বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্র : মুর্শিদাবাদ জেলার ৩ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে একটি বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্র। অধীর গড় বলে পরিচিত এই লোকসভা কেন্দ্রে প্রথম ভোট হয় ১৯৫১ সালে। সেই থেকে এই কেন্দ্র ছিল বামদল আরএসপির দখলে। ত্রিদীব চৌধুরী ও বহরমপুর যেন সমার্থক হয়ে উঠেছিল একসময়। তবে ১৯৮৪ সালে কংগ্রেস প্রার্থী অতীশ চন্দ্র সিংহের কাছে হেরে যান তিনি। তারপরও আরএসপি-র একাধিক প্রার্থী সেই কেন্দ্র থেকে জিততে শুরু করেন। তবে ১৯৯৯ সালে খেলা ঘুরে যায়। সাংসদ হন জাতীয় কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরী। সেই থেকে অধীরই জিতে আসছেন ওই কেন্দ্র থেকে। এবছরও অধীর জিতলে টানা ষষ্ঠবার জিতবেন তিনি।
২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় পালাবদলের পর অধীর গড় বহরমপুরকে পাখির চোখ করে তৃণমূল কংগ্রেস। তারকা প্রার্থী তথা রাজ্যের বর্তমান মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনকে ওই কেন্দ্রে প্রার্থী করে রাজ্যের শাসকদল। তবে রেকর্ড ভোটে পরাজিত হন ইন্দ্রনীল। ২০১৯ সালে ওই কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয় অধীরের একসময়ের সঙ্গী অপূর্ব সরকারকে। তিনিও বাজিমাত করতে পারেননি। তবে ২০২৪ সালে তৃণমূল অধীরকে হারাতে ফের ভরসা রেখেছে সেলেব্রিটি প্রার্থী ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানের উপর। যদিও বিজেপি এই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে স্থানীয় ডাক্তার নির্মল সাহাকে। ২০১৯ বিধানসভা ভোটে সব সমীকরণ পাল্টে বহরমপুর বিধানসভা কেন্দ্রে জেতেন বিজেপি প্রার্থী। আবার বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ৭ বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট শতাংশের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে গেরুয়া শিবির। ৬ টি আসন দখল করে নেয় তৃণমূল কংগ্রেস। তারা প্রথম স্থানে ছিল। কংগ্রেস অপ্রত্যাশিতভাবে তৃতীয় স্থানে থেকে নির্বাচন শেষ করে। ফলে রাজনৈতিক মহলের একাংশের আশা, লোকসভা ভোটে বহরমপুরে এবারের লড়াই ত্রিমুখী।
বহরমরপুর লোকসভা কেন্দ্রে এপর্যন্ত ভোটের ফল :
১৯৫১- ত্রিদিব চৌধুরী
১৯৫৭- ত্রিদিব চৌধুরী
১৯৬২- ত্রিদিব চৌধুরী
১৯৬৭- ত্রিদিব চৌধুরী
১৯৭১- ত্রিদিব চৌধুরী
১৯৭৭- ত্রিদিব চৌধুরী
১৯৮০- ত্রিদিব চৌধুরী
১৯৮৪- অতীশ চন্দ্র সিনহা
১৯৮৯- ননী ভট্টাচার্য
১৯৯১- ননী ভট্টাচার্য
১৯৯৬- প্রমথেশ মুখার্জি
১৯৯৮- প্রমথেশ মুখার্জি
১৯৯৯- অধীর রঞ্জন চৌধুরী
২০০৪- অধীর রঞ্জন চৌধুরী
২০০৯- অধীর রঞ্জন চৌধুরী
২০১৪- অধীর রঞ্জন চৌধুরী
২০১৯- অধীর রঞ্জন চৌধুরী
বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের রাজনৈতিক সমীকরণ :
১৯৯৯ সালে বহরমপুর কেন্দ্র থেকে ৪৬ শতাংশেরও বেশি ভোট পায়। ২০০৪ সালে ভোট শতাংশ আরও বাড়ে অধীরের। ২০০৯ সালে অধীর ভোট পান প্রায় ৫৬ শতাংশের মতো। সেখানে বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ২ শতাংশ ভোট। তবে তৃণমূলের উত্থানের পর থেকে অধীরের ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসে। ২০১৪ সালে ৫০ শতাংশ ভোট মেলে অধীরের। পরেরবার অর্থাৎ ২০১৯ সালে কংগ্রেস-তৃণমূল দ্বিমুখী লড়াই হয়। ২০১৯ সালে প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট কুড়িয়ে নেয় তৃণমূল। সেবার শাসকদলের অপূর্ব সরকার অধীরের বিরুদ্ধে পান ৫ লক্ষ ১০ হাজার ৪১০ ভোট। তৃণমূল কংগ্রেসকে জোর টক্কর দিয়েছিল। কংগ্রেসের থেকে ব্যবধান কমে দাঁড়িয়েছিল মাত্র ৬ শতাংশের মতো। অধীর চৌধুরী পেয়েছিলেন ৫ লক্ষ ৯১ হাজার ১০৬টি ভোট।
এবছর বহরমপুরে অধীরের প্রতিপক্ষ ইউসুফ পাঠানের পাশাপাশি স্থানীয় বিজেপি প্রার্থী নির্মল কুমার সাহা। ২০১৯ সালে এই কেন্দ্র থেকে বিজেপি পায় প্রায় ১১ শতাংশ ভোট। তবে গত বিধানসভা ভোটে বহরমপুর লোকসভার যে ৭ কেন্দ্র রয়েছে ভোট শতাংশের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে গেরুয়া শিবির। কান্দি, বহরমপুর, বড়ঞার মতো সংখ্যাগুরু অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে বিজেপি ভালো ভোট টানবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
যদিও অধীর চৌধুরী নিজের কেন্দ্র ধরে রাখার বিষয়ে আশাবাদী। তিনি সাফ জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কেন্দ্রে দাঁড়ালেও জিততে পারবেন না। অন্যদিকে ইউসুফ পাঠান জোর কদমে প্রচার শুরু করেছেন। তিন প্রার্থীর মধ্যে তাঁর প্রচারই সবথেকে বেশি। অন্যদিকে বিজেপির নির্মল সাহাও জেতার বিষয়ে আশাবাদী। গত বিধানসভা ভোটে যে ফল বিজেপি করেছে তাকেই ঢাল করে ভোটযুদ্ধে এগোচ্ছেন নির্মল।