দুর্গাপুজো দরজায় কড়া নাড়ছে। মহালয়ার দিন পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে, মাতৃপক্ষ সূচনা হয়। আর এদিনই আক্ষরিক অর্থে দুর্গা পুজো শুরু হয়। কথিত আছে মহালয়ার দিন অসুর ও দেবতাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। এই মহালয়ার গুরুত্ব হিন্দু ধর্মে অনেক। তবে মহালয়া শুভ না অশুভ, এই বিষয়ে মত পার্থক্য রয়েছে অনেক। মহালয়ার দিন পিতৃ পুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করার রীতি প্রচালিত আছে।
মহালয়ার দিন পিতৃ পুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করার রীতি প্রচালিত আছে। এদিনই দেবীর দুর্গার চক্ষুদান হয়। মহালয়া শব্দটির অর্থ, মহান আলয় বা আশ্রম। এক্ষেত্রে দেবী দুর্গাই হলেন, সেই মহান আলয়। পুরাণ থেকে মহাভারত, মহালয়া ঘিরে বর্ণিত আছে নানা কাহিনি।
পুরাণ মতে
ব্রহ্মার বরে মহিষাসুর অমর হয়ে উঠেছিলেন। শুধুমাত্র কোনও নারীশক্তির কাছে তার পরাজয় নিশ্চিত। অসুরদের অত্যাচারে যখন দেবতারা অতিষ্ঠ, তখন ত্রিশক্তি ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর নারীশক্তির সৃষ্টি করেন। তিনিই মহামায়ারূপী দেবী দুর্গা। দেবতাদের দেওয়া অস্ত্র দিয়ে মহিষাসুরকে বধ করেন দুর্গা। এজন্যেই বিশ্বাস করা হয় যে, এই উৎসব খারাপ শক্তির বিনাশ করে শুভশক্তির বিজয়।
মহালয়া শুভ?
এদিন থেকেই মাতৃপক্ষের সূচনা, সব অশুভ শক্তির বিনাশ হয়, তাই মহালয়া শুভ। দুর্গাপুজো বয়ে আনে আনন্দ, আশা, শুভ চেতনা। এছাড়াও হিন্দু ধর্মের যে কোনও শুভ কাজেই পিতৃপুরুষদের স্মরণ করা হয়। এছাড়াও তর্পণের বৃহত্তর অর্থ জগৎব্যাপী এক মহামিলনক্ষেত্রের ইঙ্গিত দেয়। সেটিও কোনও ভাবেই অশুভ হতে পারে না।
আরও পড়ুন: শনিদেব এই ৪ রাশির প্রতি সর্বদা সদয়, বিপদ- চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় না কখনও
মহালয়া অশুভ?
অন্য মতানুসারে, মহালয়ার দিন পিতৃ পুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করার অর্থাৎ জলদান করার রীতি রয়েছে। পিতৃপুরুষদের স্মরণ করার দিন, সেই যুক্তিতেই অনেকে মনে করেন এদিন আসলে শোক পালনের দিন। তবে শুভ হোক কিংবা অশুভ, মহালয়া নিয়ে এই দ্বন্দ্ব লেগেই থাকবে, তবে আসলে যে কোনও উৎসবই মিলনক্ষেত্র। তাই সব খারাপ ভুলে শুভ শক্তি, শুভ চেতনা নিয়ে আসুক সকলের মনে এটাই কাম্য।
পুরাণ অনুসারে মহালয়া
কোনও মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধ শান্তি করলে, তাঁর আত্মা প্রশান্তি লাভ করে এবং সেই আত্মা মুক্তি লাভে সক্ষম হয়। বিশ্বাস করা হয় যে পিতৃপক্ষে শ্রাদ্ধ শান্তি ও তর্পণ করলে পূর্ব পুরুষেরা খুশি হন এবং আশীর্বাদ করেন। তাঁদের কৃপায় জীবনের অনেক বাধা দূর হয়। জীবনের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকেও মুক্তি মেলে। পিতৃপক্ষের শ্রাদ্ধ ও তর্পণের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এজন্যেই দেবীপক্ষ শুরুর আগে পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করা হয়।
দেবরাজ ইন্দ্রের অনুসারে মহালয়া
পুরাণ মতে, দেবরাজ ইন্দ্রকে ১৬ দিনের জন্য মর্তে গিয়ে তর্পণ করতে পাঠান যমরাজ। আর এই ১৬ দিনই পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত হয় এবং সেই সময় থেকেই মহালয়ার দিন এবং তার আগে ১৫ দিন পিতৃপুরুষদের জলদান করা হয়।
আরও পড়ুন: ইলিশের ডিম খাওয়া কি আদৌ ভাল, নাকি ক্ষতি হয়? জেনে নেওয়া জরুরি
রামায়ণ অনুসারে মহালয়া
শাস্ত্রের নিয়মানুসারে, অকালে কোনও পুজো করলে ইষ্ট দেবতা ও প্রয়াত পিতা -মাতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তর্পণ করতে হয়। শ্রী রামচন্দ্র, দেবী দুর্গার অকাল বোধন করেছিলেন। আর নিয়ম মেনে তাঁকেও পুজোর আগে করতে হয়েছিল তর্পণ। কথিত আছে রামচন্দ্র, মহালয়ার দিন পিতৃ তর্পণ করেছিলেন। আর সেই থেকেই শুরু হয় এই রীতির।
মহাভারত অনুসারে মহালয়া
কথিত আছে, স্বর্গে বসবাস করার সময় কর্ণের আত্মাকে খাবার হিসাবে শুধু সোনা ও রত্ন দেওয়া হয়। কারণ দাতা হিসাবে তিনি কখনও পিতৃপুরুষকে জল -খাবার দেননি, সকলকে সোনা -রত্ন দান করেছেন। আসলে কর্ণ, প্রথমে তাঁর পিতৃ পরিচয় জানতেন না। যুদ্ধের আগের রাতে কুন্তীর থেকে সে জানতে পারে সকল সত্যি। এরপরই ভুল সংশোধন করতে তর্পণের পরামর্শ আসে।
আরও পড়ুন: পুজোয় এক সঙ্গে ছবি রিলিজ! দেবের সঙ্গে লড়াই নিয়ে কী বললেন প্রসেনজিৎ?
মহালয়া ২০২৫ দিনক্ষণ
* এই বছর মহালয়া পড়েছে ২১ অক্টোবর (৪ আশ্বিন), রবিবার।
* মহালয়ার অমাবস্যা তিথি শুরু ২০ সেপ্টেম্বর রাত ১১/৫৪ মিনিট নাগাদ এবং থাকবে ২১ সেপ্টেম্বর রাত ১২/২৩/৪৬ মিনিট পর্যন্ত।
তর্পণের সময়
মহালয়ার দিনের অষ্টম মুহুর্তে অর্থাৎ কুতুপ কাল শ্রাদ্ধ করুন। সকাল ১১:৪৭ থেকে দুপুর ১২:৩৭ মিনিট পর্যন্ত হল কুপুত কাল শ্রাদ্ধের সময়। এদিন সূর্যোদয়ের পরে এই তর্পণের কাজ শুরু হয় ভোরবেলা থেকে।