
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ষোড়শ অধ্যক্ষ স্বামী স্মরণানন্দ মহারাজ অসুস্থ। শারীরিক অসুস্থতার কারণে বুধবার সকালে তাঁকে কলকাতার বাইপাস সংলগ্ন একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বুধবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ স্বামী স্মরণানন্দ মহারাজকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তাঁরা শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলেই জানা যাচ্ছে। এখন চিকিৎসকেরা তাঁর একাধিক পরীক্ষা করছেন।
শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা রয়েছে
বুধবার শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা কারণে বাইপাসের ধারে পিয়ারলেস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বেলুড় মঠের প্রেসিডেন্ট মহারাজকে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, তার অবস্থা এই মুহূর্তে স্থিতিশীল। হাসপাতালে ভর্তি করানোর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই যাবতীয় সমস্ত রুটিন পরীক্ষা করানো হয়েছে মহারাজের। শুরুতে শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হলেও, এই মুহূর্তে তাঁর অক্সিজেন সাপোর্ট লাগছে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ফলে স্বাভাবিক রুম এয়ারেই আছেন তিনি। ইতিমধ্যেই তাঁর অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করে দেওয়া হয়েছে। মহারাজের অবস্থা এই মুহুর্তে স্থিতিশীল হওয়ার ICU তে রাখার কোনও প্রয়োজন নেই বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছেন মহারাজ
হাসপাতালের রেসপাইটরি মেডিসিন বিভাগের জেনারেল কেবিনে বিশিষ্ট চিকিৎসক ডক্টর অজয় সরকারের অধীনে ভর্তি আছেন মহারাজ। হাসপাতাল সূত্রে দাবি, রামকৃষ্ণ মিশনের যে সমস্ত চিকিৎসকরা বরাবর তাঁর চিকিৎসা করে আসছেন তাদেরকেও মহারাজের চিকিৎসক দলে রাখা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট মহারাজের বয়স ৯২ বছর হওয়ার কারণে চিকিৎসকরা শুরুতে কিছুটা চিন্তিত হলেও, এই মুহূর্তে আশঙ্কার কোন কারণ নেই বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা। তবে তাঁর সব পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পেলেই চিকিৎসার পরবর্তী ধাপ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
২০১৭ সালে মিশনের ষোলোতম অধ্যক্ষ হন স্বামী স্মরণানন্দ
স্বামী আত্মস্থানন্দের মহা প্রয়াণের পর মিশনের প্রবীণ সন্ন্যাসীদের মধ্যে প্রথমসারিতে ছিলেন স্বামী স্মরণানন্দ। ২০১৭ সালের ১৮ জুন প্রয়াত হয়েছিলেন রামকৃষ্ণ মঠের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট স্বামী আত্মস্থানন্দ। তাঁর পরবর্তীতে সঙ্ঘের পরবর্তী অধ্যক্ষ হিসেবে স্বামী স্মরণানন্দকে বেছে নিয়েছিলেন রামকৃষ্ণ মঠের অছি পরিষদ এবং রামকৃষ্ণ মিশনের পরিচালন সমিতি। ১৯২৯ সালে তামিলনাড়ুর তাল্লাভুর জেলার আন্দামি গ্রামে জন্ম স্বামী স্বরণানন্দের। ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন খুব মেধাবী। মাত্র ২০ বছর বয়সে রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের মুম্বই শাখার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ঘটে। শ্রীরামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে, ১৯৫২ সালে, মাত্র ২২ বছর বয়সে মুম্বই আশ্রমে যোগ দেন স্বামী স্মরণানন্দ। ১৯৫৬ সালে সঙ্ঘের সপ্তম অধ্যক্ষ শঙ্করানন্দজীর কাছে ব্রহ্মচর্য ব্রতে দীক্ষিত হন এবং ১৯৬০ সালে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। তখন তাঁর নাম হয় স্বামী স্মরণানন্দ। ১৯৫৮ সালে তিনি মুম্বই আশ্রম থেকে অদ্বৈত আশ্রমের কলকাতা শাখায় আসেন তিনি। ১৯৭৬ সালে তিনি বেলুড় মঠের পাশেই রামকৃষ্ণ মিশন সারদাপীঠ নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্পাদক হন স্বামী স্বরণানন্দ। দীর্ঘ ১৫ বছর সেখানে থাকাকালীন বিভিন্ন সেবামূলক কাজে যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৭৮ সালের বিধ্বংসী বন্যার সময় সহ সন্ন্যাসীদের নিয়ে ত্রাণের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে তিনি চেন্নাই রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ হন। ২০০৭ সালে সঙ্ঘের সহ-অধ্যক্ষ নির্বাচিত হন তিনি।