সনাতন সংস্কৃতিতে নির্দিষ্ট দিনে মন্দিরে গিয়ে পুজো করতে হবে এমন রীতি নেই। ঘরেও ভক্তিভরে পুজো করা যায়। ঘরে বসেও শিবসাধনা সম্ভব। প্রতিদিন ঘরে পুজো দেওয়াও সনাতন সংস্কৃতির অংশ। তাই সকল হিন্দুর ঘরেই থাকে ছোট্ট ঠাকুরঘর। যাঁদের আবাস ছোট তাঁরা ঠাকুর-দেবতা রাখেন ঘরের একটা কোণে। সেখানেই কাঠের বা পাথরের সিংহাসনে রাখেন দেবদেবীদের। সাত্ত্বিক জীবন যাপন এবং নিয়মিত ঈশ্বর আরাধনা করলে ফল মেলে বলে মনে করেন সনাতনীরা। তবে বাড়ির ঠাকুর রাখার জায়গায় এমন অনেক ভুল হয়ে যায় যে হিতে বিপরীত হয়। যে কারণে পুজো করেও মেলে না কাঙ্ক্ষিত ফল।
শঙ্খনাদ
বাস্তশাস্ত্রে বলা হয় শঙ্খনাদে নেতিবাচক শক্তি দূর হয়। কথিত আছে, যে ঘরে শঙ্খ থাকে লক্ষ্মী সেখানে বাস করেন। ঘরে শঙ্খ রাখলে বাস্তু দোষ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই শঙ্খ কখনও মাটিতে রাখবেন না।
সপরিবারে শিব
ঠাকুর রাখার জায়গায় সিল্কের কাপড়ের উপর রাখুন শিবলিঙ্গকে। কাগজ বা অন্য কিছুর উপরে রাখবেন না। নইলে বাস্তুদোষ হয়। দেখা দেয় আর্থিক অনটন। ঘরে শিবকে রাখলে শক্তিকেও রাখুন। শিব পরিবারের মূর্তি রাখা শুভ বলে বিবেচিত হয়।
রুদ্র অবতার নয়
ঈশ্বরের রুদ্র অবতারের ছবি বা প্রতিমা রাখবেন না। তা অশুভ বলে বিবেচিত হয়। যেমন- কাল ভৈরভ বা কালীর রুদ্র রূপ। বাড়িতে সবসময় হাস্যমুখের ছবি রাখুন। সৌম্য, শান্ত ঈশ্বরকে পুজো করুন। তাঁরা বরাভয় মুদ্রায় রয়েছেন এমন প্রতিমাই রাখুন ঘরে। খেয়াল করে দেখবেন, শ্রীকৃষ্ণের বংশীধারী রূপই বেশি পূজিত হয়। চক্রধারী কৃষ্ণ থাকেন না।
পূর্ব দিকে মুখ
ঈশ্বরের যে কোনও ছবি বা মূর্তি পুজা করার সময় মুখ পূর্ব দিকে থাকা উচিত। পূর্বমুখী না হলে পশ্চিম দিকে মুখ করে পুজো করুন।
মৃত মানুষের মূর্তি-ছবি এড়িয়ে চলুন
অনেকে বাড়ির ঠাকুর ঘরে মহাপুরুষ, সাধুসন্ত বা প্রয়াত পূর্বপুরুষদের ছবি রাখেন। শাস্ত্রের দৃষ্টিতে তা ন্যায়সঙ্গত নয়। শাস্ত্রমতে ঈশ্বর সৃষ্ট মানুষ কখনও ঈশ্বরের সমকক্ষ হতে পারেন না। মহাপুরুষদের জন্য আলাদা জায়গা বেছে নিন।
আবর্জনা রাখবেন না
পুজো-অর্চনার পর অবশিষ্ট পুজোর সামগ্রী, হোমের পোড়া কাঠ বা উচ্ছিষ্ট অনেকে পুজোর জায়গার পাশে রেখে দেন। এটা করবেন না। এতে অলক্ষ্মী আসে ঘরে। সঙ্গে সঙ্গে আবর্জনা ফেলে দিন।
দেওয়ালের রং
পুজোর ঘরের দেওয়ালের রং হলুদ, সবুজ বা হালকা গোলাপি শুভ। তবে যা-ই রং করান না কেন তা যেন এক রঙেরই হয়।
বাসি ফুল নিবেদন নয়
পুজোর সময় দেবতাকে তাজা ফুলই দেবেন। বাসি ফুল দিয়ে পুজো করবেন না। মাটিতে পড়ে থাকা ফুল ভুলেও তুলবেন না। তুলসী পাতা সতেজ থাকে বলে ধারণা সনাতনী সংস্কৃতিতে। বাসি তুলসী পাতা জল দিয়ে ধুয়ে দিতে পারেন।
ঈশ্বরের একাধিক মূর্তি নয়
বাড়িতে পুজোর জায়গায় যে কোনও দেবতার একাধিক মূর্তি রাখবেন না। অনেকে মূর্তি ফেলতে চান না। পুরনো মূর্তিও রেখে দেন। এটা করবেন না। এতে ঘরে অশান্তি হয়। কাজকর্ম বিগড়ে যায়। শুভ দিনে প্রতিমা স্থাপন করুন। আর পুরনো মূর্তি বা ছবি নদী বা খালে ভাসিয়ে দিন।
আরও পড়ুন- ১ টাকার কয়েন কাটবে অর্থের অনটন, জানুন উপায়