হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্বোচ্চ দেবতা মনে করা হয় শিব হলেন । সনাতন ধর্মের শাস্ত্রসমূহে তিনি পরমসত্ত্বা রূপে ঘোষিত। শিব সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়রূপ তিন কারণের কারণ। তিনি সমসাময়িক হিন্দু ধর্মের তিনটি সর্বাধিক প্রাচীন সম্প্রদায়ের অন্যতম শৈব সম্প্রদায়ের প্রধান দেবতা। তার বিশেষ রুদ্ররূপ ধ্বংস, সংহার ও প্রলয়ের দেবতা। সর্বোচ্চ স্তরে শিবকে অপরিবর্তনশীল পরম ব্রহ্ম মনে করা হয়।
ভোলেনাথ সমস্ত ভক্তের উপর তার আশীর্বাদ বর্ষণ করেন। মহাদেবের আরাধনার সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হল মহা শিবরাত্রি। বিশ্বাস করা হয়, এদিন ভক্তি মনে পুজো করলে শিব ভক্তদের মনবাঞ্ছা পূরণ হয়। মাঘ মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে শিবরাত্রি পালন করা হয়। এবছর মহাশিবরাত্রি পালিত হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি। মহাশিবরাত্রির দিনটি শিব ভক্তদের কাছে অত্যন্ত বিশেষ বলে মনে করা হয়। এই দিনটিকে ভগবান শিব এবং দেবী পার্বতীর বিবাহের প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
শিবরাত্রি (Maha Shivratri)
'শিবরাত্রি' কথাটা দুটি শব্দ থেকে এসেছে। 'শিব' ও 'রাত্রি', যার অর্থ শিবের জন্য রাত্রী। শিবরাত্রির সঙ্গে প্রচলিত আছে নানা কথা। পুরাণ মতে দেবী পার্বতীর সঙ্গে এদিন দেবাদিদেব মহাদেবের মিলন হয়। । আবার শোনা যায় এদিন থেকেই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছিলেন। যজ্ঞের মধ্যে যেমন অশ্বমেধ যজ্ঞ, তীর্থের মধ্যে যেমন গঙ্গা তেমনই পুরাণ অনুযায়ী ব্রতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হল শিব চতুর্দশীর ব্রত। তাই শিবরাত্রির ব্রত পালন করলে ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ- এই চতুর্বিধ ফল লাভ হয়।
শিবরাত্রির দিনক্ষণ (Shivratri 2025 Date & Time)
সাধারণত ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাসে শিবরাত্রির তিথি পড়ে। এই বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি, বুধবার পড়েছে মহাশিবরাত্রির তিথি। ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯/৪২ মিনিট থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮/৩১ মিনিট পর্যন্ত থাকবে শিব চতুর্দশীর তিথি।
শিবরাত্রি ২০২৫-র নিশীথ কাল (Shivratri 2025 Nishith Kaal)
শাস্ত্র মতে মহাশিবরাত্রির পুজোর শ্রেষ্ঠ সময় হল নিশীথ কাল। এই তিথিতে চার প্রহরে পুজো হয়। অনেকে কোনও একটি প্রহর বা চার প্রহরেই পুজো করেন। শাস্ত্র মতে মহাশিবরাত্রি তিথিতে সন্ধ্যাবেলা স্নানের পর শিবের পুজো করা উচিত। বিশ্বাস অনুযায়ী, ব্রত পালনের পূর্ণ ফল লাভের জন্য সূর্যোদয় থেকে শুরু করে চতুর্দশী তিথি অস্ত হওয়ার মধ্যেকার সময় পর্যন্ত ব্রত সমাপ্ত করা উচিত। আবার কোনও কোনও ধারণা অনুযায়ী চতুর্দশী তিথি সমাপ্ত হওয়ার পর ব্রতভঙ্গ করা শ্রেয়।
শাস্ত্র মতে মহাশিবরাত্রির তিথিতে ৪ প্রহরে ভক্তি মনে শিব পুজোর বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। চার প্রহরে মহাদেবের পুজো করলে, ব্যক্তি সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি পায়। পাশাপাশি ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ লাভ করে।
শিবরাত্রির প্রথম প্রহরের পুজোর সময় (Shivratri 2025 First Prahar Puja)
* ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা ১৯ মিনিট থেকে রাত ৯টা ২৬ মিনিট পর্যন্ত।
* প্রথম প্রহরে দুধ দিয়ে স্নান করাতে হয়।
* মন্ত্র- ইদং স্নানীয়দুগ্ধং ওঁ হৌঁ ঈশানায় নমঃ।
শিবরাত্রির দ্বিতীয় প্রহরের পুজোর সময় (Shivratri 2025 Second Prahar Puja)
* ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টা ২৬ মিনিট থেকে মাঝরাত ১২টা ৩৪ মিনিট পর্যন্ত।
* দ্বিতীয় প্রহরে দই দিয়ে স্নান করানোর নিয়ম।
* মন্ত্র -ইদং স্নানীয়ং দধি ওঁ হৌঁ অঘোরায় নমঃ।
শিবরাত্রির তৃতীয় প্রহরের পুজোর সময় (Shivratri 2025 Third Prahar Puja)
* ২৬ ফেব্রুয়ারি (পাশ্চাত্য মতে ২৭ ফেব্রুয়ারি, হিন্দু মতে সূর্যোদয় পর্যন্ত ২৬ ফেব্রুয়ারি তারিখ গ্রাহ্য হবে) মাঝরাত ১২টা ৩৪ মিনিট থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোর ৩টে ৪১ মিনিট পর্যন্ত।
* তৃতীয় প্রহরে ঘি দিয়ে স্নান করাতে হয়।
* মন্ত্র- ইদং স্নানীয়ং ঘৃতং ওঁ হৌঁ বামদেবায় নমঃ।
শিবরাত্রির চতুর্থ প্রহরের পুজোর সময় (Shivratri 2024 Fourth Prahar Puja)
* ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোর ৩টে ৪১ মিনিট থেকে সকাল ৬টা ৪৮ মিনিট পর্যন্ত।
* চতুর্থ প্রহরে মধু দিয়ে শিবকে অবশ্যই স্নান করাতে হয়।
* মন্ত্র- ইদং স্নানীয়ং মধু হৌঁ সদ্যোজাতায় নম।
* এছাড়া প্রতি প্রহরে উৎসর্গ করা খাবারও আলাদা আলাদা হয়।
শিবরাত্রি ব্রতের নিয়ম (Shivratri Vrat Rules & Rituals)
শিবরাত্রির ব্রত পালন করার আগের দিন সংযম করতে হয়। এদিন সিদ্ধ চালের ভাত বা আমিষ খেতে নেই। আতপ চালের সিদ্ধ ভাত খাওয়ার নিয়ম এদিন। এছাড়া কেউ চাইলে ময়দার তৈরি খাবারও খেতে পারেন। তবে সন্দক লবণ দিয়েই রান্না করতে হয়। এদিন সাধারণ লবণ একদমই খেতে নেই। ব্রতের দিন উপোস করে নিষ্ঠা করে কিছু নিয়ম মানলে ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন দেবাদিদেব।
শিবরাত্রি ব্রত পালনের উপকরণ (Required Items For Shivratri Vrats)
সেই জলে থাকে গঙ্গা জল, দুধ, ঘি, মধু এবং চিনির মিশ্রণ। পুরাণে বলা আছে, কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে মহাদেব বসুন্ধরার ভালো করেন।
শিবের ব্রতের ফলাফল (Shivratri Vrat Results)
যজ্ঞের মধ্যে যেমন অশ্বমেধ যজ্ঞ, তীর্থের মধ্যে যেমন গঙ্গা তেমনই পুরাণ অনুযায়ী ব্রতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হল শিব চতুর্দশীর ব্রত। তাই শিবরাত্রির ব্রত পালন করলে ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ- এই চতুর্বিধ ফল লাভ হয়।