শুরু হয়েছে ভগবান জগন্নাথের রথযাত্রা। ১ জুলাই থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত চলা এই রথযাত্রার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করা হয়েছে। এবার ভগবান জগন্নাথের রথযাত্রায় বিপুল সংখ্যক ভক্ত অংশ নিচ্ছেন।
আসলে, করোনার কারণে, গত দুই বছর ধরে ভক্তদের এই রথযাত্রায় অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় দিনে রথযাত্রা বের হয়।
উড়িষ্যার পুরিতে অবস্থিত ভগবান জগন্নাথ মন্দির ভারতের চারটি পবিত্র মন্দিরের (ধাম) একটি। এই মন্দিরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জগন্নাথ রূপে তাঁর বড় ভাই বলভদ্র এবং বোন সুভদ্রার সঙ্গে বিরাজ করেন।
এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে, একবার ভগিনী সুভদ্রা ভগবান জগন্নাথের কাছে শহর দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। বোনের এই ইচ্ছা পূরণের জন্য ভগবান জগন্নাথ ও বলভদ্র তাকে রথে চড়ে শহর দেখাতে গেলেন। এ সময় তিনি গুন্ডিচায় তার মাসির বাড়িতেও যান। জগন্নাথ, বলভদ্র আর সুভদ্রার মাসির বাড়ি আসা থেকেই এই রথযাত্রার প্রথা শুরু হয়।
জগন্নাথ মন্দির সম্পর্কিত কিছু রহস্য এটা বিশ্বাস করা হয় যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন তাঁর দেহ ত্যাগ করেছিলেন, তখন পাণ্ডবরা এখানে তাঁর শেষকৃত্য করেছিলেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দেহ পঞ্চ উপাদানের সঙ্গে মিশে গেলেও তাঁর হৃদয় জীবিত বা অক্ষতই ছিল। তারপর থেকে তার হৃদয় আজ পর্যন্ত নিরাপদে রয়েছে পুরির জগন্নাথ মন্দির।
বিশ্বাস করা হয়, এই জগন্নাথ মন্দিরে ভগবান জগন্নাথের মূর্তির ভিতরে এখনও শ্রীকৃষ্ণের হৃদয় স্পন্দিত হয়। প্রতি ১২ বছর পর পর প্রতিমা পরিবর্তন করা হয় ভগবান জগন্নাথ, বলভদ্র এবং তাদের বোন সুভদ্রার মূর্তি প্রতি ১২ বছর পর পর পরিবর্তন করা হয়। যখনই এই প্রতিমাগুলি প্রতিস্থাপন করা হয়, তখনই পুরো শহরের বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায়।
এ সময় মন্দিরের চারপাশে সম্পূর্ণ অন্ধকার হয়ে যায়। মন্দিরের নিরাপত্তা সিআরপিএফ-এর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এই সময় মন্দিরে কারও প্রবেশ করা চলে না। এই মূর্তিগুলি প্রতিস্থাপন করার জন্য শুধুমাত্র একজন পুরোহিতকে মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। মূর্তি পরিবর্তন করার সময়, পুরোহিতের হাতে গ্লাভস থাকে এবং চোখ বেঁধে রাখা হয় যাতে তিনিও মূর্তিগুলি দেখতে বা সরাসরি অনুভব না করতে পারেন।
এই অন্ধকারেই প্রথা মেনে ভগবান জগন্নাথের পুরনো মূর্তি থেকে নতুন মূর্তিতে ব্রহ্ম পদার্থ (শ্রীকৃষ্ণের হৃদয়) পরিবর্তন করা হয়। মূর্তি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল এই পুরানো মূর্তি থেকে ব্রহ্ম পদার্থকে (শ্রীকৃষ্ণের হৃদয়) নতুনটিতে স্থানান্তর করা। যখন মূর্তি পরিবর্তন হয় তখন সবকিছুই নতুন হয় কিন্তু যা কখনওই পরিবর্তন হয় না তা হল এই ব্রহ্ম পদার্থ।
এই ব্রহ্ম পদার্থ (শ্রীকৃষ্ণের হৃদয়) সম্পর্কে একটি বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে। কেউ যদি এই ব্রহ্ম পদার্থ দেখে ফেলে, তবে সঙ্গে সঙ্গে তার মৃত্যু হবে। আজ পর্যন্ত যে সকল পুরোহিত ভগবান জগন্নাথের পুরানো দেব মূর্তি থেকে নতুন মূর্তিতে ব্রহ্ম পদার্থ স্থাপন করেছেন, তাঁরা জানান যে, পুরানো মূর্তি থেকে ব্রহ্ম পদার্থকে (শ্রীকৃষ্ণের হৃদয়) নতুনটিতে স্থানান্তর করার সময় একেবারে অন্যরকম অভিজ্ঞতা হয়। তাঁরা জানিয়েছেন, মনে হয় হাতের মধ্যে একটা নরম তুলতুলে খরগোশ যেন লাফাচ্ছে যা আসলে শ্রীকৃষ্ণের হৃদয়ের স্পন্দন।