সেই ২০১৭ সালে পণ্য ও পরিষেবা কর চালু হওয়ার পর থেকে রাজ্যগুলিকে জিএসটি ক্ষতিপূরণ দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। তা ৫ বছর দেওয়ার কথা। যা চলতি বছর জুন মাসে বন্ধ হতে চলেছে। ওই অর্থ বন্ধ হলে সংকটে পড়তে পারে রাজ্যগুলি। তা আরও ৫ বছর বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে আশঙ্কাপ্রকাশ করলেন, আগামী দিনে বিভিন্ন রাজ্য হয়তো সরকারি কর্মচারীদের বেতন দিতে পারবে না। যা নিয়ে বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন,'এ রাজ্যেই সবার আগে মাইনে দেওয়া বন্ধ হবে।'
বৃহস্পতিবার মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলায় বৈঠক সেরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,'শ্রীলঙ্কায় আগুন জ্বলছে। এখানেও যা পরিস্থিতি, আগামী দিনে সব রাজ্য সরকার বেতন দিতে পারবে কি না সন্দেহ!' এর পর মোদী সরকারকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, কেন্দ্র প্রাপ্য জিএসটি-র ভাগ দিচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গের বকেয়া ৯০ হাজার কোটি টাকা। তাঁর কথায়,'কেন্দ্রীয় সরকার জিএসটি-র পুরোটাই তুলে নিয়ে যাচ্ছে। করের একটা অংশ রাজ্য সরকার পায়। কিন্তু সব কিছুতেই সেস চাপিয়ে দিচ্ছে কেন্দ্র। সেসের অর্থ পুরো টাকাটাই কেন্দ্রীয় সরকার পাবে।'
চলতি বছর জুনে শেষ হচ্ছে জিএসটি ক্ষতিপূরণের কেন্দ্রীয় নীতি। কোভিডের ধাক্কায় কম-বেশি সব রাজ্যের মাথায় বিপুল দেনা। কমে গিয়েছে আয়। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মমতার আবেদন, আরও ৫ বছর বাড়ানো হোক জিএসটি ক্ষতিপূরণের সময়। তিনি বলেন,'জিএসটি ক্ষতিপূরণের ৫ বছর সময়সীমা ছিল। কোভিড পরিস্থিতির জন্য সেটা আরও ৫ বছর বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করব। আর কেন্দ্রের কাছে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।' ক্ষতিপূরণের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য অন্য রাজ্যগুলির সমর্থনও চেয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য আজতক বাংলাকে বলেন,'২০১১ সালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার সময় রাজ্যের ১ লক্ষ ৯২ হাজার কোটি টাকা ঋণ ছিল। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ঋণ ৬ লক্ষ কোটি টাকা পেরিয়ে যাবে। মূলধনী খরচ কার্যত অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। নিজেদের পরিকল্পনায় অর্থবরাদ্দ করতে পারছে না রাজ্য সরকার। এই সরকার জনমোহিনী রাজনীতি করে পশ্চিমবঙ্গকে ঋণের ফাঁদে ফেলে দিয়েছে। রাজ্যের কোষাগারের আয় নির্ভর করছে লটারি আর মদের উপর। এখানে কোনও নতুন বিনিয়োগ নেই। বিনিয়োগের মতো পরিস্থিতি নেই। কেউ লগ্নি করতে আসতে চাইছে না। মমতার অবাস্তব জনমোহিনী নীতির কারণে সবচেয়ে সবার আগে এ রাজ্যের সরকারি কর্মীরা বেতন পাবেন না।'
মুখ্যমন্ত্রীর এহেন বক্তব্যের পর আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপি নেতা তরুণজ্যোতি তিওয়ারি। দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন,'একে রাজ্যে কোন শিল্প নেই, প্রায় ৫ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা ঋণ। বিভিন্ন রকম দান-খয়রাত, খেলা, মেলা ইত্যাদি করে রাজ্যের ভাড়ার মোটামুটি শূন্য।তার পর আবার জিএসটি ক্ষতিপূরণ বন্ধ হয়ে যাবে চলতি বছরেই। তৃণমূল নেতারা এখনও কি খেলা হবে খেলা হবে বলে নাচ-গান করবেন ? মুখ্যমন্ত্রী আশঙ্কা করেছেন, কর্মচারীদের বেতন দিতে পারবেন না। আশঙ্কা নয়, এই দিকেই যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। লক্ষীর ভান্ডার এর জন্য বছরে প্রায় ১৩ হাজার কোটি খরচ হয়, দুর্গাপুজোয় ক্লাবগুলোকে দান প্রায় ৮০০ কোটি, ৫ লক্ষ টাকা করে ক্লাবগুলোকে দেওয়া হয়েছে, সেখানে প্রায় ৩ হাজার কোটি। এবার হয়তো একমাত্র ভগবান রক্ষা করতে পারবেন আমাদের রাজ্যকে।'
আরও পড়ুন- ভাদু শেখ খুনেরও তদন্তভার CBI-কে, নির্দেশ হাইকোর্টের