চৈত্র সেলে ভারতকে অপরিশোধিত তেল বিক্রি করছে রাশিয়া। প্রতি ব্যারেলে ৩৫ মার্কিন ডলার পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে পুতিনের দেশ। আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে রাশিয়া থেকে আমদানি দ্বিগুণ করা হয়েছে বলে খবর। ইউরোপ ও আমেরিকা রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোয় ফায়দা তুলছে চিন ও ভারত। বিশ্বজুড়ে ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তিত পটভূমিতে তেলের দামের ওঠানামার উপর ভারত সরকার নজর রাখছে বলে জানান পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস প্রতিমন্ত্রী রামেশ্বর তেলি।
শোনা যাচ্ছে, বিরাট ছাড়ে তেল বেচার পাশাপাশি টাকায় রাশিয়ার মেসেজিং সিস্টেম এপিএফএসের মাধ্যমে টাকায় লেনদেনেরও প্রস্তাব দিয়েছে মস্কো। তাতে আরও লাভবান হবে নয়াদিল্লি। তবে এনিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে খবর। রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্জেই লেভরভের দু'দিনের ভারত সফরে এব্যাপারে আলোচনা হওয়ার কথা। কোনওরকম চাপের মুখে ভারত যে মাথা নোয়াবে না তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি জানান,'দাম বাড়লে এটা তো স্বাভাবিক নিজের দেশের মানুষের জন্য সস্তায় তেল খুঁজবে বিভিন্ন দেশ। তবে ৩-৪ মাস অপেক্ষা করুন। রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের ক্রেতা কারা সেটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। ভারত হয়তো প্রথম দশেও থাকবে না।'
পেট্রোল, ডিজেলের দাম
আন্তর্জাতিক তেলের দাম ১৩৯ মার্কিন ডলার। যা ১৪ বছরে সর্বোচ্চ। ২২ মার্চ থেকে ৯বার পেট্রোল ও ডিজেলের দাম বাড়িয়েছে তেল বিপণন সংস্থাগুলি। শুক্রবার পর্যন্ত প্রতি লিটারে ৬.৪ টাকা বেড়েছে দর।
রাশিয়ার তেল
-ভারত তার তেলের চাহিদার মেটাতে ৮৫ শতাংশ বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। সিংহভাগ অপরিশোধিত তেলের উৎস- ইরাক, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, নাইজেরিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
-বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক এবং ভোক্তা ভারতের তেল সংস্থাগুলি ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে স্পট টেন্ডারের মাধ্যমে রাশিয়ান তেল কিনছে। বড়সড় ছাড়ও মিলছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে কমপক্ষে ১৩ মিলিয়ন ব্যারেল রাশিয়ান তেল কিনেছে। যা ২০২১ সালে ছিল ১৬ মিলিয়ন ব্যারেল।
- রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন সংকট শুরু হওয়ার আগে রাশিয়া প্রতি ব্যারেলে ৩৫ ডলার ছাড় দিচ্ছে।
- রুশ তেল কোম্পানি রোসনেফ্টের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের। ২০২২ সালে ইউরালের বিনিময়ে ১৫ মিলিয়ন ব্যারেলের যে দাম পড়েছিল সেই দরেই ২ মিলিয়ন টন পাওয়া যাবে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
পেট্রোলিয়ম ও প্রাকৃতিক গ্যাস প্রতিমন্ত্রী রামেশ্বর তেলি জানান,'বছরে রাশিয়া থেকে মোট অপরিশোধিত তেলের ১ শতাংশেরও কম আমদানি করা হচ্ছে। দেশীয় চাহিদা এবং প্রযুক্তি-বাণিজ্যের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন দেশ থেকে তেল কেনে ভারতীয় সংস্থাগুলি।'
ভারতের তেলের রিজার্ভ
২০২১ সালের নভেম্বরে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য SPR থেকে ৫ মিলিয়ন ব্য়ারেল ছাড়তে সম্মত হয় ভারত। তেলি জানান, ৫.৩৩ মিলিয়ন টন SPR-এ ধরে রাখে ভারত। যা প্রায় ৯.৫ দিনের অপরিশোধিত তেলের চাহিদার সমতুল। এছাড়া তেল বিপণন সংস্থাগুলির (ওএমসি) কাছে বর্তমানে ৬৪.৫ দিনের মজুত রয়েছে। অতএব, অশোধিত তেল চলতে পারে আরও ৭৪ দিন।
আন্তর্জাতিক দাম
শুক্রবার ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারে প্রতি ব্যারেল ১০৪.৬৩ ডলারে নেমে এসেছে অপরিশোধিত তেল। ইউএস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুড ফিউচারে প্রতি ব্যারেলের দাম ৯৯.৮৯ ডলার।
আরও পড়ুন- এপ্রিলে ৩০ দিনের মধ্যে ১৫ দিনই বন্ধ ব্যাঙ্ক, কবে কবে?