পলাশির ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল কৃষ্ণনগর রাজপরিবার নাকি সিরাজ আসলে ছিলেন অত্যাচারী শাসক? যা জানা জরুরি

Krishnanagar Lok Sabha Election 2024: স্বাভাবিক ভাবেই রাজমাতা প্রার্থীকে আক্রমণে ইতিহাসের দলিলকেই হাতিয়ার করতে নেমে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর এখানেই বেঁধেছে গোল। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, কৃষ্ণনগর রাজপরিবার ব্রিটিশদের সাহায্য করেছিল। সত্যিই কি কৃষ্ণনগর রাজপরিবার ব্রিটিশদের পৃষ্ঠপোষক ছিল?

Advertisement
পলাশির ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল কৃষ্ণনগর রাজপরিবার নাকি সিরাজ আসলে ছিলেন অত্যাচারী শাসক? যা জানা জরুরিছবিটি প্রতীকী
হাইলাইটস
  • সিরাজ অত্যাচারী শাসক ছিলেন? 
  • কৃষ্ণনগরের রাজপরিবার ব্রিটিশদের সাহায্য করেছিল: কুণাল
  • সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে যদি বিদ্রোহটা না করা হত, আপনি কি হিন্দু থাকতেন?: অমৃতা রায়

দীনবন্ধু মিত্রের ‘সুরধুনী’ কাব্যের বর্ণনায় ‘...নগর এক নদী-কিনারায় /কৃষ্ণচন্দ্র নরপতি বিখ্যাত ভুবনে /সেই নগরেতে তাঁর শুভ রাজধানী /অদ্যাপী বিরাজে যথা সুখে বীণাপাণি।’

লোকসভা ভোটের (Lok Sabha Elections 2024) আগে চর্চার কেন্দ্রে সেই কৃষ্ণনগর (Krishnanagar)। বলা ভাল, কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি। বঙ্গ রাজনীতিতে উঠে আসছে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নাম। কেন? কারণ, কৃষ্ণনগরে BJP প্রার্থী অমৃতা রায়। তিনি কৃষ্ণনগর রাজপরিবারের রানিমা। তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে রাজমাতাকেই বাজি ধরেছে গেরুয়া শিবির। স্বাভাবিক ভাবেই রাজমাতা প্রার্থীকে আক্রমণে ইতিহাসের দলিলকেই হাতিয়ার করতে নেমে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর এখানেই বেঁধেছে গোল। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, কৃষ্ণনগর রাজপরিবার ব্রিটিশদের সাহায্য করেছিল। সত্যিই কি কৃষ্ণনগর রাজপরিবার ব্রিটিশদের পৃষ্ঠপোষক ছিল?

কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি
কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি

সিরাজ অত্যাচারী শাসক ছিলেন? 

ইতিহাসের দলিল টেনে এই রাজনৈতিক তর্জায় কী বলছেন ইতিহাসবিদ? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক উত্‍সা রায়ের কথায়, 'কিছু সমকালীন সূত্রে সিরাজকে অত্যাচারী শাসক বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি শুধু হিন্দুদের উপরেই অত্যাচার করতেন, এটা কখনও বলা হয়নি। সে ক্ষেত্রে আমরা যদি মেনেও নিই, সিরাজ অত্যাচারী শাসক ছিলেন, তা হলে বলতে হবে, তিনি হিন্দু, মুসলমনা নির্বিশেষে সমস্ত রাজন্যবর্গের উপরেই অত্যাচার করতেন। এছাড়া কোনও সমকালীন সূত্রে এরকম কোনও ইঙ্গিত নেই যে, সেই জন্য রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ব্রিটিশদের বন্ধু হয়েছিলেন। এই সব অনেক পরে লেখা। কৃষ্ণচন্দ্রের জীবনী, নবীন সেনের কাব্যে এই সব কথা আছে। সত্যি মিথ্যে বিচার করা যায় না।'

নবাব সিরাজ উদ দৌলা
নবাব সিরাজ উদ দৌলা

কৃষ্ণনগরের রাজপরিবার ব্রিটিশদের সাহায্য করেছিল: কুণাল

সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায়কে আক্রমণ করতে গিয়ে বলেন, 'ইতিহাস বলে সিরাজ-উদ-দৌলা যখন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলেন, তখন কৃষ্ণনগরের রাজপরিবার ব্রিটিশদের সাহায্য করেছিল৷ রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ব্রিটিশ বাহিনীকে তাঁর সেনাবাহিনী দিয়ে সাহায্য করেন। এটা খুবই স্বাভাবিক যে সাভারকারের দল, যারা গান্ধীকে হত্যা করেছিল তারা ব্রিটিশদের সমর্থনকারী পরিবার থেকে কাউকে মনোনীত করবে। আর মহুয়া মৈত্র দেশের জন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছেন।'

Advertisement

পলাশির যুদ্ধ
পলাশির যুদ্ধ

সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে যদি বিদ্রোহটা না করা হত, আপনি কি হিন্দু থাকতেন?: অমৃতা রায়

তৃণমূলের এই আক্রমণের প্রেক্ষিতে bangla.aajtak.in-কে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির রাজমাতা অমৃতা রায় পাল্টা বলেন, 'মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সময় ঘোর বর্গিদের আক্রমণ, মুসলমানদের আক্রমণ চলেছিল। আমার স্বামী মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নবম পুরুষ। সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে যদি বিদ্রোহটা না করা হত, আপনি কি হিন্দু থাকতেন? এই সনাতন ধর্ম কি থাকতো? আমার লড়াইটা এখানেই। আমার মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে লড়াই নয়। আমার লড়াই কিছু রীতিনীতির বিরুদ্ধে। ইতিহাস না জেনে যদি লোকে কথা বলে, তা হলে আর কী বলব। শুধু তো মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র নন, বর্ধমানের রাজা, মহারাজা নন্দকুমার, পুরীর রাজা, সবাই মিলেই বিদ্রোহে সামিল হয়েছিলেন। এঁরাও নিশ্চয়ই অত্যাচারের শিকার হয়েছিলেন সিরাজ উদ দৌলার। আর সিরাজ তো তুর্ক দেশ থেকে এসেছিল। বহিরাগত ছিল। দুরাচারী ছিল। অত্যাচার করত। কৃষ্ণচন্দ্র গদ্দারি করেছিলেন, হঠাত্‍ বলে দিলেই তো হবে না। ইতিহাসটা জানতে হবে।'

কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি-- ছবি: সৌমিতা চৌধুরী
কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি-- ছবি: সৌমিতা চৌধুরী

মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র পলাশির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন?

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উত্‍সা রায় জানাচ্ছেন,  ইতিহাসবিদদের একাংশ দাবি করেন, কিছু দেশীয় রাজা, জমিদার পলাশির ষড়যন্ত্রের অনুঘটক ছিলেন। কিন্তু মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র সরাসরি এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন, এই দাবি আমরা সমকালীন সূত্রে পাই না। তবে ওঁর পরবর্তী জীবনীকার ও পলাশির যুদ্ধ কাব্যের কবি নবীনচন্দ্র সেন এই দাবি করেছেন। ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর নদিয়া রাজবংশের ক্ষমতা খর্ব হয়। আর পাঁচটা গড়পড়তা জমিদারের মতোই দিন গুজরান করেন। বাংলার সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় জীবনে নদিয়া রাজবংশের অবদান অনস্বীকার্য। 

POST A COMMENT
Advertisement