বাঙালির ১২ মাসে ১৩ পার্বণ। জগদ্ধাত্রী পুজোর পর অনেকেই অপেক্ষায় থাকেন আরও এক উৎসবের। বহু বাঙালি বাড়িতে আয়োজন হয় কার্তিক পুজোর। শিব ও পার্বতীর সন্তান কার্তিককে যুদ্ধের দেবতা ও দেব সেনাপতিও বলা হয়। প্রাচীন ভারতে সর্বত্র কার্তিক পুজো প্রচলিত। ভারতে তিনি এক প্রাচীন দেবতা রূপে পূজিত হন।
নব দম্পতির বাড়িতে কার্তিক ফেলার রীতি
বিশ্বাস করেন, দেব সেনাপতি কার্তিকের আরাধনায় পুত্রসন্তান লাভ হয়। সেজন্য বিয়ে হয়েছে কিন্তু এখনও সন্তান আসেনি এমন দম্পতির বাড়ির সামনে কার্তিক ঠাকুরের মূর্তি ফেলা হয়। তবে কার্তিকের আরাধনায় শুধু যে পুত্র লাভ হয় তা-ই নয়, এই পুজো করার ফলে ধন এবং সংসারের শ্রীবৃদ্ধিও হয়। অর্থাৎ সংসারের সদস্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ধনসম্পত্তিরও বৃদ্ধি ঘটে। কার্তিক পুজো করার ফলে সংসারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন সফলতা প্রাপ্ত হয়, আয় বৃদ্ধি এবং উন্নতি হয়। জ্যোতিষশাস্ত্র মতে কার্তিকের আরাধনা করার ফলে মঙ্গল গ্রহের সুফল প্রাপ্ত হয়।
কোন তিথিতে কার্তিক পুজো হয়?
কার্তিক পুজো সূর্যের গতির উপর নির্ভরশীল। সূর্য যখন রাশি পরিবর্তন করে তুলা থেকে বৃশ্চিক রাশিতে যায় সেই দিন অর্থাৎ কার্তিক মাসের শেষ দিন কার্তিক পুজো করা রীতি। আগামী ১৬ নভেম্বর সকাল ৭টা ৩২ মিনিটে (প্রায়) সূর্য রাশি পরিবর্তন করে তুলা রাশি থেকে বৃশ্চিক রাশিতে গমন করবে।
কার্তিক পুজো কবে
এবছর কার্তিক পুজো পড়েছে ১৬ নভেম্বর (৩০ কার্তিক), শনিবার।
কার্তিক ঠাকুরের প্রিয় ফুল
কার্তিক পুজোর সময় দেবতাকে রঙীন ফুল দিতে পারেন। লাল গোলাপ, পদ্ম, নীল, অপরাজিতা, হলুদ চাঁপা, গাঁদা ফুল তাঁর খুব পছন্দের। তবে ঠাকুরের সবচেয়ে পছন্দের ফুল রক্ত করবী। তা না পাওয়া গেলেও দিতে পারেন হলুদ বা সাদা করবী। পুজোর দিনে কার্তিক ঠাকুরকে দিতে পারেন ৫ গোটা ফল। এছাড়াও বাচ্চারা যে খেলনা নিয়ে খেলতে ভালোবাসে, সেই খেলনা দিতে পারেন। এছাড়াও দেবতাকে পায়েস ভোগ দিন।
পৌরাণিক ব্যাখ্যা
পুরাণ অনুযায়ী তারকাসুরকে বধের জন্য তার জন্ম হয়েছিল। পরমেশ্বর শিব ও পরমেশ্বরী পার্বতীর যোগের মাধ্যমে আত্ম মিলন হয়। ফলে এক অগ্নিপিণ্ডের সৃষ্টি হয়। রতির অভিশাপের সম্মান রক্ষার্থে গর্ভে সন্তান ধারণ করেননি মাতা পার্বতী। অগ্নিদেব সেই উৎপন্ন হওয়া নব্য তেজময় জ্যোতিপিণ্ড নিয়ে পালিয়ে যান। ফলে মাতা পার্বতী যোগ ধ্যান সমাপ্তি হতেই ক্রুদ্ধ হন। অগ্নিদেব ঐ অগ্নিপিণ্ডের তাপ সহ্য করতে না পেরে গঙ্গায় তা নিক্ষেপ করে। সেই তেজ গঙ্গা দ্বারা বাহিত হয় ও শরবনে গিয়ে এক রূপবান শিশুর জন্ম দেয়।
জন্মের পর কুমারকে কৃত্তিকাগণ ও অরুণাসুরের বোন বজ্রজ্বালার স্তন্য পান করালে তিনি কার্তিক নামে অভিহিত হন। পরে দেবী পার্বতী শিশু স্কন্দকে কৈলাসে নিয়ে আসেন। ভগবান কার্তিকের স্ত্রী হলেন দেবসেনা ও বালি (বল্লী)। সুরাপদ্মনকে বধ করার পর দেবরাজ ইন্দ্র নিজ কন্যা দেবসেনার সঙ্গে কার্তিকের বিয়ে দেন। পরে নম্বিরাজের কন্যা বালি-র সঙ্গে কার্তিকের বিয়ে হয়।
পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতে কার্তিক পুজো
বাংলায় কার্তিক সংক্রান্তির সাংবাৎসরিক কার্তিক পুজোর আয়োজন করা হয়। আগের তুলনায় এখন এই পুজোর জনপ্রিয়তা কিছুটা কমেছে। কাটোয়ার কার্তিক পুজো বিখ্যাত। এখানে এক পুজোর সঙ্গে অন্য পুজোর প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে কার্তিক লড়াই বলে। তবে কার্তিক প্রাচীনকাল থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ দেবতা, উত্তর ভারতে মহাসেন এবং কুমার হিসাবে উপাসনা করা হয় এবং প্রধানত তামিলনাড়ু রাজ্য এবং দক্ষিণ ভারতের অন্যান্য অংশ, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং মরিশাসে মুরুগান হিসাবে পুজো করা হয়।