হাতে মাইনে বেশি আসবে, নগদ টাকা বেশি হাতে থাকবে, এই কারণে বহু মানুষ নতুন আয়কর কাঠামো (New Tax Regime) বেছে নিচ্ছেন। তাছাড়া নতুন আয়কর কাঠামো অনেকটাই সহজও। কিন্তু এই সহজ ও নগদের হাতছানিতেই আপনি কিছু খরচ নিয়ে ভাবছেনই না। আয়কর বাঁচানোর চক্করে বছরে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা বাড়তিই খরচ হয়ে যাচ্ছে। নতুন আয়কর কাঠামোর একটি সিক্রেট দিক তুলে ধরলেন চার্টার অ্যাকাউন্ট্যান্ট নিতিন কৌশিক। সহজে বুঝে নিন, কীভাবে নতুন ট্যাক্স কাঠামোয় আপনি ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হারাচ্ছেন।
নতুন কর ব্যবস্থায় কী হারালেন আর কী থাকছে?
যেসব ছাড় আর পাওয়া যাবে না (সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ)
১. ধারা ৮০সি (Section 80C) – ১.৫ লাখ টাকা
এলআইসি, পিপিএফ, ইএলএসএস, বাড়ির লোনের আসল টাকা শোধ ইত্যাদিতে বিনিয়োগে ছাড়।
২. ধারা ৮০CCD(1B) – ৫০,০০০ টাকা
NPS-এ অতিরিক্ত অবদান রাখলে যে ছাড় মিলত।
৩. ধারা ৮০D – ২৫,০০০ থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত
স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়ামে (নিজের ও পরিবারের জন্য) কর ছাড়।
আরও পড়ুন: পুরনো নাকি নতুন ট্যাক্স কাঠামো, আয়কর রিটার্ন ফাইলের সময় কীভাবে বাছবেন?
৪. ধারা ৮০E – কোনও ঊর্ধ্বসীমা নেই
শিক্ষা ঋণের উপর সুদে ছাড়।
৫. ধারা ৮০EEB – ১.৫ লাখ টাকা
ইলেকট্রিক গাড়ির ঋণের সুদে ছাড়।
৬. ধারা ৮০G – অনুদান দিলে কর ছাড়
বিভিন্ন স্বীকৃত সংস্থায় অনুদান দিলে যে ছাড় মিলত।
৭. ধারা ৮০TTA / ৮০TTB – ১০,০০০ টাকা থেকে ৫০,০০০ টাকা।
সেভিংস অ্যাকাউন্টের সুদের উপর কর ছাড় (সাধারণ ও প্রবীণ নাগরিকদের জন্য)।
আরও পডুন: আয়করে বিরাট ছাড়! কাদের কত টাকা ট্যাক্স দিতে হবে? জানুন
৮. HRA (হাউস রেন্ট অ্যালাওয়্যান্স) – আর কর ছাড় নেই।
৯. LTA (লিভ ট্রাভেল অ্যালাওয়্যান্স), বাড়ি ঋণের সুদ, প্রফেশনাল ট্যাক্স – সবই বাদ।
যেসব সুবিধা এখনও পাওয়া যায় (New Tax Regime-এ)
৫০,০০০ টাকা স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন – বেতনভোগীদের জন্য।
এনপিএস-এ কোম্পানির দেওয়া অবদান – ধারা ৮০CCD(2)-এর অধীনে ছাড়।
গ্র্যাচুইটি – ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত।
ছুটির টাকা (Leave Encashment), পেনশন, অবসরকালীন ভাতা, নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে কর ছাড়। এই সব ছাড় না পাওয়ার ফলে একজন মধ্যবিত্ত করদাতার প্রতি বছর ২ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত কর দিতে হতে পারে, যদি তিনি আগের মতোই বিনিয়োগ ও খরচ চালিয়ে যান। এ ক্ষেত্রে প্র্যাক্টিক্যাল উদাহরণ স্বরূপ নয়া কর কাঠামোয় ৩০ শতাংশ স্ল্যাবে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের উদাহরণ টানলেন। ৩০% হারে কর বাঁচে প্রতি বছর ১.৯৮ লাখ টাকা।
আরও ছাড়ের সুযোগ থাকলে কর ছাড় আরও বেশি হতে পারে। ইলেকট্রিক গাড়ির ঋণ (৮০EEB) – ১.৫ লাখ টাকা। প্রবীণ নাগরিকদের স্বাস্থ্য বিমা – আরও বেশি ছাড়। ডোনেশনের পরিমাণ বেশি হলে – আরও ছাড়। এসব ক্ষেত্র ধরলে বার্ষিক কর সাশ্রয় ২.৪ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে।
সব মিলিয়ে কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যাঁরা বেশি বেতন পান, তাঁরা যদি বিনিয়োগ ও নানা বিমা প্ল্যান আগের মতোই রাখেন, তাহলে কিন্তু পুরনো আয়কর কাঠামোয় বেশি সুবিধা। তাই অঙ্ক কষে তবেই আয়কর কাঠামো বাছুন।