বাংলার মাটিতে যুগে যুগে জন্ম নিয়েছেন বহু মাতৃসাধক। যাঁদের লীলা আজও মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ আবার বিশেষভাবে সঙ্গীতানুরাগী বা সঙ্গীতজ্ঞও ছিলেন। যাঁদের বাঁধা গান আজও একইরকম জনপ্রিয়। তেমনই একজন মাতৃসাধক ভবা পাগলা (Bhaba Pagla)।
অবিভক্ত বাংলার ঢাকা জেলার আমতা গ্রামে জন্ম ভবা পাগলার। বাংলার ১৩০৯ সালের ৩১ আশ্বিন গজেন্দ্রমোহন চৌধুরী ও গয়াসুন্দরীদেবীর ঘরে জন্ম ভবার। একসঙ্গে দুই সন্তানের জন্ম দেন গয়াসুন্দরীদেবী। একজনের নাম রাখা হয় দেবেন্দ্রমোহন, অপরজন ভবেন্দ্রমোহন। আদর করে সবাই ডাকতেন দেবা ও ভবা বলে। সেখান থেকেই পরবর্তী সময়ে ভবা হয়ে ওঠেন ভবাপাগলা।
ভবার জন্মের আগে...
শোনা যায় দেবেন্দ্র ও ভবেন্দ্র গর্ভে আসার আগে একবার নয়, দু-দু'বার স্বপ্নে বিশেষ ইঙ্গিত পান গয়াসুন্দরী। এমনকী গর্ভবতী থাকাকালীন খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। সেই সময় একদিন সামান্য তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় তিনি শুনতে পান কেউ যেন বলছে, "মা তুমি ভেবো না, তোমার কোনও অমঙ্গল হবে না"। এরপরেই এক সিন্ধ জ্যোতি দেখতে পান গয়াসুন্দরী। সেই জ্যোতি এক শিশুরূপ ধারণ করে তাঁকে বলে, "যথা সময়ে তোমার কোলে আসব"।
খেলাচ্ছলে...
খুব ছোটবেলা থেকেই ভবার মধ্যে বাড়তে থাকে ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা, ভক্তি, অনুরাগ। শ্যামা মায়ের প্রতি তাঁর ছিল বিশেষ আকর্ষণ। আর পাগল ছেলের ভক্তিতে কৃপা করেছিলেন মহামায়াও। শোনা যায়, ছোটবেলায় বন্ধুদের নিয়ে নাকি মাঝেমধ্যেই খেলাচ্ছলে পুজো করতে বসতেন ভবা। মাটি দিয়ে তৈরি হত মূর্তি, সন্দেশ। তবে একবার, এমনই খেলাচ্ছলে পুজোর পর ঘটে গেল এক অদ্ভূত ঘটনা। মাটির সন্দেশ বদলে গেল আসল ছানার সন্দেশে। যা দেখে সেদিন শুধু ভবার বন্ধুরা নয়, অবাক হয়ে গিয়েছিলেন পাড়া প্রতিবেশীরাও।
ভবার অলৌকিক ক্ষমতা
ভবার ভক্তদের মধ্যে প্রায় সকলেরই বিশ্বাস ছিল যে তাঁর মধ্যে অনেক অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে। তার প্রমাণও নাকি কয়েকবার পাওয়া গিয়েছে। শোনা যায়, একবার এক পথিক পেটের যন্ত্রণায় প্রচণ্ড কষ্ট পাচ্ছিলেন। গয়াসুন্দরী তা দেখে পথিককে সাহায্য করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পথিকের যন্ত্রণার কিছুতেই উপশম হচ্ছিল না। আচমকাই সেখানে উপস্থিত হন ভবা। তিনি পথিকের পেটে তাঁর বাম হাতের দুটি আঙুল রেখে এমন কিছু করেন, যার জেরে মুহূর্তের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন রোগী। আবার একবার নৌকা করে যাওয়ার সময় এক বালিকার মৃতদেহ দেখতে পান ভবা। বালিকার দেহ দেখে ভবার মন কষ্টে চঞ্চল হয়ে ওঠে। তারপরেই নাকি তিনি কোনও এক অলৌকিক উপায়ে ওই বালিকার দেহে প্রাণ ফিরিয়ে আনেন।
মানুষের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ দেখতেন না ভবাপাগলা। তাঁর কাছে ধনী, দরিদ্র, উঁচু, নিচু সবাই সমান। পূর্ব বর্ধমানের কালনায় রয়েছে ভবাপাগলার মন্দির (Kalna Bhaba Pagla Ahram), যেখানে সারাবছর ভিড় লেগেই থাকে ভক্তদের। সেখানে রয়েছেন ভবার আরাধ্যা দেবীও। আর দেবী মূর্তির মুখোমুখিই রয়েছে ভবার সমাধি। গোটা জীবনে সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে ভবা দিয়ে গিয়েছেন শুধুই ঈশ্বরকে সাধনা, প্রেম ও ভালবাসার বার্তা। আর ভবার সেই শিক্ষাকেই পাথেয় করে আজও এগিয়ে চলেছেন তাঁর ভক্তরা।
আরও পড়ুন - এড়িয়ে চলুন খুব টাইট জিন্স, গোপনাঙ্গ-সহ আর কী কী ক্ষতি জানেন?