হিন্দুদের নানা দেবদেবীর মধ্যে একজন মহাদেবী হলেন সন্তোষী মা। এই দেবীকে সন্তোষের অধিষ্ঠাত্রী দেবী বলে অভিহিত করা হয়। বিশেষত উত্তর ভারত ও নেপাল-এর মহিলারা সন্তোষী মায়ের পুজো করেন। তবে ধীরে ধীরে দেবীর মহিমা এদেশের অন্যান্য প্রান্তে, এমনকী পশ্চিমবঙ্গেও ছড়িয়ে পড়েছে। বহু বাঙালি সন্তোষী মায়ের ব্রত পান করেন বর্তমানে।
ষাটের দশকের শুরুতে সন্তোষী মায়ের প্রথম প্রচার হয়। মৌখিক কথা-কাহিনি, ব্রতের বিবরণী সংবলিত পুথি, পোষ্টার ইত্যাদির মাধ্যমে তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। দেবীর জন্ম শুক্রবারে পূর্ণিমা তিথিতে হয়। এজন্যে সন্তোষী মায়ের পুজোর জন্য শুক্রবার দিনটি শ্রেষ্ঠ। দেবী সন্তোষী চতুর্ভুজা তথা রক্তবস্ত্র পরিহিতা, হাতের দুটিতে ত্রিশূল ও তলোয়ার ধারণ করেন ও বাকি দুই হাতে বরাভয় ও সংহার মুদ্রা থাকে তার। সন্তোষী মায়ের ত্রিশূল পাত তিনটি গুণের (সত্য,রজ ও তম) প্রতিক ও তলোয়ারটি জ্ঞানের প্রতীক।
পৌরাণিক মত অনুযায়ী তিনি গণেশের কন্যা। গণেশের দুই ছেলে শুভ ও লাভের ইচ্ছে হয় বোনের হাতে রাখি পরবেন। পুত্রদের মনোবাসনা পূর্ণ করতে এক কন্যার সৃষ্টি করেন গণপতি।দাদাদের মনের ইচ্ছে পূর্ণ করলেন বলে, তাঁর নাম হল সন্তোষী। বাঘের পিঠে আসীন এই দেবী পূজিতা হন দুর্গার অবতার রূপেও।
দেবী সন্তোষীর ব্রত পালনের নিয়ম
* প্রচলিত বিশ্বাস হল, পরপর ১৬ সপ্তাহ ধরে এই ব্রত পালন করে, উদযাপন দিলে ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়।
* এই পুজোতে পুরোহিত লাগে না। সবাই করতে পারবেন।
* ঘরের এক কোণ পরিষ্কার করে আসন পেতে, প্রতিষ্ঠা করুন দেবী ছবি। বাড়ির সিংহাসনেও রোজ বাকি দেব- দেবীর সঙ্গে নিত্য পুজো করতে পারেন। তবে শুক্রবার করে বিশেষভাবে ব্রত পালন করতে হবে।
* শুক্রবার সকালে স্নান সেরে পরিষ্কার বসনে দেবীর সামনে ঘট প্রতিষ্ঠা করুন। ঘটে গঙ্গাজল দিয়ে পূর্ণ করে, ঘটের উপর একটি ফল রাখুন। ঘটে গোটা ফল হিসাবে কলা দেবেন।
* ঘট স্থাপন করবেন বট, কাঠাল, পাকুড় পাতা দিয়ে। আম্র পল্লব দেবেন না । পুজোতে সব ফুলই চলবে। তবে বেলপাতা আবশ্যক।
* ঘটে পুত্তলিকা আঁকুন, সিঁদুরে ঘি মিশিয়ে। ঘি প্রদীপ পূজাতে ব্যবহার করবেন ।
* ধূপ-দীপ জ্বালিয়ে ফুল, মালা, বেলপাতা দিয়ে পুজো করুন সন্তোষী মায়ের। প্রসাদ হিসাবে দিন ছোলা, গুড় এবং কলা।
* প্রথমে সন্তোষী মায়ের বাবা গণেশ এবং দুই মা ঋদ্ধি ও সিদ্ধির পুজো করুন। এরপর সন্তোষী দেবীর ব্রতকথা পাঠ করুন।
* পাঠ শেষে শঙ্খ ও উলুধ্বনি দিন। প্রণাম করে বলুন, 'জয় সন্তোষী মা' !
* মায়ের পুজোতে সর্ষের তেল ব্যবহার করতে নেই। ঘিয়ের প্রদীপ দিন। এরপর আরতি করে শান্তির জল ছিটিয়ে দিন বাড়ির সর্বত্র।
* পুজো শেষে মায়ের প্রসাদ গোমাতাকে অল্প দিয়ে নিজে গ্রহণ করুন।
* শুক্রবার যিনি ব্রত করবেন সারা দিন উপবাস থাকবেন । দুধ, ছোলা ঘি, আলু দিয়ে ভেজে, মিষ্টি ফল, জল খেতে পারেন। অসমর্থ হলে একবেলা উপবাস রেখে, অপর বেলা আলু সেদ্ধ, ঘি, আতপ চালের ভাত খেতে পারেন।
* উদযাপনের দিন একটি নারকেল ফাটিয়ে সেই জল মায়ের চরণে দেবেন। নারকেল মায়ের সামনে ফাটাতে হবে এক আঘাতে। ফাটানোর সময় মায়ের নামে জয়ধ্বনি দেবেন।
কোন নিয়ম না মানলে বিপদ
* মা সন্তোষীর পুজোতে টক বস্তু, আমিষ দ্রব্য প্রদান নিষেধ।
* খেয়াল রাখবেন এদিন বাড়ির কোনও সদস্য বা যিনি ব্রত পালন করছেন, তিনি যেন ভুলেও টক খাবার না খান।
* ছানা থেকে তৈরি কোনও মিষ্টি মাকে দেবেন না।
* ১৬ শুক্রবার ব্রত হলে উদযাপন করে, উদযাপনের দিন ৭ জন বালককে ভোজন করাতে হয়। খেয়াল রাখতে হবে সাত বালক যেন সেদিন টক বস্তু না খায়।
ভক্তিভরে যে নারী এই ব্রত উদযাপন করে, তার সব কামনা পূরণ হয়। গৃহে অর্থাভাব থাকে না। মায়ের কৃপায় জীবন ও সংসার সুখে শান্তিতে ভরে থাকে।
দেবী সন্তোষীর মন্ত্র
ওঁ শ্রী সন্তোষী মহামায়ে গজানন্দম দায়িনী শুক্রবার প্রিয়ে দেবী নারায়ণী নমস্তুতে