রাজ্যের সরকারি কর্মীরা ডিএ নিয়ে (West Bengal DA) আন্দোলন চালাচ্ছেন। তাঁদের বকেয়া ডিএ (Desrness Allowance) মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। মামলাটি ৩ নভেম্বর ওঠার কথা। তবে সরকারি কর্মচারীদের দাবি, পুজোর আগেই বকেয়া মহার্ঘ ভাতা মেটাতে হবে রাজ্য সরকারকে। এই নিয়ে এবার তাঁরা কেন্দ্র সরকারের হস্তক্ষেপ চাইছেন। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করুক, এমনটাই চাইছেন সরকারি কর্মীদের একাংশ। তাঁদের কথায়, 'পুজোর আগে সবার কমবেশি খরচ থাকে। অথচ সরকারি কর্মীদের ডিএ বকেয়া রয়েছে। বাকি সব রাজ্যের সরকার AICPI মেনে ডিএ দিচ্ছে। তাই আমরাও চাইব রাজ্য সরকার ডিএ মিটিয়ে দিক। এবং কেন্দ্র সরকার এতে হস্তক্ষেপ করুক।'
গত বৃহস্পতিবার রাজ্যের বিধায়কদের ভাতাবৃদ্ধি করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। যার বিরোধিতা করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি জানান, 'একতরফা ভাবে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা অধিবেশনে ছিলাম না। আমরা ভাতা বৃদ্ধি চাই না। আমরা চাই, মন্ত্রী এবং বিধায়কদের বেতন না বাড়িয়ে সরকারি কর্মচারী, পুলিশ, শিক্ষক, অবসরপ্রাপ্ত পেনশনভোগীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা মিটিয়ে দিক রাজ্য।'
শুভেন্দু অধিকারীর এই ভূমিকার প্রশংসা করেছেন রাজ্য়ের সরকারি কর্মচারীদের একাধিক সংগঠন। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ভাস্কর ঘোষ বলেন, 'শুভেন্দু অধিকারীর এই ভূমিকা প্রশংসার দাবি রাখে। তাঁকে আমরা আবেদন করেছিলাম বিধানসভার বাইরে ও ভিতরে ডিএ-র দাবি জানাতে। তিনি আমাদের আবেদন রেখেছেন। এছাড়াও আন্দোলনের প্রথম দিন থেকেই তিনি সরকারি কর্মীদের সঙ্গে আছেন। সব রাজ্য ডিএ পাচ্ছে। পুজোর আগে কেন্দ্র সরকারও ডিএ দেবে। কিন্তু আমাদের রাজ্য সরকার হাত গুটিয়ে রেখেছে। তাই বিরোধী দলনেতার কাছে আমাদের আবেদন , তিনি যেন সরকারি কর্মীদের ডিএ পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের কাছে দরবার করেন। আমরা চাই, কেন্দ্রীয় সরকার অন্তত রাজ্যের সরকারি কর্মীদের দিকে মুখ তুলে তাকাক। পুজোর আগে ডিএ যেন মেলে তার একটা ব্যবস্থা করুক।'
এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলাকারী সংগঠন সরকারি কর্মচারি পরিষদের সভাপতি দেবাশিস শীল বলেন, 'শুভেন্দুবাবু বিধায়কদের বর্ধিত হারে ভাতা চাই না বলেছেন। এটা মহৎ সিদ্ধান্ত। তিনি সরকারি কর্মী-পেনশনার-শিক্ষকদের সঙ্গে আছেন। আন্দোলনে সাহায্য করেছেন। সুপ্রিম কোর্টে মামলা লড়ার ক্ষেত্রেও তিনি সরকারি কর্মচারী পরিষদের সঙ্গে আছেন।কারণ শুভেন্দু অধিকারীর জন্যই আমরা সুপ্রিম কোর্টে মামলায় জোরদার লড়তে পারছি। আমরা মনে করি, এতে শুধু আমরা উপকৃত হইনি। রাজ্য়ের সরকারি কর্মী, শিক্ষক, পেনশনার সবাই উপকৃত হয়েছেন। এই রাজ্য সরকার তার কর্মীদের কথা ভাবে না। কিন্তু বিরোধী দলনেতা যে ভূমিকা পালন করছেন তার জন্য সরকারি কর্মীরা তাঁর কাছে ঋণী।'
এই বিষয়ে আর এক মামলাকারী সংগঠন কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, 'শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, এতে সরকারি কর্মীরা সাহস পাবেন। এটা রাজনীতিরও অঙ্গ। তবে সরকারি কর্মীরা সত্যিই বঞ্চিত। আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সরকারি কর্মীদের হুমকি দেন, তিনি ভুল তথ্য পরিবেশন করেন এগুলো কাঙ্খিত নয়। আমরা আইনের পথে লড়ছি। আইনের পথেই চলব।'
প্রসঙ্গত, মন্ত্রী থেকে বিধায়ক সব স্তরেই ৪০ হাজার টাকা করে বেতন বৃদ্ধি করার ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। এখন বিধায়কদের বেতন প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হল ৫০ হাজার টাকা। রাজ্যের প্রতিমন্ত্রীরা এত দিন মাসে ১০ হাজার ৯০০ টাকা করে পেতেন। এখন থেকে তাঁরা পাবেন ৫০ হাজার ৯০০ টাকা। এ ছাড়া, রাজ্যে যে পূর্ণমন্ত্রীরা আছেন, তাঁদের বেতন ছিল ১১ হাজার টাকা। তাঁরা বেতন বাবদ এ বার থেকে ৫১ হাজার টাকা পাবেন। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা এবং প্রতিমন্ত্রী, পূর্ণমন্ত্রীরা এত দিন ভাতা ইত্যাদি মিলিয়ে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা পেতেন। এ বার থেকে তাঁরা পাবেন প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। শুভেন্দু অধিকারী এই ভাতা বৃদ্ধিরই বিরোধিকা করেছিলেন সেদিন।