
এবার মুদ্রাস্ফীতির আঁচ লাগল আটার দামেও। এলপিজি, পেট্রোল-ডিজেলের পর এবার আটার দাম বাড়ায় মধ্যবিত্ত পরিবারের বাজেট ঘাঁটতে শুরু করেছে। দেশে আটা গড় খুচরা মূল্য এপ্রিল মাসে ৩২ টাকা ৩৮ পয়সা প্রতি কেজি স্পর্শ করেছে, যা গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত মাসে ভারতে ২০১০ সালের জানুয়ারির পর থেকে আটার দামের সবচেয়ে বড় বৃদ্ধি দেখা গেছে। কারণ, দেশে এবার গমের উৎপাদন এবং মজুদ হ্রাস পেয়েছে। ভারতের গমের মজুদ কৌশলগত এবং কর্মক্ষম প্রয়োজনীয়তাকে ছাড়িয়ে গেছে এবং প্রধানত এই কারণেই দেশে দাম আকাশছোঁয়া হয়েছে। ২০২২-২৩ সালে ভারতে মোট গম উৎপাদন ১০৫০ LMT স্পর্শ করবে বলে অনুমান করা হয়েছে।
আটা-ময়দার দাম আকাশছোঁয়া কেন?
২০২২ সালের মার্চে শেষ হওয়া বছরে ভারত ৭০ LMT গম রপ্তানি করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব বিশ্বব্যাপী সরবরাহ সংকট তৈরি করায় চলতি অর্থবছরে রপ্তানি বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বব্যাপী গমের দাম বেড়েছে এবং এপ্রিল মাসে ভারতে আটার দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। গমের খুচরা মূল্য ২০২১ সালের মার্চ মাসে রেকর্ড করা ২৭.৯০ টাকা থেকে ২০২২ সালের মার্চ মাসে প্রতি কেজিতে ২৮.৬৭ টাকায় সামান্য বেড়েছে। ২০২১ সালের মার্চ মাসে ৩১.৭৭ টাকা প্রতি কেজি থেকে ২০২২ সালের মার্চ মাসে আটার খুচরা দাম সামান্য বেড়ে ৩২.০৩ টাকা প্রতি কেজি হয়েছে।
আটার দাম কতটা বেড়েছে?
পশ্চিমবঙ্গ ভেন্ডর অ্যাসোসিয়েশন (হাওড়া)-এর সভাপতি চন্দন চক্রবর্তী জানান, বাংলায় রোজ যত পরিমাণ আটার প্রয়োজন, এ রাজ্যে এমন কোনও বড় মিল নেই যেখান থেকে সেই পরিমাণ টাহিদার জোগান দিতে পারে। একটা কেন, এ রাজ্যে দশটা বড় মিল মিলিয়েও প্রয়োজনীয় চাহিদা মতো আটার জোগান দিতে পারবে না। ফলে রাজ্যের প্রয়োজন মতো আটার জোগানে বিহার আর উত্তরপ্রদেশের উপর বরাবরই নির্ভর করতে হয়। দেশের প্রায় সর্বত্রই আটার দাম কুইন্টাল প্রতি ৪০ টাকা আর বস্তা প্রতি ২০ টাকা করে বেড়ে গিয়েছে। তাই ভিন রাজ্য থেকে আনা আটা বাড়তি দাম দিয়েই কিনতে হচ্ছে এ রাজ্যের ব্যবসায়ীদের। স্বাভাবিক ভাবেই খুচরো বাজারে আটার দাম আরও কিছুটা বেশি।
গড়িয়াহাট বাজারের এক ব্যবসায়ি জানান, এক সপ্তাহের মধ্যেই আটার দাম কেজিতে ২ টাকা করে বেড়ে গিয়েছে। এক মাসের মধ্যে কেজিতে ৪ টাকা বেড়েছে আটার দাম। তেলের দামের সঙ্গে সঙ্গে সব জিনিসপত্রের দামই বেড়েছে। তার উপর যুদ্ধের প্রভাবও পড়েছে। সব মিলিয়ে আটার দামও অনেকটা বেড়ে গিয়েছে।
গমের অভ্যন্তরীণ দাম
সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে যে সরকার চলতি মরসুমে চলমান ক্রয়ের পাশাপাশি গমের অভ্যন্তরীণ দামের উপর ক্রমাগত নজরদারি করছে এবং যে কোনও ঘাটতি খোলা বাজারে বিক্রয় প্রকল্পের অধীনে গম বিক্রির মাধ্যমে পূরণ করা হবে। সরকারী সূত্র জানিয়েছে যে সমস্ত কল্যাণমূলক প্রকল্পের অধীনে গম সরবরাহ করার পরে, সরকারের কাছে ২০২২-২৩ বছরে ১০০ LMT গমের অবশিষ্ট মজুত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।