অযোধ্যার রাম মন্দিরে এই প্রথমবার রাম নবমী পালিত হচ্ছে। আর এই বিশেষ দিনে ঘটতে চলেছে এক আশ্চর্য ঘটনা। রাম নবমীর শুভ লগ্নে রামলালার বিগ্রহের ঠিক কপালে এসে পড়বে সূর্যালোকের এক সূক্ষ রেখা। এটি 'সূর্য অভিষেক' বা 'সূর্য তিলক' বলে পরিচিত।
এই সময়, সূর্যের রশ্মি 'সূর্য তিলক' হিসাবে রাম লালার কপালে অবস্থান করবে। এটি ধার্মিক দিক থেকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ ভগবান রাম ইশ্বকু বংশের, অর্থাৎ, তিনি সূর্যের বংশধর বা সূর্যবংশী বলে মনে করা হয়।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, রুরকি, (IIT-R)-র বিজ্ঞানীরা সূর্য তিলকের এই মেকানিজম ডিজাইন করেছিলেন।
সূর্য তিলক বা সূর্য অভিষেক কী?
সূর্য অভিষেক শব্দটি সূর্য (সূর্য) এবং অভিষেক (একটি শুদ্ধিকরণ অনুষ্ঠান) থেকে তৈরি হয়েছে।
সূর্য অভিষেক আসলে আলোকবিদ্যা এবং মেকানিজমের এক দুর্দান্ত খেলা বলা যেতে পারে। প্রতি বছরের নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট সময়ে সূর্যের রশ্মি দেবতার কপালে এসে পড়বে।
তবে, এই পদ্ধতির ব্যবহার একেবারে নতুন কিছু নয়। ভারতীয় উপমহাদেশের বহু প্রাচীন মন্দিরেই এই প্রযুক্তি দেখতে পাওয়া যায়।
রাম মন্দিরেও সেই একই মেকানিজম ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এর ইঞ্জিনিয়ারিং একটু ভিন্ন।
রাম নবমীতে অযোধ্যা রাম মন্দিরে সূর্যাভিষেক
ঠিক ১৭ এপ্রিল দুপুর ১২ টায়, সূর্যের রশ্মি প্রায় দুই থেকে আড়াই মিনিটের জন্য রাম মন্দিরের গর্ভগৃহে উপবিষ্ট রাম লালার কপালকে আলোকিত করবে।
রাম লালার কপালের আলো একটি 'সূর্য তিলক' তৈরি করবে।
রাম মন্দির তৈরির সময়েই এই সূর্য তিলকের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, রুরকি (আইআইটি-আর)-র বিজ্ঞানীদের উপর এই সূর্য তিলক ডিজাইনের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
'সূর্য তিলক মেকানিজম'-এর মডেল
রাম নবমীতে (চলতি বছর ১৭ এপ্রিল) সূর্যাভিষেক যাতে ঠিকঠাক হয়, সেটা নিশ্চিত করার জন্য ইতিমধ্যেই দু'বার টেস্ট করা হয়েছে। IIT-র টিম একটি নির্দিষ্ট স্থানে সূর্যের রশ্মিকে রাম লালার কপালে সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়ার জন্য উচ্চমানের আয়না এবং লেন্স সহ একটি যন্ত্র বসিয়েছে।
রিপোর্ট অনুসারে, আয়না এবং লেন্স দিয়ে সাজানো একটি বিশেষ গিয়ারবক্সের মাধ্যমে এই অসাধ্য সাধন হবে। শিকারার কাছে চার তলা থেকে সূর্যের রশ্মিকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে গর্ভগৃহে প্রতিফলিত করা হবে।
'তিলক যন্ত্র' নামের এই মেকানিজমটি পিতল এবং ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরি। চন্দ্র ক্যালেন্ডারের উপর ভিত্তি করে, গিয়ারবক্সটি প্রতি বছর রাম নবমীর দিনে সূর্য অনুযায়ী সঠিকভাবে অবস্থান করার জন্য ইঞ্জিনিয়ার করা হয়েছে।
অপটিক্যাল পাথ, পাইপিং এবং টিপ-টিল্ট, দীর্ঘায়ু এবং কম রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনওরকম স্প্রিং ছাড়াই ডিজাইন করা হয়েছে।
সূর্য তিলক যন্ত্রে পঞ্চ ধাতুও ব্যবহার করা হয়েছে। প্রাক্তন ইসরো বিজ্ঞানী, মনীশ পুরোহিত সূর্য অভিষেকের পিছনের প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, সূর্যের রশ্মি যাতে রাম লালার কপাল আলোকিত করে, তা নিশ্চিত করতে তিনটি জিনিসকে কাজে লাগানো হচ্ছে- আর্কিওঅ্যাস্ট্রোনমি, মেটোনিক চক্র এবং অ্যানালেমা।
আর্কিওঅ্যাস্ট্রোনমি হল আকাশে গ্রহ-তারার অবস্থান বিবেচনা করে স্থাপত্য ডিজাইন করা। অ্যানালেমা, হল পৃথিবী কতটা হেলে আছে এবং কক্ষপথের ভিত্তিতে সূর্যের অবস্থান ট্র্যাক করা।
মেটোনিক চক্র হল প্রায় ১৯ বছরের একটি সময়কাল। এই সময়কালের মধ্যে চাঁদের অবস্থান পর পর পর্যবেক্ষণ করা যায়।
ভারতজুড়ে বেশ কয়েকটি জৈন মন্দির এবং হিন্দু সূর্য মন্দিরে সূর্য অভিষেক হয়। যেমন তামিলনাড়ুর সুরিয়ানার কোভিল মন্দির, অন্ধ্রপ্রদেশের নানারায়ণস্বামী মন্দির, মহারাষ্ট্রের মহালক্ষ্মী মন্দির, গুজরাটের কোবা জৈন মন্দির, ওড়িশার কোনার্ক সূর্য মন্দির, রাজস্থানের রণকপুর জৈন মন্দির, কর্ণাটকের গাভি গঙ্গাধরেশ্বরা মন্দিরে।