scorecardresearch
 

শ্রাবণের তৃতীয় সোমবারে রইল বাংলার প্রসিদ্ধ শিবমন্দিরগুলির ইতিহাস

কোভিড (Covid 19) সংক্রমণ রুখতে তারকেশ্বর সহ বিভিন্ন মন্দিরে জারি করা হয়েছে বিবিধ বিধিনিষেধ। তবে ভক্ত সমাগম ও ভিড়ের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকলেও পুজো কিন্তু হচ্ছে একেবারেই নিয়ম মেনে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় রয়েছে বহু প্রসিদ্ধ শিবমন্দির। প্রায় সব মন্দিরেই কোভিড বিধি (Covid Protocols) মেনেই চলছে দেবাদিদেবের আরাধনা। একবার দেখে নেওয়া যাক বাংলার সেইসমস্ত বিখ্যাত শিবমন্দিরগুলির ইতিহাস। 

Advertisement
শিবলিঙ্গ শিবলিঙ্গ
হাইলাইটস
  • শ্রাবণ মাসে বিশেষ পুজো হয় ভগবান শিবের
  • করোনাকালে এবার মন্দিরগুলিতে ভিড়ের চিত্রটা ভিন্ন
  • জেনে নিন রাজ্যের বেশকিছু বিখ্যাত শিবমন্দিরের ইতিহাস

শ্রাবণ (Shravan Month) হল শিবের মাস। গোটা শ্রাবণ মাস ধরেই বিভিন্ন শিবমন্দিরে চলে বাবা ভোলানাথের মাথায় জল ঢালা ও পূজার্চনা। বিশেষত সোমবারগুলিতে উপচে পড়ে পুণ্যার্থীদের ভিড়। তবে করোনাকালে (Corona) গতবছরের মতো এবারেও শিবমন্দিরগুলিতে ভিড়ের ছবিটা অনেকটাই অন্যরকম। কোভিড (Covid 19) সংক্রমণ রুখতে তারকেশ্বর সহ বিভিন্ন মন্দিরে জারি করা হয়েছে বিবিধ বিধিনিষেধ। তবে ভক্ত সমাগম ও ভিড়ের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকলেও পুজো কিন্তু হচ্ছে একেবারেই নিয়ম মেনে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় রয়েছে বহু প্রসিদ্ধ শিবমন্দির। প্রায় সব মন্দিরেই কোভিড বিধি (Covid Protocols) মেনেই চলছে দেবাদিদেবের আরাধনা। একবার দেখে নেওয়া যাক বাংলার সেইসমস্ত বিখ্যাত শিবমন্দিরগুলির ইতিহাস। 

তারকেশ্বর মন্দির
বাংলার অন্যতম প্রখ্যাত শৈব তীর্থভূমি তারকেশ্বর। এখানে শিব বাবা তারকনাথ নামে পূজিত। শোনা যায়, রাজা ভরমল্ল জঙ্গলে একটি শিবলিঙ্গের স্বপ্ন দেখেন। তারপর তিনিই সেই শিবলিঙ্গ খুঁজে বের করেন। ১৭২৯ সালে সেই শিবলিঙ্গের ওপরেই গড়ে ওঠে বাবা তারকনাথের মন্দির। তারকেশ্বর মন্দির সংলগ্নই রয়েছে একটি জলাশয়, যার নাম দুধপুকুর। ভক্তদের বিশ্বাস, দুধপুকুরে স্নান করলে মনের সব আশা পূর্ণ হয়। শোনা যায় শ্রী শ্রী সারদাদেবী নাকি বেশকয়েকবার এই মন্দির পুজো দিতে গিয়েছিলেন। 

ঘণ্টেশ্বর মন্দির
ঘণ্টেশ্বর মন্দির

ঘণ্টেশ্বর মন্দির
হুগলি জেলারই আরও এক বিখ্যাত শৈবক্ষেত্র হল খানাকুলের বাবা ঘণ্টেশ্বরের মন্দির। সতীপীঠ রত্নাবলী মন্দিরের কাছেই বাবা ঘণ্টেশ্বরের অবস্থান। শোনা যায়, বহুকাল আগে খানাকুলেরই পার্শ্ববর্তী এক গ্রামের বাসিন্দা বটুক কারকের একটি গরু রোজ একটি শিমূল গাছের পাশে দুধ দিত। কিন্তু কোনও দিনই বাড়িতে দুধ দিত না গরুটি। প্রতিদিন একই ঘটনা দেখে মনে প্রশ্ন জাগে বটুকবাবুর। কৌতুহলের বশেই তিনি একদিন সেই নির্দিষ্ট জায়গাটি খনন করেন। কিছুটা খনন করতেই দেখা মেলে বাবা ঘণ্টেশ্বরের। একসময় নাকি তালপাতা ও মাটির ঘরেই থাকতেন বাবা ঘণ্টেশ্বর ও মা রত্নাবলী। পরবর্তীকালে
গ্রামবাসীদের দান করা জমিতে গড়ে ওঠে মন্দির। 

Advertisement

এক্তেশ্বর মন্দির
বাঁকুড়া জেলায় দ্বারকেশ্বর নদীর তীরে প্রসিদ্ধ এক শৈব তীর্থভূমি হল এক্তেশ্বর মন্দির। ইতিহাস অনুসারে, বিষ্ণুপুরের রাজা এই মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। মূলত ল্যাটেরাইটে নির্মিত হলেও পরবর্তীতে বেলেপাথর ও ইটের কাজও এই মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত হয়। মন্দিরের উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট। শোনা যায়, মন্দিরের শিবলিঙ্গটি নাকি অনেকটা মানুষের পায়ের মতো দেখতে। কেউ কেউ আবার বলেন, মন্দিরে ভগবান শিবের একপদবিশিষ্ট মূর্তি পূজিত হয়। তাই অনেকে এক্তেশ্বরকে একপদেশ্বরও বলেন। যদি মন্দিরের বর্তমান মূর্তিটি অবশ্য একপদেশ্বরের নয়। 

কলেশ্বর-কলেশনাথ
বীরভূমের কলেশ্বর গ্রামের প্রধান পূজিত দেবতাই হলেন কলেশনাথ। মন্দিরের উচ্চতা ১০০ ফুটেরও বেশি। ফাল্গুন মাসে শিবচতুর্দশীতে সবচেয়ে বড় উৎসব উদযাপিত হয় এই মন্দিরে। প্রসাদ গ্রহণ করেন হাজার হাজার পুণ্যার্থী। একইসঙ্গে বসে মেলাও। বলতে গেলে এটাই এই এলাকার প্রধান উৎসব। তাছাড়াও সারাবছরই কমবেশি ভক্তসমাগম হয় কলেশনাথের দ্বারে। 

কালনার ১০৮ শিবমন্দির
কালনার ১০৮ শিবমন্দির

১০৮ শিবমন্দির
বাংলার শৈবক্ষেত্রগুলির বিষয়ে বলতে গেলে খুব স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে বর্ধমানের নবাবহাটের ১০৮ শিবমন্দিরের কথা। মহারানি বিষ্ণুকুমারীদেবী ১৭৮৮ সালে প্রথম এই ১০৮ শিবমন্দির তৈরি করেন। এই মন্দিরটি আয়তাকার। পরবর্তীকালে ১৮০৯ খৃষ্টাব্দে কালনায় আরও একটি ১০৮ শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন বর্ধমানের মহারাজা তেজচন্দ্র বাহাদুর। কালনার ১০৮টি শিবমন্দিরটি অবশ্য গোলাকৃতি। সমগ্র ভারতবর্ষে শুধুমাত্র এই দুই জায়গাতেই রয়েছে ১০৮ শিবমন্দির। 

জল্পেশ মন্দির
এবার চোখ রাখা যাক উত্তরবঙ্গের দিকে। উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার প্রসিদ্ধ তীর্থক্ষেত্র হল জল্পেশ মন্দির। ভ্রামরী শক্তিপিঠের ভৈরব হলেন জল্পেশ। শিব এখানে গর্তের মধ্যে রয়েছেন, তাই তিনি অনাদি নামেও পরিচিত। কোচবিহারের মহারাজা নরনারায়ণের বাবা বিশ্ব সিংহ ১৫২৪ সালে প্রথম এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ১৫৬৩ সালে মন্দিরটি পুনর্নির্মিত হয়। ঠিক ১০০ বছর পর ১৬৬৩ সালে রাজা প্রাণ নারায়ণও একবার মন্দিরটি নতুন করে গড়ে তোলেন। একটা সময় মন্দিরটি বৈকুণ্ঠপুরে রায়কতদের তত্ত্বাবধানে আসে। এরপর ১৮৯৯ সালের ৩০ জানুয়ারি রাজা জগেন্দ্রদেব রায়কতের স্ত্রী রানি জগদেশ্বরীদেবীর হাত ধরে মন্দিরের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়।  

মহাকাল শিবমন্দির
উত্তরবঙ্গের আরও এক বিখ্যাত শৈবভূমি হল দার্জিলিং-এর মহাকাল মন্দির। এখানকার প্রধান বৈশিষ্ঠই হল হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের সহাবস্থান। আরও খোলসা করে বললে বলতে হয়, মন্দিরের গর্ভে ভগবান শিবের পাশেই রয়েছেন বুদ্ধদেব। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা 'দোর্জে' ও 'লিং', এই দুটি শব্দ থেকে এখানকার নামকরণ করেন। যার অর্থ হল 'বজ্রের দেশ'। 

 

Advertisement