যাত। চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো মূলত আলোর কাজের জন্যে বিখ্যাত। তবে অনেকেরই অজানা, নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরেই জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রবর্তন হয়।
আরও পড়ুন:
কৃষ্ণনগরেই জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রবর্তন
নদীয়ায় রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের রাজত্বকালে নবাব আলিবর্দি খাঁ, তাঁর থেকে ১২ লক্ষ টাকা দাবি করেছিলেন। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র সেই অর্থ দিতে অস্বীকার করায় তাঁকে মুর্শিদাবাদে বন্দী করা হয়। বন্দিদশা কাটিয়ে যখন রাজা কৃষ্ণনগরে ফিরছিলেন, তখন তিনি শুনতে পান দুর্গাপুজোর বিসর্জনের বাজনা বেজে গেছে। দিনটা ছিল বিজয়া দশমী।

দুর্গাপুজোয় সেখানে উপস্থিত না থাকতে পারে অত্যন্ত কষ্ট পান মহারাজা। সেই রাতেই মা জগদ্ধাত্রী রাজার স্বপ্নে দর্শন দিয়ে তাঁকে পুজোর নির্দেশ দেন। সেই থেকে মা দুর্গার বিকল্প হিসেবে মা জগদ্ধাত্রীর আরাধনা শুরু হয় বাংলায়। পরবর্তীকালে কৃষ্ণচন্দ্র রাজার পুজোর থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ফরাসিদের দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী তৎকালীন ফরাসডাঙ্গা অর্থাৎ বর্তমানের চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন।

কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রবর্তন কবে?
কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন। যদিও বছরটি নিয়ে মতবিরোধ আছে। বিভিন্ন জায়গায় প্রবর্তনের বছর হিসাবে উল্লেখ আছে ১৭৬৩ বা ১৭৬২। এদিকঅন্য একটি মত অনুসারে, কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে পুজোর আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছিল ১৭৫৪ সালে।
আরও পড়ুন: ২০২৬-এ রাশিচক্র পাল্টাবে রাহু! ৪ রাশির জীবনে সুখের বন্যা বইবে, কে কে লাকি?

রাজবাড়ীতে বসেই দেবী জগদ্ধাত্রীর দর্শন করতেন রানিমা
তৎকালীন সময়ে কৃষ্ণনগরের রানিমা রাজবাড়ীতে বসেই জগদ্ধাত্রী মায়ের দর্শন করতেন। তাই সেই সময় থেকে নিয়ম মেনে দেবীর বিসর্জনের আগে রাজবাড়ীর সামনে থেকে ঘুরিয়ে আনতে হয় জগদ্ধাত্রী প্রতিমাকে। জগদ্ধাত্রী পুজোর সকালে পালকিতে দেবীর ঘাট জলঙ্গীর জলে ভরে আনার প্রথা রয়েছে। তবে যোগাযোগ উন্নত হলেও এখনও প্রাচীন নিয়ম অনুযায়ী সাঙে করে অর্থাৎ কাঁধে চেপেই রাজবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন মা জগদ্ধাত্রী।
আরও পড়ুন: বৃহস্পতির প্রিয় এই ৩ রাশির কপালে জ্যাকপট! জীবনভর সাফল্য, সমৃদ্ধি থাকে

কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির সামনে থেকে প্রদক্ষিণ করে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় জলঙ্গী নদীর তীরে। সেখানে মা জগদ্ধাত্রীকে প্রদক্ষিণ করিয়ে বিসর্জন দেওয়া হয় নদীতে। রাজবাড়ীতেও ধুমধাম করে উদযাপন হয় পুজো। নিয়ম অনুযায়ী সবার আগে বিসর্জন হয়, রাজবাড়ির প্রতিমা। বছরের যে তিনদিন মূলত দর্শনার্থী বা ভ্রমণার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় কৃষ্ণনগর রাজবাড়ীর দরজা, তার মধ্যে জগদ্ধাত্রী পুজো একটি।
জগদ্ধাত্রী পুজোর নিয়মকানুন
কার্তিক মাসের শুক্ল নবমীতে হয় জগদ্ধাত্রী পুজো। দুই প্রথায় এই পুজো করার প্রচলন আছে। কেউ পুজো দুর্গাপুজোর ন্যায় চার দিন ধরে, সপ্তমী থেকে নবমী। আবার অনেকে নবমীর দিনই তিনবার পুজোর আয়োজন করেন।
আরও পড়ুন: বাজেট বেড়েই চলেছে, এদিকে পকেটে টান? কম খরচে বিয়ে সারার টিপস

জগদ্ধাত্রী পুজো ২০২৫ -র নির্ঘণ্ট (Jagaddhatri Puja Timing)
* ২৭ অক্টোবর, সোমবার - ষষ্ঠী
২৬ অক্টোবর রাত ২/৯ থেকে ২৭ অক্টোবর শেষ রাত ৩/২৯ অবধি থাকবে অষ্টমী তিথি।
* ২৮ অক্টোবর, মঙ্গলবার - সপ্তমী
২৭ অক্টোবর শেষ রাত ৩/৩০ থেকে ২৮ অক্টোবর শেষ রাত ৪/২১ অবধি থাকবে সপ্তমী তিথি।
* ২৯ অক্টোবর, বুধবার - অষ্টমী
২৮ অক্টোবর শেষ রাত ৪/২২৭ থেকে ২৯ অক্টোবর শেষ রাত ৪/৪২ অবধি থাকবে অষ্টমী তিথি।
* ৩০ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার - নবমী
২৯ অক্টোবর শেষ রাত ৪/৪৫ থেকে ৩০ অক্টোবর শেষ ৪/৩২ অবধি থাকবে নবমী তিথি।