হরিদ্বার কুম্ভ মেলার শাহী স্নানের শেষ দিন করোনার ভয় দেখা গেল পুণ্যার্থীদের মধ্যে। হরিদ্বারের ঘাট চত্বরে গত কয়েকদিন ধরে যে সেই ভীড় দেখা গিয়েছিল তা এদিন একেবারেই নেই।
অন্যান্য বার চৈত্র পূর্ণিমায় পুণ্যস্নানে হাজির হননি লক্ষ লক্ষ মানুষ। যা দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে গোটা দেশের কোভিড পরিস্থিতিতে আতঙ্কে রয়েছেন গোটা দেশবাসী। যদিও এই সামন্য ভিড়ও বর্তমান পরিস্থিতিতে অত্যন্ত সংকটজনক। তবে বলে যায় আগের সেই মানুষের ঢলের থেকে মন্দের ভাল।
চৈত্র পূর্ণিমার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে সনাতন ধর্মে। চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমা তিথিকে চৈত্র পূর্ণিমা বলা হয়। চৈত্র পূর্ণিমার চাঁদকে ভাগ্যবান পূর্ণিমা হিসাবে বিবেচিত হয়। কথিত আছে যে এদিন উপবাস করলে শুধু মনের আশা পূর্ণ হয় তা নয়। বরং ঈশ্বরের অপরিসীম অনুগ্রহও লাভ হয়।
চৈত্র পূর্ণিমার দিন ব্রহ্ম মুহুর্তে স্নান করলে এবং উপবাস করে দেবী লক্ষ্মীর পুজো করলে সমস্ত কামনা পূর্ণ হয়। হর কি পৌড়িতে পুণ্যার্থীদের স্নানের সময় সকাল ৯ টা অবধি রাখা হয়েছিল। এরপরে ১৩ টি আখড়ার সাধুদের প্রতীকী শাহী স্নানের ব্যবস্থা করা হয়, করোনা সংক্রমণ রুখতে।
কুম্ভের শেষ শাহী স্নানের দিন ভিড় না থাকায় এবং সামাজিক দূরত্ববিধি সকলে মেনে চলায় খুশি হাজির পুণ্যার্থীরাও। তাঁরা জানান, প্রশাসনের তরফ থেকে ভাল ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রত্যেকের মুখে থাকছে মাস্ক। হরিদ্বারে পৌঁছানোর পর তাঁদর র্যাপিড কোভিড পরীক্ষা করা হচ্ছে।
কুম্ভের আইজি সঞ্জয় গুনজিয়াল জানান যে, করোনার কারণে শাহী স্নান প্রতীকী হবে এই বছর। সাধারণত এখানে এক লক্ষাধিক ভিড় থাকে। তবে এখন ৫০ থেকে ১০০ জন মতো শাহী স্নান করবে। আগে পৌড়ি ঘাটে সকাল সাতটায় ভক্তরা স্নান করতেন। তবে এই বছর আজ তাঁরা নয়টা পর্যন্ত স্নান করতে পারবেন।
মহাকুম্ভের শাহি স্নান ১২ বছর অন্তর হয়। দেশের চারটি প্রধান নদীর তীরে কুম্ভের আসর বসে। অতিমারীর জন্য এবছর কুম্ভমেলা সাড়ে তিনমাসের বদলে ৩০ দিন ধরে চলবে উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারে। ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে কুম্ভ মেলা। এবারের কুম্ভমেলায় ১২, ১৪, ২৭ এপ্রিলে ৩টি শাহি স্নানের যোগ রয়েছে।
হরিদ্বারে কুম্ভ মেলার তৃতীয় দিন অবধি শাহি স্নানে দেখা মিলেছিল আতকে ওঠার মতো দৃশ্য। কোভিড বিধিকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পুণ্য স্নানে সামিল হয়েছিলেন পুণ্যার্থীরা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ফের যেভাবে চোখ রাঙাচ্ছে গোটা দেশকে, তাই এই দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছিল দেশবাসী।
লক্ষাধিক মানুষের জমায়েতে অতিমারী নিয়ে কোনও তোয়াক্কাই করতে দেখা যায়নি কাউকেই। এক জায়গায় এত মানুষের জমায়েত নিয়ে রীতিমতো চিন্তায় পরেছিলেন প্রশাসন। কারণ গঙ্গার ঘাটে চরম ভিড়ের মধ্যেও কারও মুখেই ছিল না মাস্ক। উত্তরাখণ্ড সরকারের তরফে থার্মাল স্ক্রিনিং থেকে মাস্কের ব্যবহার নিয়ে বহুদিন আগে থেকেই সচেতনতার প্রচার দেখা গেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কে মানছে কার কথা। (ছবি- পিটিআই)