বট সাবিত্রী ব্রত পালনে ব্যস্ত বিবাহিত মহিলারা। হিন্দু রীতি অনুযায়ী, জৈষ্ঠ্য মাসের অমাবস্যা তিথিতে বট সাবিত্রী ব্রত পালন করার পরম্পরা রয়েছে। স্বামীর দীর্ঘ জীবন কামনাতেই এই বট সাবিত্রী ব্রত পালন করেন মহিলারা। এই দিন বট গাছের পুজো করেন তাঁরা। করবা চৌথের সঙ্গে তুলনা করা হয় এই বট সাবিত্রী ব্রতর। এই পুজোর শুভ মুহূর্ত কোনটি?
কখন শুভ মুহূর্ত?
জৈষ্ঠ্য মাসের কৃষ্ণ পক্ষের অমাবস্যা তিথি পড়েছে সোমবার, ২৬ মে। এদিন দুপুর ১২টা বেজে ১১ মিনিট থেকে শুরু হবে পুণ্য তিথি। সমাপ্ত হবে ২৭ মে অর্থাৎ মঙ্গলবার সকাল ৮টা বেজে ৩১ মিনিটে।
শুভ সংযোগ
বট সাবিত্রী ব্রতর দিন কাল ভরণী নক্ষত্র, শোভন যোগ এবং অতিগণ্ড যোগের শুভ সংযোগ তৈরি হয়েছে। এর সঙ্গেই অভিজিৎ মুহূর্ত সকাল ১১টা ৫৪ মিনিট থেকে ১২টা ৪২ মিনিট পর্যন্ত। এই সময়টা ব্রত এবং পুজোর জন্য অত্যন্ত শুভ।
বট সাবিত্রী পুজো সোমবার পড়ায় তা আরও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। ফলে এটি সোমবতী অমাবস্যাও বটে। এই সংযোগ অত্যন্ত দুর্লভঊ এবং সৌভাগ্যশালীও বটে। পাশাপাশি চাঁদ এই দিন নিজের উচ্চ রাশি বৃষতে সঞ্চারিত হবে। যা আরও একটি শুভ সংকেত।
বট সাবিত্রী ব্রতর পুজো বিধি
বট বৃক্ষের নীচে সাবিত্রী, সত্যবান এবং যমরাজের মূর্তি স্থাপন করে পুজো করা হয়। বট বৃক্ষের গোড়ায় জল ঢেলে, ফুল-ধূপ এবং মিষ্টি দিয়ে পুজো করাই রীতি। সুতো নিয়ে বট গাছের চারপাশে পরিক্রমাও করা হয়। এরপর গাছের কাণ্ডের চারপাশে সুতোটি বেঁধে দেওয়া হয়। মোট ৭ বার গাছের পরিক্রমা করা হয়। এরপর হাতে ভেজা চানা নিয়ে সাবিত্রী সত্যবানের কথা পাঠন শুনতে হয়। ভেজা চানা, কিছু টাকা আর বস্ত্র নিয়ে শাশুড়ির হাতে তুলে দিয়ে আশীর্বাদ দেন মহিলারা। বট গাছের ফল খেয়েই উপোস ভাঙেন তাঁরা।
পুজোর জন্য আবশ্যক সামগ্রী
বট গাছের নীচেই এই পুজো করা হয়। বট ফল, সাবিত্রী এবং সত্যবানের মূর্তি কিংবা ছবি, ভেজানো কালো চানা, সাদা সুতো, বাঁশের পাখা, সোয়া মিটার কাপড়, লাল এবং হলুদ ফুল, মিষ্টি, বাতাসা, ফল, ধূপ, মাটির প্রদীপ, সিঁদুর, পানের পাতা, সুপুরি, নারকেল, শৃঙ্গার সামগ্রী, জলের কলসি, পুজোর থালা, বট সাবিত্রী ব্রত কথার বই প্রয়োজন হয় পুজোয়।
কেন বটের পুজো করা হয়?
বট গাছ দৈব বৃক্ষ হিসেবেই চিহ্নিত করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর এবং সাবিত্রী বট গাছেই থাকেন। প্রলয়ের শেষে শ্রীকৃষ্ণও এই বট গাছের পাতাতেই প্রকট হয়েছিলেন। তুলসিদাস এই বট গাছকেই তীর্থরাজের ক্ষেত্র বলেছিলেন। এই বৃক্ষ কেবলনাত্র পবিত্রই নয় দীর্ঘায়ুরও প্রতীক। দীর্ঘায়ু, শক্তি, ধার্মিক মাহাত্মের কথা মাথায় রেখে এই গাছকে পুজো করা হয়।