বৈদিক জ্যোতিষ শাস্ত্রে সূর্য ও চন্দ্রগ্রহ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। জেনে রাখুন এই বছরের শেষ চন্দ্রগ্রহণ হতে চলেছে ২৮ অক্টোবর। হিন্দু পঞ্চাঙ্গ অনুসারে, এইদিন আবার আশ্বিন মাসের পূর্ণিমাও রয়েছে, যেটাকে শারদ পূর্ণিমাও বলা হয়। তবে এই চন্দ্রগ্রহণ ভারত থেকে দেখা যাবে না। এই কারণে সূতক কালও ধরা হবে না। এ বছর শারদ পূর্ণিমা পালিত হবে ২৮ অক্টোবর যা আপামর বাঙালির কাছে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর বিশেষ দিন। এবারের কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে চন্দ্রগ্রহণও ঘটবে। শারদ পূর্ণিমায় চন্দ্র দেবতা ও মা লক্ষ্মীর পুজো করা হয়। কোজাগরী পূর্ণিমার দিন দেবী লক্ষ্মীকে পুজো করলে তিনি প্রসন্না হন। শারদ পূর্ণিমার সময় অনেকেই চাঁদের আলোর নীচে পায়েস রেখে দেন। কিন্তু চন্দ্রগ্রহণ ওই একই দিনে হওয়ার জন্য মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। আসুন জেনে নিই শারদ পূর্ণিমার সব খুঁটিনাঁটি।
কবে শারদ পূর্ণিমা
হিন্দু পঞ্চাঙ্গ অনুসারে, ২৮ অক্টোবর ভোর ৪টে ১৭ মিনিট থেকে পূর্ণিমা শুরু হয়ে যাবে। যেটা ২৯ অক্টোবর দুপুর ১টা ৫৩ মিনিটে শেষ হবে।
চন্দ্রগ্রহণ কবে
প্রত্যেক বছর শারদ পূর্ণিমার দিন চন্দ্রগ্রহণ হয়। বছরের দ্বিতীয় ও শেষ চন্দ্রগ্রহণ ২৮ অক্টোবর রাত ১টা ৫ মিনিট থেকে শুরু হয়ে যায়। এর সঙ্গে গ্রহণের মোক্ষ রাত ২টো ২৪ মিনিট পর্যন্ত থাকবে। এরকম অবস্থায় সূতক কাল ৯ ঘণ্টা আগেই শুরু হয়ে যায়। সূতক কাল শুরু হবে দুপুর ৪টে বেডে ৫ মিনিটে।
শারদ পূর্ণিমার ধার্মিক গুরুত্ব
সনাতন ধর্মে শারদ পূর্ণিমার বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। কথিত আছে যে শারদ পূর্ণিমায় চাঁদ ১৬ কলাতে পূর্ণ হয়ে যায়। এইদিন চন্দ্রদেবের পুজোর সঙ্গে সঙ্গে জ্যোৎস্না রাতে পায়েস বানিয়ে রেখে দেওয়া হয়। বলা হয় যে এই রাতে আকাশ থেকে অমৃত ঝরে। এরকম অবস্থায় পুজো পাঠ করার পাশাপাশি খোলা আকাশের নীচে পায়েস রাখাও শুভ। এইদিন সত্যনারায়ণের পুজোও করা হয়ে থাকে।
কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো
এছাড়াও ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে চাঁদের রশ্মি অমৃত বর্ষণ করে, তাই রাতে চাঁদের আলোতে ক্ষীর রাখা হয় এবং তারপর তা পুজোর পরে প্রসাদ হিসাবে খাওয়া হয়। তবে এ বছর ২৮ অক্টোবর কোজাগরী পূর্ণিমায় চন্দ্রগ্রহণের কারণে এইভাবে অর্চনা করা সম্ভব হবে না। কিন্তু এই পূর্ণিমার দিনে যদি সঠিক উপায়ে দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়, তাহলে মা লক্ষ্মী প্রসন্ন হবেন এবং প্রচুর ধন-সম্পদ ও সমৃদ্ধি দেবেন। হিন্দু ধর্মে পুজা রীতিতে পান ব্যবহার করা হয়। কোজাগরী পূর্ণিমায় দেবী লক্ষ্মীর আরাধনায় পানের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই দিনে মা লক্ষ্মীকে পান পাতা নিবেদন করলে তাঁর বিশেষ আশীর্বাদ পাওয়া যায়। এছাড়াও দেবী লক্ষ্মীর জন্য প্রস্তুত করা পানটি নিবেদন করুন এবং তারপরে পরিবারের সদস্যরা এটিকে প্রসাদ হিসাবে গ্রহণ করুন।
লক্ষ্মী পুজোর মুহূর্ত
পঞ্জিকা অনুসারে আগামী ২৯ অক্টোবর ২০২৩ রবিবার কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো পড়েছে। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সেদিন ১০ কার্তিক ১৪৩০। পূর্ণিমা লাগবে ২৮ অক্টোবর বা ৯ কার্তিক রাত ৩টে ৪২ মিনিটে এবং পূর্ণিমা ছেড়ে যাবে ২৯ অক্টোবর বা ১০ কার্তিক রাত ১টা ৫৬ মিনিটে। উদয়া তিথি অনুসারে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো পালিত হবে ২৯ অক্টোবর। অর্থাত্ দেখা যাচ্ছে পূর্ণিমা পড়া ও গ্রহণ শুরু হওয়ার মাঝে অনেকটা সময় হাতে পাওয়া যাচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে পুজো করে নেওয়া সম্ভব হবে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
কখন পায়েস রাখা যাবে
শারদ পূর্ণিমা ও চন্দ্রগ্রহণ একইদিনে পড়েছে। গ্রহণের সময় চাঁদের আলো ক্ষতিকর বলে মনে করা হয়। শারদ পূর্ণিমার রাত নিশিথ কালরাত ১২টা থেকে ভোররাত ৩টে পর্যন্ত থাকে, যেটাকে মধ্যরাত বলা হয়। এইদিন মা লক্ষ্মীর পুজোর সঙ্গে খোলা আকাশের নীচে পায়েস বানিয়ে রাখার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু চন্দ্রগ্রহণ থাকার কারণে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। জ্যোতিষবিদদের মতে, চন্দ্রগ্রহণের সূতক কাল শুরু হওয়ার আগে পায়েস বানিয়ে রাখা যায়। এরপর এতে তুলসী পাতা দিয়ে রাখুন। এতে গ্রহণের অশুভ প্রভাব পড়বে না। চন্দ্রগ্রহণ শেষ হওয়ার পর ভোরে পায়েস খোলা আকাশের নীচে রাখা যেতে পারে।