৬৬০ কোটি বছর আগে একটা অ্যাস্টরয়েড বা উল্কাপিণ্ড পৃথিবীতে এসে আছড়ে পড়ে। তার ধাক্কায় যে বিস্ফোরণ হয় তা হিরোশিমাতে পড়া পরমাণু বোমার ৬ হাজার ৫০০ গুণ বেশি শক্তিশালী ছিল। তাহলেই বুঝতে পারছেন তার ভয়াবহতা কত বেশি। এর কারণে পৃথিবীর মাটি থেকে ডাইনোসরের সম্পূর্ণ প্রজাতি প্রায় শেষ হয়ে যায়। কিন্তু সবচেয়ে বড় বদল হয় মেনুতে। একটা এমন জিনিস শামিল হয়ে যায়, যার বিষয়ে মানুষ আগে কখনও ভাবতে পারেনি।
উল্কাপিণ্ড সঙ্গে পৃথিবীর ধাক্কা লাগার পর কয়েক লক্ষ টন ধুলো-মাটি এবং সালফার পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে জমা হয়ে যায়। ২ বছর পর্যন্ত সূর্যের রশ্মি পৃথিবীতে পড়েনি। পৃথিবীতে ফটোসিন্থেসিস প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। গাছপালার শক্তি পাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। বহু গাছপালা মরে যায়। যে সমস্ত ডাইনোসর ওই সংঘর্ষের পর বেঁচেছিল সেগুলিও খাবার এবং সূর্য রশ্মির অভাবে মরে যায়। কিন্তু একটা জিনিস ছিল যা ওই পরিস্থিতিতেও বেড়ে চলেছিল। গোটা পৃথিবীতে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে। আজ গোটা পৃথিবীর মানুষ সেটি খাওয়ার মেনুতে যুক্ত করে নিয়েছে।
সেটি হল ফাংগি বা মাশরুম। যেটাকে আমরা মাশরুম মটর, কড়াই মাশরুম, মাশরুম দো-পেঁয়াজার মতো নানারকম রোচক খাবার তৈরি করি। ওই মাশরুমে জন্মই হয়েছিল ডাইনোসরের ধ্বংসপ্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে। যা বিপরীত পরিস্থিতিতেও সারভাইভ করতে পারে। যদি কখনও ফের পৃথিবীতে এমন কোনও দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে বেঁচে থাকা মানুষদের জন্য এই মাশরুমই জীবনদায়ী প্রমাণিত হতে পারে। কারণ উল্কাপিন্ডের ধাক্কা আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ বা পরমাণু যুদ্ধের পর হয়েছিল সেই রকম পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
যদি সূর্যের কিরণ কয়েক মাস আটকে যায়, তাহলে পৃথিবী থেকে খাবার জিনিস দ্রুত গতিতে কমতে থাকবে। না ফসল, না খাবার, কিছুই বাঁচবে না ।ফলে এরপরে আপনি খাবেন কী? এর উত্তর হল মাশরুম। সূর্যের কিরণ ছাড়াও এই মাশরুম ফলিয়ে আপনি কয়েক মাস বা বছর কাটিয়ে দিতে পারবেন। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে. গতবার এই রকম ভয়াবহ পরিস্থিতি ৭৪ হাজার বছর পর্যন্ত ছিল। এমনই আগ্নোয়গিরির বিস্ফোরণ হয়েছিল, তাতে থাকা সালফার ডাই অক্সাইড বেরিয়ে সমস্ত বায়ুমন্ডলে ছড়িয়ে পড়ে। সূর্যের কিরণ ৯০ শতাংশ কমে যায়। এরপরে যে ঠান্ডা মরশুম তৈরি হয়। সেই সময়ে মজুত থাকা মানুষদের প্রজাতির সংখ্যা কমে ৩০০০ হয়ে যায়।
যদি বিশ্বযুদ্ধ হয় এবং হাজারে হাজারে পরমাণু বোমা বিস্ফোরণ হয়, তাহলে সূর্যের কিরণ ৯০ শতাংশ ঢাকা পড়ে যাবে। একে নিউক্লিয়ার উইন্টার অর্থাৎ পরমাণু শীত বলে অভিহিত করা হয়েছে। গোটা পৃথিবীর তাপমাত্রার গড় ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পড়ে যাবে ওদিকে বরফ জমে যাবে। সেই জায়গাও নষ্ট হয়ে যাবে যেখানে যুদ্ধের প্রভাব পড়েনি।
সূর্যের কিরণের অভাবে ফসল নষ্ট করে দেবে। বলার কথা হলো যে শুধুমাত্র এটাই নয় সূর্য কিরণ এর প্রভাবে আমাদের ফুড চেন শেষ হয়ে যাবে। খাওয়া ছাড়া ডাইনোসরের মত মানুষও মরতে শুরু করবে। তখন পৃথিবীতে কার রাজত্ব থাকবে, সেটা নিয়ে চুলচেরা গবেষণা চলছে। ওই সময় গোটা পৃথিবীতে হতে পারে মাশরুমের রাজত্ব। সূর্যের কিরণ থাক, বা না থাক, তাদের ফটোসিন্থেসিসের প্রয়োজন পড়ে না।
একটা ৩ ফুট লম্বা এবং ৪ ইঞ্চি চওড়া কাঠের টুকরো ৪ বছরে এক কেজি মাশরুম তৈরি করতে পারে। মাত্রা বেশি নয়, কিন্তু যখন বড় সংখ্যায় গাছপালা শেষ হতে শুরু করবে, তখন সেটা খেয়ে বেশি মাশরুম তৈরি হবে। গাছের পচা পাতা থেকে চা বানানো যেতে পারে। সেগুলি গরু বা ইঁদুর খেতে পারে। এতে ভারি মাত্রায় ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
ইঁদুর, মাশরুমের মতোই তারা সেলুলোজকে পচিয়ে দিতে পারে। অর্থাৎ পড়ে থাকা কাঠের টুকরো খেতে পারে। এ কারণে মাশরুমের রাজত্ব বজায় থাকবে এবং তারা খাবার পর যা বেঁচে থাকবে সেগুলি ইঁদুর খেতে পারবে। যদি এমন কোন দুর্যোগ ঘনিয়ে আসে এবং তারপরেও মানুষ বেঁচে থাকে, তাহলে তার মাংস খেয়ে জীবন কাটাতে পারে, পোকামাকড় থেকে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করতে পারে, বিটলস কাঠ খেতে পারে, আর মানুষ বিটলস খেতে পারে।