রাত পোহালেই মহালয়া (Mahalaya)। পিতৃপক্ষের (Pitri Paksha) অবসান হয়ে, দেবীপক্ষের (Devi Paksha) সূচনা হবে আগামী কাল অর্থাৎ বুধবার। এদিনই আক্ষরিক অর্থে দুর্গাপুজো (Durga Puja) শুরু হয়।
কথিত আছে মহালয়ার দিন অসুর ও দেবতাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। এই মহালয়ার গুরুত্ব হিন্দু ধর্মে অনেক।
মহালয়ার দিন পিতৃ পুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করার রীতি প্রচালিত আছে। এদিনই দেবীর দুর্গার চক্ষুদান হয়। মহালয়া শব্দটির অর্থ, মহান আলয় বা আশ্রম। এক্ষেত্রে দেবী দুর্গাই হলেন, সেই মহান আলয়। পুরাণ থেকে মহাভারত, মহালয়া ঘিরে বর্ণিত আছে নানা কাহিনি।
পুরাণ অনুসারে, কোনও মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধ শান্তি করলে, তাঁর আত্মা প্রশান্তি লাভ করে এবং সেই আত্মা মুক্তি লাভে সক্ষম হয়। বিশ্বাস করা হয় যে পিতৃপক্ষে শ্রাদ্ধ শান্তি ও তর্পণ করলে পূর্ব পুরুষেরা খুশি হন এবং আশীর্বাদ করেন। তাঁদের কৃপায় জীবনের অনেক বাধা দূর হয়। জীবনের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকেও মুক্তি মেলে।
পিতৃপক্ষের শ্রাদ্ধ ও তর্পণের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এজন্যেই দেবীপক্ষ শুরুর আগে পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করা হয়।
মহালয়ায় তর্পণের সময়
মহালয়ার অমাবস্যার তিথির মধ্যেই পিতৃ তর্পণ করতে হয়।
* বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে- মহালয়ার অমাবস্যা তিথি শুরু ৫ সেপ্টেম্বর (১৮ আশ্বিন) , মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭.০৬ মিনিট এবং থাকবে ৬ সেপ্টেম্বর ( ১৯ আশ্বিন), বিকেল ৪.৩৫ মিনিট পর্যন্ত।
* গুপ্ত প্রেস পঞ্জিকা মতে- ৫ সেপ্টেম্বর (১৮ আশ্বিন) রাত ৬.৩২ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড থেকে ৬ সেপ্টেম্বর (১৯ আশ্বিন) ৫.১০ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড অবধি অমাবস্যা থাকবে।
জ্যোতিষীদের মতে, এই বছর মহালয়াতে দীর্ঘ ১১ বছর পর তৈরি হয়েছে বিশেষ গজছায়া যোগ। এই যোগ খুবই বিরল। এদিন পিতৃ পুরুষদের উপলক্ষে নিষ্ঠা করে জলদান করলে, শুভ ফল মেলে।
মূলত গঙ্গাতেই পিতৃ তর্পণ করার নিয়ম। তবে সেই সুবিধা না থাকলে, পরিষ্কার জলেও নিয়ম পালন করা যায়। গঙ্গাজলের সঙ্গে কালো তিল মিশিয়ে কুশ নিয়ে কোশা- কুশির সাহায্যে পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশ্যে জলদান করা হয়।
মনে করা হয়, মন্ত্র সহযোগে তর্পণ হচ্ছে, প্রকৃত অর্থে পিতৃ পুরুষগণের তৃপ্তি বিধান। আর তাঁরা তৃপ্ত হলে, দেবতারাও তৃপ্ত হন।
শাস্ত্রের নিয়মানুসারে, অকালে কোনও পুজো করলে ইষ্ট দেবতা ও প্রয়াত পিতা -মাতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তর্পণ করতে হয়। শ্রী রামচন্দ্র, দেবী দুর্গার অকাল বোধন করেছিলেন। আর নিয়ম মেনে তাঁকেও পুজোর আগে করতে হয়েছিল তর্পণ। কথিত আছে রামচন্দ্র, মহালয়ার দিন পিতৃ তর্পণ করেছিলেন। আর সেই থেকেই শুরু হয় এই রীতির।
মহাভারত অনুসারে কথিত আছে, স্বর্গে বসবাস করার সময় কর্ণের আত্মাকে খাবার হিসাবে শুধু সোনা ও রত্ন দেওয়া হয়। কারণ দাতা হিসাবে তিনি কখনও পিতৃপুরুষকে জল -খাবার দেননি, সকলকে সোনা -রত্ন দান করেছেন। আসলে কর্ণ, প্রথমে তাঁর পিতৃ পরিচয় জানতেন না। যুদ্ধের আগের রাতে কুন্তীর থেকে সে জানতে পারে সকল সত্যি। এরপরই ভুল সংশোধন করতে তর্পণের পরামর্শ আসে।