
ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল মহরম। ইসলামি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাসই হল মহরম। আল কোরানের বিধান অনুযায়ী এই মাসটি পবিত্র, তাই এই মাসটি ইসলাম ধর্মের মানুষদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচীনকাল থেকে মহরম, ইসলাম ধর্মের মানুষদের কাছে পবিত্র হিসাবে গণ্য করা হয়। মহরমের মাসে শোক পালন করেন ও নিজেদের সমস্ত খুশি ত্যাগ করেন ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা। মহরমকে কোনও উৎসব হিসাবে না, এটি অধর্মের উপর ধর্মের জয়ের প্রতীক হিসাবে মনে করা হয়।
আরবী শব্দ 'মুহররম'-র অর্থ হল পবিত্র। মহাগ্রন্থ আল কোরানে পবিত্র মাস হিসেবে উল্লেখ আছে মহরম মাসের। মহরমের ১০ তারিখটি বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন দিন, যাকে বলা হয় আশুরা। গুরুত্বপূর্ণ এই মাসটিতে শিয়ারা আশুরাকে কারবালার বিষাদময় ঘটনা স্মরণ করে পালন করা হয় মহরম। অনেক মুসলমান মসজিদে বিশেষ প্রার্থনা সভায় অংশ নেন। মহররমের নবম, দশম ও একাদশতম দিনে মুসলমানরা ভোর থেকে সন্ধ্যা অবধি রোজা রাখে।
মহরম ২০২৩-র তারিখ
এবছর মহরম পড়েছে ১৭ জুলাই, বুধবার। অর্থাৎ ১৬ জুলাই, মঙ্গলবার পালন হবে জাগরণ রাত।
কেন পালিত হয় মহরম?
ইসলাম বিশ্বাস অনুযায়ী, ইরাকে ইয়াজিদ নামের এক নিষ্ঠুর বাদশাহ ছিলেন। যিনি নিজেকে খলিফা মনে করলেও, আল্লাহর প্রতি তার কোনও বিশ্বাস ছিল না। এমনকি তিনি ছিলন মানবশত্রু। হজরত ইমাম হুসেনকে তিনি নিজের শিবিরে যোগদান করায় বলায়, তিনি রাজি হননি। এর ফলে তিনি ক্রোধে, তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা করেন। হুসেন, তাঁর পরিবার ও বন্ধু -বান্ধব শহিদ হন কারবালায়। শোনা যায় এই মহরমের মাসেই তিনি শহিদ হয়েছিলেন।
শিয়া ও সুন্নি সম্প্রদায়ভুক্তদের মহরম উদযাপনের রীতি
ইসলাম ধর্মের দুই সম্প্রদায়ের মানুষ দুই রকম ভাবে মহরম পালন করেন। শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা মহরমের দিন কালো পোশাক পরে হুসেন, তাঁর পরিবার ও শহীদদের স্মরণ করেন। রাস্তায় তাঁরা তাজিয়া নিয়ে শোভাযাত্রা বের করেন। মহরমের নবম ও দশম দিন তাঁরা রোজা রাখেন। এই সময় বিশেষ নামাজ পড়ার রীতি আছে। অন্যদিকে সুন্নি সম্প্রদায়ভুক্তরা, মহরম মাসের ১০ দিন রোজা রাখেন।
কারবালার যুদ্ধ
মক্কা - মদিনার পর কারবালাই মুসলিমদের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান। এটি অবস্থিত ইরাকের রাজধানী বাগদাদ তাহকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে। বিশ্বাস অনুযায়ী, হজরত ইমাম হুসেন, দ্বিতীয় মহরমে কারবালাতেই সকলকে নিয়ে পৌঁছেছিলেন। সেদিন সকালে হুসেন নামাজ পড়ছিলেন এবং তখনই ইয়াজিদের সৈন্যরা তির ছুঁড়তে শুরু করেন। যেখানে, হুসেনের ৭২ জন সঙ্গী শহীদ হন। এই ঘটনার পরে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা নববর্ষ উদযাপন বন্ধ করে দিয়ে মহরম মাসকে দুঃখের মাস হিসাবে পালন করেন।