আজ, শুক্রবারই প্রকাশিত হয়েছে মাধ্যমিকের ফলাফল। অনেকেরই এসেছে ভালো ফল, নজরকাড়া। আর তাই এবারের লক্ষ্য পরের ধাপ উচ্চ মাধ্যমিক। ভালো ফল হয়ে ছেলেমেয়ে ও তাদের পরিবারের যে আনন্দ হয়েছে, তাতে আবার দেখাও দিয়েছে দুশ্চিন্তা। এখন তো ছেলেকে বা মেয়েকে তাদের পছন্দের শাখা বেছে নিতে হবে। কারণ এই পছন্দের শাখা তাকে ভবিষ্যতে সেরা কেরিয়ার অপশন খুঁজে নিতে সাহায্য করবে। আর তাই অনেক বাবা মায়েরা যদিও ভাবছেন তাদের ছেলে মেয়েরা মাধ্যমিকে ভালোভাবে সফল হয়েছেন বলে উচ্চ মাধ্যমিকেও সফল হবে তা কিন্তু তাদের ভুল ধারনা। সফলতা পেতে গেলে নির্বাচন করতে হবে ভালো বিষয়।
পছন্দের বিষয় যদি হয় অঙ্ক
উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান বিষয়ে ভালো রেজাল্ট করতে হলে আপনাকে অবশ্যই গণিতে ভালো ফল করতে হবে। আর তাই উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ভালো করে দক্ষতা অর্জন করার জন্য চাই ভালো অনুশীলন এবং বিষয়ের উপর দক্ষতা। অর্থাৎ পাঠ্য বিষয়ের অন্তর্গত পাঠ বুঝতে হবে ভালো করে। আর তাই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাশাপাশি গৃহশিক্ষক বা কোচিং ক্লাসের ব্যবস্থা থাকলে সুবিধা হয়। গণিত বিষয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করলে পরবর্তীতে কলেজে গণিতে অনার্স বা সাম্মানিক করা যায় যা এখনও সবচেয়ে কদর আছে।এছাড়াও ইঞ্জিনিয়ারিং এর যেকোন শাখায় অবশ্যই থাকবে গণিত। তাই গণিতের ভবিষ্যৎ ক্ষেত্র অনেক বড়। পরিসংখ্যান নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য আপনি ইন্ডিয়ান স্টাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হতে পারেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা, ব্যাংক, করপোরেট অফিসগুলোতেও গণিতবিদ লাগেই। এছাড়াও আপনার কাছে থাকছে গবেষনা করার সুযোগ।
পছন্দের বিষয় যদি হয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান
রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়লে ভবিষ্যতে আইন নিয়েও পড়াশোনায় সফল হতে পারেন। পৃথিবী জুড়ে প্রসিদ্ধ আইনজ্ঞরা ,বেশিরভাগই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র । আর তাই উচ্চ মাধ্যমিকের পর সরাসরি আইন নিয়ে পড়ার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ থাকলে সুবিধা অনেক।
এ ছাড়াও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পড়ুয়ারা মানবাধিকার কর্মী হিসাবে বিভিন্ন এনজিওতে যোগদান করতে পারেন । তাছাড়া রাজ্য বা সর্বভারতীয় যেমন পি এস সি বা ইউ পি এস সি প্রভৃতি প্রশাসনিক পরীক্ষা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পড়ুয়ারা সবসময় ভালো ফল করেন।
বিষয় যদি হয় ইংরেজি
উচ্চমাধ্যমিকে সবার আবশ্যিক বিষয় হল ইংরেজি। অনেকেই স্নাতকস্তরে ভালোবেসে এই বিষয়টিকে বেছে নেন। একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ইংরেজি বলতে যে ধরনের পড়াশোনা ছেলেমেয়েরা করে আসে, স্নাতক বা স্নাতকোত্তর স্তরের ইংরেজি তার থেকে অনেকটাই আলাদা। তাই যদি তোমার ভাল লাগে তবেই স্নাতক স্তরে পড়া উচিত। ইংরেজি কমিউনিকেশন ল্যাংগুয়েজ হওয়ায় কর্পোরেট কমিউনিকেশন, বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থায় ইংরেজির প্রয়োগ শিক্ষণ, বাণিজ্যিক সংস্থায় কনটেন্ট রাইটিং বা ইংরেজি জানা লোকদের জন্য সিনেমার পরিচালনা, সম্পাদনা, সিনেমাটোগ্রাফি, স্ক্রিপ্ট লিখন, অভিনয়, ফিল্ম রিভিউ, গ্রাফিক ডিজাইন, ফ্যাশন শিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রেকাজের সুযোগ অনেক আছে। এ ছাড়া বিজ্ঞাপন জগৎ, বিপিও, এনজিও সংস্থা ইত্যাদিতেও সুযোগ রয়েছে। লাইব্রেরি সায়েন্স এবং অ্যাপ্লায়েড আর্টসের সাথে সাথে রাজ্য বা জাতীয় স্তরে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় সফল হওয়ার সুযোগ বেশি থাকে। তাছাড়া ইংরেজি সাহিত্যে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা তো আছেই। গবেষণার নানান বিষয় যেমন ইংরেজি সাহিত্য থেকে শুরু করে অন্যান্য ভাষার সাহিত্য, ভাষাতত্ত্ব, নিউরো লিঙ্গুয়িস্টিক্স, আর্ট এবং আর্কিটেকচার, জেন্ডার, শিশুসাহিত্য, কল্পসাহিত্য, থিয়োলজি, দলিত সাহিত্য, কালচার স্টাডি ইত্যাদি।
আইন
আমাদের রাজ্যে তথা গোটা দেশেই দুই ভাবে আইন পড়া যায়। এক পাঁচ বছরের জন্য যা উচ্চ মাধ্যমিকের পর করা যায় ।আর আরেকটি হল তিন বছরের পাঠ্যক্রম যা গ্র্যাজুয়েশনের পর করা যায়। রাজ্যে অনেক বিশ্ব বিদ্যালয় যেমন বর্ধমান,বিদ্যাসাগর,ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় কলকাতা এবং কল্যাণী অধীনস্থ অনেক কলেজে স্নাতক স্তরে আইন পড়ানো হয়। দু’বছরের এল এল এম কোর্স করা যায় কলকাতা, বর্ধমান, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব জুরিডিকাল সায়েন্সে এবং হলদিয়া ল কলেজে। আইন পড়ার সময় কিছু কিছু শাখায় যেমন ক্রিমিনাল ল এবং বিজনেস ল-এর যে কোনও একটিতে স্পেশালাইজেশন করা যায় রাজ্যের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এল এল বি এবং এল এল এম পড়ার জন্য অ্যাডমিশন টেস্ট হয়। আইন নিয়ে উচ্চশিক্ষা করার ক্ষেত্রে হায়দরাবাদের নালসার, যোধপুর ল স্কুল, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান। এল এল এম করে পিএইচ ডি করা যায় আইন বিশ্ববিদ্যালয়েই।
পুষ্টি বিজ্ঞান
পুষ্টি বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করলে বর্তমানে কাজের সুযোগ অনেক। পুষ্টিবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক করলে যেমন পুষ্টিবিদ বা ডায়েটিশিয়ান হওয়া যায় ,তেমনি হাসপাতালে পুষ্টিবিদ বা রোগীদের খাবার কেমন হবে তা নিয়েও চাকরি পাওয়া যায়। বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক, স্কুল-কলেজে নিউট্রিশনিস্টের পোস্ট রয়েছে। এছাড়াও বড় বড় ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি, ন্যাশনাল-মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রি, পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্ট, ফিটনেস সেন্টার, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন এনজিও, বড় বড় রেস্তোরাঁ, ক্যাটারিং সংস্থা প্রভৃতি ক্ষেত্রে কাজের জায়গা রয়েছে। সঙ্গে হতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার, মেডিকেল রিসার্চার, এক্সারসাইজ ফিজিওলজিস্ট, ফুড সায়েন্স রিসার্চার, হোম ইকোনমিস্ট ইত্যাদি। ডায়েটেশিয়ান এবং নিউট্রিশনিস্টদের চাহিদা বর্তমান যুগে বেশ উঁচু।
আরও পড়ুন-প্রথম দশে নেই কলকাতা, মাধ্যমিকে কোন জেলাগুলির জয়জয়কার?