
একুশ শতকের আধুনিক অসুর সম্প্রদায়ের কাছে মহিষাসুরকে হত্যাকারী তকমা ঘুচলো দেবী দুর্গার। প্রচলিত প্রথা ভেঙে এখন শারদোৎসবে মাতছে নব প্রজন্মের অসুর সম্প্রদায়। অসুর সম্প্রদায়ের প্রাচীণ নিয়মনীতির বেড়াজালে মধ্যে আর আটকে নেই ইন্টারনেট যুগের ওষুর সম্প্রদায়ের তরুণ প্রজন্ম।

সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ধীরে ধীরে আধুনিকতার ছোঁয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত হয়ে উঠছে এই সম্প্রদায়ের যুবক-যুবতীরা। মাত্র কয়েক বছর আগেও দেবী দুর্গা, অসুর সম্প্রদায়ের মানুষের চক্ষুশূল ছিলেন।তাদের আদি পূর্বপুরুষ মহিষাসুরের হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত ছিলেন মা দুর্গা।

প্রতি বছর মহালয়ার পরেই মা দুর্গার হাত থেকে নিজেদের পরিবার ও সন্তানদের বাঁচাতে তাঁরা দশমীর বির্সজন পর্যন্ত নিজেদের গৃহবন্দী করে রাখতেন। মায়ের বির্সজন হয়ে গেলেই অসুর সম্প্রদায়ের মানুষ গৃহবন্দী দশা কাটিয়ে নদীতে স্নান করে ফের স্বাভাবিক জীবনে প্রবেশ করতেন। দেবী দুর্গার আগমন ওষুর সম্প্রদায়ের মানুষদের কাছে অভিশপ্ত দিন হিসেবেই দেখতো গোটা অসুর সম্প্রদায়।

তবে এখন সময় পাল্টেছে। সময়ের সাথে সাথে নিজেদের আধুনিক বিশ্বের সাথে মিলিয়ে নিতে শিখেছে অসুরদের তরুন প্রজন্ম। এই তরুণ প্রজন্মের অনেকের হাতেই এখন উঠে এসেছে মুঠোফোন। মুঠোফোনের দৌলতেই গোটা বিশ্ব এখন তরুন অসুর সম্প্রদায়ের হাতের মুঠোয়।
শিক্ষাগত দিক থেকেও এগিয়ে এসেছে ওষুরদের নতুন প্রজন্ম।

চা বাগানের সীমানা পেরিয়ে আজ এই তরুন প্রজন্ম বহিঃবিশ্বের সাথেও সমান ভাবে যুক্ত। আজ এই একুশ শতকে দাঁড়িয়ে অসুরদের তরুন প্রজন্মের কাছে মা দুর্গা আর অভিশপ্ত এক হত্যাকারী নারী নয়। বরং দেবী দুর্গা একজন শান্তি ও আনন্দের বার্তা বহনকারী এক ভগবান। আর সে কারনেই গত কয়েক বছর ধরে ধীরে ধীরে শারদোৎসবে নিজেদের সামিল করছেন অসুরদের তরুন প্রজন্ম।

আলিপুরদুয়ার জেলার মাঝেরডাবরি চা বাগানে অসুর সম্প্রদায়ের বসবাস। বহুকাল ধরেই স্থানী ভাবে বসবাস করছে এই সম্প্রদায়ের মানুষ।
অসুরদের এই গ্রামে বর্তমানে ৩০ টি পরিবারের বসবাস রয়েছে।

অসুর সম্প্রদায়ের সবচেয়ে প্রবীণ তথা অসুর সমাজের সমাজপতি ডাহারু অসুর দুই বছর আগে প্রয়াত হয়। তারপর থেকেই তরুণ প্রজন্মের অসুর সম্প্রদায় আধুনিক সমাজের সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে শুরু করেছে।

মহালয়ার ভোরে মাঝেরডাবরি চা বাগানে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে বেজে উঠবে আগমনীর বার্তা "যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃ রুপেণ সংস্থিতা"
আর সেই সুরেই ঘুম ভাঙবে একুশ শতকের অসুরদের তরুণ প্রজন্মের।